রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯

দেবাশিস ঘোষ


দেবাশিস ঘোষ

নিসর্গ পরেছে আজ আগ্নেয় পোশাক

আবার সকাল এলো এক কাপ চায়ে ।
সূর্য সবে ঢেলে দিচ্ছে রূপোলি জল
গাছপালা, রাস্তা আর দোকান বাজার
ভিজে যাচ্ছে রঙে ও রেখায়
এখনও কি ঘুমিয়ে আকাশ?
পৃথিবী, কোথায় তুমি নিয়ে যাচ্ছ রোজ আমাদের?
দুপাশে তারার ঝাঁক চড়ুইয়ের মতো
খুঁটে খেতে চায় কিছু দানা।
এখনও জাগেনি নদী
তার গায়ে আলো এসে সুড়সুড়ি দেয়।
দুচারজন শালিক আসে প্রতিদিনই পায়ে পায়ে হেঁটে
সামান্য মুড়ি খেয়ে চলে যায়
ব্যস্ত সাইকেল ছোটে
ডানায় ঝোলানো তার বাজারের ব্যাগ
দূরে অশ্বত্থ গাছ মৃদু হাসে আমাকেই
দিতে পারো মেঘ, পাখি?
দিতে পারো ছায়া?
আরেকটি মেঘদূত লিখতেও পারি
পাখিদের ছবি পারি,
প্লাস্টিক ত্রিপলে ঢেকে দিতে পারি মাথা
মেঘ নদী খেলাঘর বাহুল্য আমাদের কাছে
শুধুমাত্র প্রয়োজন বুঝি
সিন্থেটিক জল খাই
দুপুর বাড়ছে রূপো গলে নেমে আসে
পুড়ে যাচ্ছে আমাদের দিন
কংক্রিটের পৃথিবী।
বৃক্ষ, লতা, পোকা মাকড়েরা হারিয়েছে
নদীকে করেছি খুন । প্রয়োজনে ।
ভালোবাসাহীনতায় মানুষ আগুন হয়ে ওঠে
নিসর্গও তাই আজ আগুন হয়েছে
পুড়ে যাচ্ছে আমাদের মুখ
পৃথিবীর প্রয়োজনে।







যে পড়শী বসত করে কাছে

কিছু মৃত্যুর জন্য মানুষ নিজেকে প্রস্তুত করে চলে
আমকে পাকাতে হলে কিছুটা সময় ধরে জাঁক দিতে হয়
বেড়াতে যাওয়ার আগে জুতো ব্রাশ সাবান চিরুনি
গোছগাছ করে নিতে হয় |
কিছু কিছু মানুষকে মৃত্যু এসে ডাক দেয় রোজ
সে কেবল বলে, 'একটু দাঁড়ারে ভাই, আমি খুব ভীতু লোক
আরেকটু সাহস শুষে নিই এ জীবন থেকে
তারপর নিশ্চয়ই | ঠিকঠাক কতদিন বা বছর জানি না যদিও,
তবু আমি গুছিয়ে গুটিয়ে নিচ্ছি নিজেকে | একদিন ঠিক...
সে মানুষ চা খায়,পাশে মৃত্যু তার গ্লাসে ফু দিয়ে জুড়িয়ে দেয় |
অন্য সব মানুষেরা চেটেপুটে জীবনের ছিবড়ে দেখে ছাড়ে,
এত সামনে বসে থাকা মৃত্যুর নিশ্বাস বোঝে না কখনও |
আর কিছু মানুষেরা মরে গেছে তা জানার সুযোগও পায় না |
নানা রঙা জার্সি পরে মৃত্যুরা খেলা করে আমাদের সাথে |
কে কখন ডাক শোনে তার কোনো তিথি বা নক্ষত্র কিছু নেই |
মৃত্যুরা এগিয়ে চলে ছায়া ফেলে জলে, সে ছায়াকে ভালোবেসে ডেকেছি জীবন |










বৃষ্টির জন্য কবিতা

ছেঁড়া মেঘ কাঁটাতারে বিঁধে
ভাদ্রের  হয়েছে সময়
মাটিদের  ডাক চারিদিকে
সীমা-তার  তোমাদের নয়


চলো জল  গ্রামদেশ পারে
আকাশের | বুকে তোলো ঢেউ
সেখানের কিশোরীর চোখে
এসময়  চোখ রাখে কেউ


মেঘে জল ভরে দাও নদী
ছিঁড়ে দাও  কাঁটাময় বেড়া
মুখে তার  ছুঁয়ে দাও মধু
বের হও  দুষ্টু  ছেলেরা


বরিষণ  শুরু হয়ে গেছে
কেউ তার নাম ধরে ভাকো
ঐ দেখো ঝাঁপসা বাদলে
হারিয়েছে রাস্তার বাঁক-ও


চলো জল মেঘেদের ঘরে
সাথে নেও রাঙা বর্ষাতি
ওপাড়ায় কেউ বুঝি এল
জ্বেলে দাও সাদা মোম বাতি


এসো মেঘ অবুঝ বাদল
ঝরে যাও তারাদের মতো
সারাদেশ ভিজে যায় স্নানে
ভেসে ওঠে প্লাস্টিক যত


শ্রমিকের দোকানীর মুখে
জমে যায় মেঘেদের ঝুল
কাজ নেই সঞ্চয়ও নেই
চূর্ণীর বুকে ভেজে পুল


মাঠে জল হাসিমুখে চাষী
মেয়েটির টিউশন ড্রপ
ঠাকুমার ব্যথাটা বেড়েছে
শুরু হল জলের পরব


জলে জল মিশে যায় শুধু
ছোটোদল নেমে পড়ে স্নানে
খালি গায়ে উল্লাস মেখে
ওরা বোঝে বৃষ্টির মানে


বরষাকে কতখানি চেনো
কতবার ভিজে গেছো জলে
সূর্যের ফার্নেস ভেজে
পাড়াটির জল-কোলাহলে


জলদাগ এঁকে রাখে গাছ
পাখিদের ঘর ভেঙে পড়ে
হোর্ডিংয়ের মেয়েটির মুখ
ফোঁটা ফোঁটা জল খেয়ে নড়ে


ভোলো সব পাথরের বোঝা
কাকে ছেড়ে চলে গ্যাছে কেউ
এসময় নদীটি জেগেছে
উঠেছে প্রবল তার ঢেউ


জল দাও বুক পেতে আছি
রোজ খাই আগ্নেয় কথা
পাশাপাশি একসাথে থাকি
ধুলো বালি খায় সখ্যতা


ভিজে যায় শহরের কাক
ছাট খায় ভাঙা ল্যাম্পপোস্ট
দ্বিতীয় হুগলী সেতু দূরে
ঝরাজল ঘিরে করি টোষ্ট