দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
ভোরলিপি
১.
পাখির ডাকের ছবিকে বন্দী করছি
নিথর জলের কাছাকাছি
মাটি মাখা পথ ঝলসে উঠেছে
হলুদ রাধাচূড়ায়
গাছের মাঝ দিয়ে যে চলে গেল
তার এলোচুলে দেবী দর্শন হল
২.
ঘোমটা সরানোর পর চোখ পড়ি
ডুবের পর আমি আমিতে নেই
পৃথিবীর রূপকথা টেনে নেয় কাছে
আর কোথায় বাজে প্রভাতী সংগীত
গলির অন্ধকার ঠেলে আলোক সফরে
দুটি পাখি খেলে সেতারে সেতারে
৩.
ঘুমপাড়ানি গান পেরিয়ে পাড়ায়
পাখি আর ফুলের হল্লাবোল
ফেটে পড়লে ফর্সা রোদ
আরব্য রজনী ছড়িয়ে থাকে বিছানায়
পর্দা টেনে সিংহ সামলাই
খলিফার হাসি ছড়িয়ে পড়ে কলে
প্রার্থনায় ধূপগন্ধ
ঈশ্বর ক্রমশ আত্মরক্ষায় ব্যস্ত
কেমন যেন ফ্রিজ
৪.
আলোর কীর্তন এসে বসে ভোরের গেরুয়া
পোশাকে
তাদের এস্রাজে যে ঝুমুর বাজল
ঢেকে দিল সিঙ্কের বাসনের ঝঙ্কার
উটপাখিটি ঝিমিয়ে আছে তার
গ্রীবাটি নামিয়ে
গরম চায়ের কাপে মনভোলা ছায়া
চুমুর অপেক্ষায়
আপাতত অরণ্য নিখোঁজ
৫.
ডিমের কুসুমে চোখ পড়ে যায়
বিহ্বলতা নামে
আকাশের ডানা ছুঁয়ে
তুলি যে ছবি তুলে দিল
তাতে দিল আশনাই
পাশের বাড়ির মেয়েটি ভোর পড়ে
বারান্দার টবে মাথা নাড়ে জবা
হাওয়ার ভিতরে স্নান সেরে এসেছে
কেউ
৬.
প্রথম ট্রেনের দিকে তাকিয়ে
হারিয়ে যায়
দরজার ওপারে মৃত মাছ আর নিহত সবুজ
ঘুম আঁকা শেষ হলে ভবঘুরে
ময়ূর খোঁজে
যার লেজের ভিতর বর্ষা লুকিয়ে
শুনশানের ভিতর কৃষ্ণচূড়ার ছায়া
তার হাততালি শুনতে পায়
৭.
বেড়া ডিঙিয়ে ভিজে আলো এল
আকাশের মুখ দেখতে জলরাস্তায়
মাঠের রহস্য পড়ে এক আশ্চর্য
ভাললাগা
এক বিশুদ্ধ বায়ু সাজে আনন্দের
ঘুঙুর বাজায় বাছুরের গলায়
অস্থির জিজ্ঞাসাগুলি রাতের ক্রমশ
শান্ত হয়ে আসে সহিষ্ণু প্রহরে
৮.
ঐন্দ্রজালিক হাওয়ার ধাক্কা আসছে
দরজায়
সমুদ্রের কথাও টেবিল জুড়ে ছড়িয়ে
নোনাজল স্তনের ত্বক ছুঁয়ে গেলে
তোমার তার জিভের স্বাদ মনে পড়ে
যায়
ভোর মানে পুরাতন কিছু ছেড়ে রাখা
পোশাক পাল্টে এলে এ মঞ্চে
নতুন খেলার শুরু রান্নাঘর জানে
৯.
ভোরের শব্দে কিছু আজান ধরি
অবয়বহীন কিছু হেঁটে যায় দূরে
মন্দিরে মিশে গেলে সজোরে ঘন্টা
বাজে
আর বাজে শব্দগুলি লুকিয়ে পড়লে
একটা পরিস্কার রাস্তা চলে আসে
সবুজে মিশে থাকা লাল সাদা ফুল
হাসে আর সে হাসির গন্ধ বহুদূর যায়
১০.
খুব নাম হয় ফেলে আসা আশ্রমিক
জীবনের
রাত্রির ছদ্মনকশা মুছে ঘাসে ফুটে
ওঠে
ঈশ্বরের কান্না
দূর নদীর হাওয়া এসে বসে গায়
ক্রমশ পবিত্র হয়ে উঠি
মৃত শবদের আগুনযাত্রায়