রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯

স্বপন গায়েন


স্বপন গায়েন

নির্বাক

অচেনা মানুষের ভিড় চেনা রাস্তায় আনাগোনা করছে
সবাই তাকিয়ে আছে এ ওর মুখের দিকে
কেউ কোন কথা বলছে না
আধুনিক সভ্যতার যেন নির্বাক চলচিত্রের জলছবি।


হাওয়ার মত তারা যেন কেমন বোবা
অনুভব করা যায় কিন্তু দেখা যায় না
অচেনা মানুষদের দেখা যায় কিন্তু তারা নির্বাক!


দিগন্তের বুক চিরে হেঁটে যাচ্ছে অগণিত মানুষ
কোথায় যাচ্ছে কেউ কিচ্ছুটি জানে না
সমগ্র দেশ জুড়ে কেমন যেন এক উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি!


অন্ধকার আকাশ থেকে নেমে আসছে বিদ্যুতের ঝলকানি
দিগভ্রান্ত মানুষ ছোটাছুটি করছে সারাটা দিন
অচেনা মুখগুলো কেমন কালো কাপড়ে ঢেকে যাচ্ছে!


কারা ওরা কেউ কিছু বলতে পারছে না
তারপর রাতের অন্ধকার ফালাফালা করে দূত মিলিয়ে যাচ্ছে
এ যেন এক হাওয়া বাজির খেলা চলছে।


চারিদিকে ওঠে কান্নার রোল আর হাহাকার
মৃত্যু মিছিল পেরিয়ে আসছে মা বোনেরা
রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা একটা নির্বাক দেশ!







মেঘের বারান্দা

প্রত্যেকে যেন এক একটা সুতোর উপর ঝুলছে
একটু অসাবধান হলেই পড়ে যাবে গভীর খাদের ভেতর
দুচোখে নেমে আসছে অমানিশির করাল অন্ধকার!


জীবনটা যেন ভাঙাচোরা ফুটপাত জীবনের মত
কখন যে কে কাকে মাড়িয়ে চলে যাবে বোঝবার উপায় নেই
কিন্তু জীবন চলে এভাবেই সরু সুতোর উপর দিয়ে ...


সবার জন্যে মখমলের কারুকার্য খচিত বিছানা নেই
নেই আরামের বিপুল বিলাসবহুল আয়োজন
দুঃখ কষ্টের সংমিশ্রণে তৈরি এক অতি সাধারণ জীবন!


চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই একে অপরকে টপকে যাচ্ছে
মেঘের বারান্দায় শুয়ে আছে আমাদের পূর্বপুরুষ
ওরা এখন সব জেনে গেছে অ-সাধারণ মানুষের চরিত্র!


উপর থেকে নাকি সবই অনুভব করা যায়
অনেকটা আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর মত
কে কাকে প্যাঁচে ফেলছে বোঝা যায় না!


ঘুড়ির মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় কার কত দম বোঝা যায়
তবুও সবাই কেমন যেন এক স্বপ্নময় হাসি হাসছে
হাঃ হাঃ হাঃ হিঃ হিঃ হিঃ হোঃ হোঃ হোঃ ... 
      





শাড়ি

শাড়ি তোমাকে বেশ মানাতো বরাবরের মত মা
অতি আধুনিকা মোটেও ভাল লাগেনা কেন জানিনা
সারা শরীর তুমি সুন্দরভাবে আড়াল করতে জানতে ...


অল্প পোশাকে নারীরা নিজেদেরকে অর্ধেক আকাশ ভাবতে শিখেছে
সময়ের খরস্রোতে সব্বাই কেমন ভাসছে উচ্ছসিত তরঙ্গে
খড়কুটোর মত শরীর থেকে পোশাক উবে যাচ্ছে!


আমি আদিমপন্থী নই বাপ ঠাকুরদার মত -
কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটলেই সব দেবতার পূজা হয় না
পুজোর ফুল আলাদা একেবারে বৈদিক শ্লোকের মত!


যে কোন শাড়িতে যে কোন নারীকে ভাল লাগে
কোনো কোনো মুখের মধ্যে খুঁজে পাই আমার মাকে
ছিন্ন শাড়ি তবুও অপার হাসিতে ভরপুর ছিল মায়ের মুখ!


শৈশবের দিনগুলো আজও খুবই মনের জানালায় উঁকি দেয়
ভরা পূর্ণিমা চাঁদের আলো আমাদের ছোট্ট উঠোনে এসে পড়তো
মায়ের শাড়ির আঁচলে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখতাম


খুব মনে পড়ে আজও বারবার খুব মনে পড়ে মায়ের মুখ
সেই চেনা মায়ের আচলের গন্ধ আজও হৃদয় ছুঁয়ে আছে
কত পূর্ণিমা রাত পেরিয়ে গেছে তবুও ভুলতে পারিনা শৈশব!








সোনার রথ

তোরা এখন ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকিস
আমায় কেন একলা ফেলে রাখিস
মাঝে মাঝে বিছানায় হয় পটি
পাইনা খুঁজে গ্লাস কিংবা ঘটি!


বুকের ব্যাথাটা বড়ই বেড়ে গেছে
স্মৃতির পাতা ঝাপসা হয়ে আছে
একলা থাকতে খুবই করে ভয়
জীবন কেমন বদল হয়ে যায়!


আশায় থাকি কখন আসবি ফিরে
আমার আশিষ সদাই তোকে ঘিরে
আকাশ দিয়ে চলছে সোনার রথ
স্বর্গে যাওয়ার ওটাই আসল পথ!


আমরা বোধহয় খুবই ভীষণ বোকা
মানুষ করা কী অপরাধ বল খোকা
আলোর পরশ লাগছে সারা গায়
সন্তান মানুষ এটাই বড় দায়!







একমুঠো ভাতের জন্যে

ভোরের প্রথম আলো এসে পড়ল কৃষ্ণচূড়ার মগডালে
লালরঙের এতো অপরূপ শোভা আগে অনুভব করিনি।


প্রতিটি গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরে গেছে সমস্ত পল্লী বাংলায়
কোথাও একবিন্দু হাওয়া নেই তবুও ফুলগুলো থিরথির করে কাঁপছে!


বেলা বাড়ার সাথে সাথে গ্রীষ্মের তপ্ত গরমে পুড়ছে সারা দেশ
বৃষ্টি নেই বাতাস নেই যেন বাঁচার সব রাস্তাই বন্ধ!


এসময়ে সূর্যমুখী ফুলের শোভা দেখা যায় মাঠে মাঠে
ভোরের আলোয় পুব দিকে মুখ আর বিকেল গড়ালেই পশ্চিমে!


জীবনও ঠিক এমনি যেখানে দুমুঠো অন্ন জুটবে সেখানেই নিরন্ন মানুষের ভিড়
সকাল বিকেল নিয়ম করে ছুটে বেড়ায় একমুঠো ভাতের জন্যে!


কৃষ্ণচূড়া বা সূর্যমুখী ফুলের সৌরভ তাদের শরীরে নেই
বেঁচে থাকবার জন্যে তাদের নামমাত্র পোশাকই যথেষ্ট ...


ভুখা পেট বড় অবুঝ সে স্থান কাল পাত্র জানে না
একমুঠো ভাতের খোঁজে অসহায় মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্তে ...