কাকলি দাশ ব্যানার্জী
আদেখলা
আকাশের গর্ভ ছিঁড়ে একটা ঝমঝমানো
কোলাহল
ছড়িয়ে পড়লো অমায়িক ভাবে,
ন্যুব্জ গাছেদের দেহে তখন সেকি
প্রেমের অনুরণন-
সমস্ত গা খুলে আদর মেখে নিচ্ছে যেন
!
সবুজ সংকলনের প্রতিশ্রুতিতে
চুঁইয়ে পড়া আকাঙ্খা -
নিঝুম হওয়া শরীরে স্বপ্নের রোদ
বুনছে ,
শ্রাবণী স্পর্শে সুখের পারদ
ভাস্কর্য আঁকে
ভগ্ন পাঁচিলেও ,
ওদের দেখে আদেখলাপানা বেড়ে যায়
আহ্লাদী মনের ,
শুধু ছুঁয়ে দেবার মধ্যেই এমন এক
বিবশতার উড়াল আছে
যা অনায়াসে বুকের মধ্যে লক্ষ
প্রজাপতির ফুলকি আনে ।
অজানা এক হুজুগে ,
স্নানের বয়ানে নিজেকে এভাবে
ডোবাতে
এর আগে কখনো দেখিনি ।
যদি দাহ হয়
নিখুঁত একটা বৃষ্টিকে প্রশ্রয়
দিচ্ছিল মানুষটা সেদিন,
ওর বুকের মধ্যে পুষে রাখা ক্লান্ত
নদীটার পাশে
ঘুমিয়ে আছে একটা মেয়ে ছায়া,
যার ক্লোরোফিলে আর সাজানো বাগানের
সংলাপ নেই ,
একসময় দস্যিপনায় জেরবার করতো যে
স্বপ্নেরা
হঠাৎ প্রথাবহির্ভূত হয়ে লাশ হয়ে
গেছে তারা,
প্রবাহী যাপনে সম্পর্কের সূত্রেরা
আজ শত ছিন্ন,
এই পিউপাবাসে তার শুধু শরীর নয়
যন্ত্রণার পোড়া গন্ধ
পাড় ভাঙ্গছে মনেরও ।
এই গ্রহণ লাগা শরীর এখন একটা খাদের
পাশে দাঁড়িয়ে,
মধ্যবিত্ত বিশ্বাসরা সংকলিত
যন্ত্রণাগুলোর খিদেটাকে
তর্জনী উঠিয়ে অপার নিস্তব্ধতায়
ডুবিয়ে দিল অনায়াসে,
নেশাগ্রস্তের মত অনিবার্য উপকরণ
আঁকড়ে থাকা ঘুমটা
বাঁক নিতে পারলো না বলেই
নদীটা আজ শীর্ণ ।
নির্বিকার মানুষটা আজ তার সব
আস্তরণ তুলে দিয়েছে
বৃষ্টির হাতে ,
স্তূপাকার সব যন্ত্রণা যদি দাহ হয়
এ ঝমঝমানো বৃষ্টিতে ।
ঈর্ষা
শ্রাবন ধারায়
ভরছে নদীর মিলনমেলা -
অলীক প্রেমের
চলছে তখন গোপন খেলা,
হৃদয় দুটি
বাঁধছে মনে মল্লারী সুর ,
কুরুশ বোনা
নতুন কথা আদর দুপুর l
তোর কায়াতে
লক্ষ ঢেউ-র মুখচ্ছবি ,
নীল মিলনে
প্লাবন জলে পূর্ণা হবি l
ও নদী তুই ,
আমায় ছাড়া বেশ তো আছিস -
শ্রাবন সাথে
মগ্ন মিথুন? খেলায় মাতিস?
এখনও কি
জলফড়িংটা নিত্যি আসে ?
মাছরাঙা কি
এখনো ঠায় পাশে বসে ?
জোনাকগুলো
রোজ কি আসে পাতার ঘরে -
শ্রাবন সাথে
সেও কি বসে ? আদর করে !
এরপরই তোর
পাঁজর ঢাকা হৃদয়ক্ষত -
ডাকিস তখন -
বলিস আমায় দুঃখ যত ,
আমার কাছেই
কাটবে তখন সারা বেলা-,
স্বপন সুতোয়
নতুন নতুন নক্সা তোলা
দুইজনাতে
বসবো আবার হাতটি ধরে -
ভিজিয়ে দিবি?
আমায় তখন নতুন করে ?
মেঘবালিকার জন্মদিন
মেঘের ঘরে জ্বলছে আলো
শ্রাবণ সুরে বাজছে বীণ ,
মেঘবালিকা বললো ,"যাস,
আজকে আমার জন্মদিনI"
'ওরে মেয়ে যাস কোথা তুই,
ঠিকানা বল না ঠিক করে'
বল্লো মেয়ে,' নাক বরাবর -
ডাকিস শ্রাবন নাম ধরে'I
শ্রাবণ জলে ভিজছে মাটি
ভিজছে গাছ ,পুকুর ঘাট,
উথলে ওঠা আদর গন্ধে
চুপচুপে এক রাজ্যপাটI
'বাদলীরাণী , বাদলীরাণী,
মেঘের বসত কোনখানে
?'
'পাগলি বুড়ি ,তাও জানো না-
কোন দরকার সেইখানে ?'
নেমন্তননি তাদের বাড়ি ,
বললো যে তার জন্মদিন-
আজ সেখানে যেতেই হবে,
ওই যেখানে বাজছে বীণ !
বাদলীরাণী ঠিক তখুনি
ঝড়কে ডেকে বললে, "যাহ,
একবারটি দেখিয়ে দেতো
মেঘবালিকার ও ঘরটাI "
ঘরে ঢুকেই তাজ্জব
হই
কোথায় আলো কোথায় বীণ ?
অন্ধকারে মেঘবালিকার
নোনতা হওয়া জন্মদিন I
'ও মেয়ে তুই হেথায় কেন ?
আকাশগাঙ তো তোর বাড়ি'
মেঘবালিকা বললো হেসে-
'এই বাদলায় যেতে পারি'?'
'বর্ষা দিনে ওদের
সাথেই
চাষের মাঠে কাটাই
দিন ,
নুন দিয়ে তাই পান্তা খেয়ে
পালন করছি জন্মদিন I '
'পানতা ভাতে নুন জুটেছে
অনেকবড়ো বরাত তোর,
আন্না রে তুই ওদের ঘরে
সূযয্যি ওঠা নতুন ভোর I '