এ
কে এম আব্দুল্লাহ
রাতের
পরাগায়ন
মাছের
কান’কা থেকে নেমে যাচ্ছে— সামুদ্রিক ঘোড়া। আর চাঙারির
ওপর বরফের স্তুপে পুড়েছে—পিতার পাঁজর।
এসব
দৃশ্য দেখে,
মায়ের চোখ থেকে নেমে আসে আঁশটে জল। আমাদের পেট সেই জলে, মাছের মতোন ঘাই মারে। আর— মা, আকাশের
দিকে কেবল চেয়ে থাকেন।তার চোখের আয়না ভেঙ্গে, নেমে যায়
পুষ্পকাহিনী। তার হাতের তালু থেকে শোনা যায় পাপড়ি পুড়া জলের বুদবুদ।
একদিন
দু:সাহসের ব্যারিক্যাড ভেঙ্গে জিকজ্ঞাসা করলে আকাশের কথা; মা
— আমাদের চোখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। নিশ্চুপ।
এখন— আমরা
দলবদ্ধ হয়ে মায়ের হারিয়ে যাওয়া জ্বিহবাটা খুঁজছি।
জলপাখি
সংসার
আমাদের
ঘরে নদী বহে। খরস্রোতা নদী। তার ঢেউয়ের
ভাঁজেই আমাদের সংসার। মাঝে মধ্যে সমুদ্রনাভির মতো উত্তাল হলে নদীর আগুন ; সে
আগুনে মা বাসন পুড়তেন। আর আমি তার ভেজা আঁচলের ছিদ্র দিয়ে দেখতাম তারাফুলের বাগান।
আমাদের
সংসারে কোনো ঋতু ছিলোনা। তাপমাত্রা বিষয়ক আলাপ কোনো দিন শুনিনি। কিংবা পোষাক
নিয়েও। নদীর আধভাঙা ঢেউয়ের ভেতর,মা- তার নারী সত্তার বিশেষ অঙ্গ গুলো
তুলে রাখতেন সিকেয়,বীজলাউয়ের মতো। কখনও চাঁদের ধার করা আগুন
ভিজিয়ে দিলে বাবার দেহ,ইচ্ছে মতো বীজলাউ খুলে চেটে-পুটে
খেতেন। আর শ্রাবণের ক্লান্ত জলে ভেঙে ভেঙে ভেসে যেতো মায়ের বেদনার্ত হাড্ডিগুলো।
এসব
দৃশ্য এখন মনে নেই আর। বরং জলপাখির মতো ভেসে ভেসে ভুলে গিয়েছি প্রাক্তন সংসার।
ভুলে গিয়েছি বিগত ঠিকানা।
ক্যালকুলেটর
দিনে
দিনে আমরা যেন মূর্তি হয়ে যাচ্ছি। আমাদের চোখ ঢেকে যাচ্ছে ধূলোয়।আমাদের নিক্তির
সূতো উড়ছে আকাশে—
দুরন্ত ঘুড়ির লাগামের মতো।
প্রতিক্ষণ,ঢেউ
ভেঙে ভেঙে আমরা সাঁতার কাটি— শ্বাসের ব্যাকুলতায়।পেছন থেকে
গলা চেপে ধরে মোড়ল সময়। অতপর,একদিন বাঁচার সংবিধানে ব্যার্থ
আন্দোলন শেষে— হাঁটু গেড়ে বসি— নিস্তব্দ
গ্যালারির ফাঁকা মাঠে।
এখন
আমাদের চোখ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নামে বর্ষা মৌসুম। আঙুল থেকে খসে খসে পড়ে— আধাভাঙ্গা
বেড়িবাঁধ।