তন্ময়
ধর
লবণ
সোনালী বলের ছবিগুলোর নীচে আমরা দীর্ঘক্ষণ
ধরে স্নান করছিলাম। হঠাৎ ঢেউয়ে ভেসে আসা এক মুন্ডহীন শিশু পা জড়িয়ে ধরল। তার
অতিশীতল নখগুলি বলে চলল এক ধর্ষণের বাড়বাগ্নির হিসেব। স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিচারক
হাসলেন। তার মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ল কালচে রক্ত। সাক্ষীরা বলল ‘লবণ কম পড়িয়াছে’
ওদিকে তখন অগণন পাখি উড়ে এসেছে। একটা
পাখির কঙ্কালের ভেতর থেকে কাটা মাথাটা তুলে আনলেন গ্যাব্রিয়েল মার্কেজ আর
এস্তেবান। সাক্ষীরা বলল ‘চোখের ফুটোর অন্ধকার
অভিনয়যোগ্য নয়’
ঘন নীল ছুরি নিয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। মৃত্যুলক্ষণ ফুটে ওঠার আগে শিশুটি চিৎকার করার চেষ্টা করল।
কোথাও ধাক্কা লাগল না। পূর্বমাতৃকা এক দলা লবণ ঢেলে দিলেন গলায়।
চিনি
কালো রক্তের নীচে ছবি আঁকছেন অন্ধ
বিনোদবিহারী। আমাদের বিষাক্ত পানীয়ের ভিতরে শিশুটির জন্মলক্ষণ ফুটছে। জরায়ুতে
তলোয়ারের দাগ। গ্যাস বার্ণারে মাথা চেপে ধরেছেন সিলভিয়া প্ল্যাথ। আজব এক
রন্ধনপ্রণালী পুড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের বিকৃত জিভ
আমরা প্রেমের গল্পে চিনি মেশাচ্ছি। চায়ের
কাপে গণহত্যার ছবি আঁকছেন ভিক্টর উগো। চিনির দানাগুলো গড়িয়ে পড়ছে অ্যাস্ট্রাল
প্লেন থেকে ফিজিক্যাল প্লেনে। রক্তবর্ণা তারা ও বোধিসত্ত্বের মিলনদৃশ্য থেকে মাংস
খুবলে নিচ্ছে পাখি
পাখিরা খেলতে খেলতে তুলে এনেছে শিশুর নাভি,
মৃত নখ, শয্যাদৃশ্য ও বুকের পর্দা। আরো কয়েক
চামচ চিনি। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। মৃত্যুর প্রয়োজনে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে
রেইহানি জাব্বারির মাকে লেখা চিঠি
আগুন
বনকুঞ্জে ঠিক যেখানে অভিসারিকার আসার কথা,
সেখানে পড়ে আছে একটি বাদামী পুতুল। আমরা ইতিহাসে সামান্য চাপ
দিয়েছি। তাই ফ্রান্সিস্কো গ্যয়ার ক্ষুধার্ত শয়তান তার অজৈব হাত-পা গিলতে পারছে না।
রক্তাল্পতার অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে আমাদের পুংলিঙ্গ
পৃথিবীর দিকে সেই শাদা মথ নেই। খুনী
ছুরিটা রেখেছেন ওক্তাভিও পাজের চোখের সামান্য নীচে। ওখান থেকেই ভয়ার্ত শকুনটি
পুতুলের দেহ দেখতে পেয়েছিল। তলপেটের ওপর দিয়ে মিছিল করছিল বিষাক্ত পিঁপড়েরা
মৃতদেহের গল্পটা টিস্যু পেপারে মুছে আমরা
কোল্ড কফির কাপে চুমুক দিই। স্যান্ডউইচে কামড় দিয়ে বিচারক বললেন ‘পুতুল বৈ তো নয়। আগুন নিভিয়ে দাও’। সাক্ষীরা হাসতে
হাসতে তন্দূরী চিকেনের অর্ডার দিলেন
অন্ন
তন্দূরী চিকেন খাওয়া শেষ হলে পোস্টমর্টেম
রিপোর্টটা টেবিলে রেখে গেল কেউ। উরুসন্ধির প্রবল রঙ থেকে চ্যালকোলিথিক দেওয়ালের
সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের অভিনয়। অব্যবহৃত কাঠকয়লা থেকে নখ তুলে আনছেন মায়া
অ্যাঞ্জেলিউ
ক্ষত বুকের মাংস থেকে একটা মৌন মিছিল শেষ
হয়েছে আমাদের চপস্টিকে। অন্য এক চপস্টিকের অন্ধকার থেকে গোলাপী মাংসের ওপর রক্তের
দাগ ফেলছেন ম্যারিনা ইব্রাহিমোভিচ। বাসি ভাতের পিন্ডটা ভাঙতেই আবিষ্কৃত হল
শিশুকন্যার মৃতদেহ
প্রেমে ব্যবহৃত সব খেলনাকে অন্নসম্ভব এক
জীবন থেকে তুলে নিল শিশুটি। ঈশ্বরের শেষ আলপথে পোকামাকড়ের খোঁজে নেমে এল শরতের
নীলকন্ঠ পাখি
জল
জলের ওপর একটা ছায়া পড়ে। ছুরিতে মাংস কাটে,
অস্থি কাটে না। একটা ফসিলের সামনে কয়েক যুগ বসে আছেন মার্লিন স্টোন।
সদ্য মৃত এক প্রাণীর কেঁপে ওঠা মাংসের ভিতর অফুরান মাংস কেটে চলেছে আমাদের প্রেম
মৃত্যুযন্ত্রকে আর বিশ্বাস করছেন না
বিচারক। ঈশ্বরের কৃত্রিম মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে হাসি ও রক্ত। দর্শকের চোখ থেকে
নিষিদ্ধ খেলনা তুলে নিচ্ছে শিশুটি। ঘুমের ওষুধ খাচ্ছেন সাক্ষীরা।
অতল জলের নীচে অভিনয়ের মুখোশ খুলতে খুলতে
আমাদের খিদে পাচ্ছে। খাবারের আড়াল থেকে একটা দ্বিধা এসে খেলা করছে তীব্র শূন্যতার
সাথে। পারফিউমের গন্ধটা বাড়ছে।