রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯

তনিমা হাজরা


তনিমা হাজরা

ভিজে বর্ষার কাব্য

ফুটপাতে ভাজে এগরোল, নাকে গন্ধ,
এমনই একটা ভিজে বর্ষার কাব্য,
সেই সকালেতে বেরিয়েছে খেয়ে ডাল ভাত,
 রাত্রি নয়টায় শরীর এখন অবসন্ন,
পকেটে মাত্র দশটি টাকাই ভরসা।
নদীটা শুকনো, একটুও নয় নাব্য।।

খালি পেটে লোভ চাড়া দেয় আজ উদগ্র।
রোজ রোজ থামে বাসের জন্য এই ষ্ট্যান্ডে,
রোজ রোজ শোঁকে দুর্বার এই গন্ধ।
আজ কেন লোভ করছে  এমন বায়না,
মাথার ভেতর শিকল ছিঁড়ছে হায়না।

আটটাকা দাম এগরোল বলে ভেন্ডার,
পকেটে মাত্র দুই টাকা বাকি থাকবে।
বাসভাড়া তো তিনটাকা দিতে হবে তার।
অগত্যা  আজ হেঁটেই পথটা মারবে

একখানা রোল অর্ডার দেয় সে মেজাজে,
গরম গরমই গপ গপ করে গিলছে,
তৃপ্তি তখন গলা থেকে পেট অব্দি
দূর্বার বেগে  নাচতে নাচতে নামছে।

তারপর হাঁটা এসপ্ল্যানেড থেকে টালিগঞ্জ,
মাসির বাড়িতে আশ্রিত সে কিছুদিন,
মাকে হারিয়ে বাবার আবার সংসার
জঞ্জাল জ্ঞানে তিনবোন তারা গৃহহীন।

অসহায় তিন নামে এসে তারা রাস্তায়,
একটিকে পিসি একটিকে মাসি নিয়ে যায়,
একটি বিয়ের শর্টকাট দেওয়া দেওয়ালে
ভোকাট্টা প্রেম জোটালো নিজের খেয়ালে।

মেয়েটি এখন নার্সিং এ হতে ভর্তি
 পরীক্ষা সব দিচ্ছে,
কিছু একটা জোটাবার খোঁজ  নিচ্ছে,
পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করতে
দাঁতে দাঁত চেপে অপমান সব সইছে।

মেসোর বোনেরা মেসোর ভীষণ ভালো চায়
তাই যেচে এসে দিয়ে যায় পরামর্শ,
মিছিমিছি কেন নেবে বোঝা তুমি এইটার,
তার চেয়ে ভালো দায় ঝেড়ে ফেলে দাও,
সুতরাং, অনাথ আশ্রমে জুটিয়ে নেয় সে ঠিকানা,
মাসির বাড়ির ও আশ্রয় তার ঘুচে যায়।

এবং,এবং,এবং গল্পেরা লড়াইয়ের,
উচ্ছেদ থেকে উচ্ছেদ সয়ে ক্ষত সব
ক্ষিদের ব্যথার নীল নীল ফোঁটা বিন্দুতে
শরীরে আঁকছে জেহাদের কড়া অবয়ব।

সেই মেয়ে আজ সেবিকা এক হাসপাতালের,
ব্যথা আর ক্ষিদের বোঝে ঠিকঠাক কান্না।
বোনেদের দিয়ে ঘরের সঠিক রুটম্যাপ
নিজের ও গড়েছে সাধের এক ঘরকন্না।

সেই একই পথে  ট্যাক্সিতে সে আজ ফিরছে
যে পথের ভাড়ায় এক টাকা ছিল ঘাটতি,
যে পথে ক্ষিদের দুর্দম এক দস্যু
বাগ মানেনি  হিসেবের কোনো ঘাটতি।

সেই হেঁটে আসা,  সেই ক্ষিদেদের দস্যু
কে জানে কোন অভাগাকে এখন পকেটে রাখছে,
কোটরে জমানো নোনতা জলের পানসি,
আজ কার গাল বেয়ে ভাগিরথী হয়ে নামছে??

আজও  ফুটপাতে খাবারের বাস শুঁকলে
অতীত এসে প্রশ্নটা রাখে কাছে তার,
এসপ্ল্যানেড থেকে টালিগঞ্জ ঠিক কতোদূর,
হিসেব মেলাবে  সূত্র যেমন আছে যার।

অথবা পকেটে মাত্র একটা টাকা না থাকলে,
শুধু গজ আর ফুটে মেপে দেবে কোনো ক্ষুধাতুর।।








মেঘমল্লার

আমি নামি বৃষ্টি ধারায়
তোমার পায়ের পাতায়,
ইচ্ছেরা চায় হতে ঝড়, তবু থামি।
জানি এসব ই আমার পাগলামি,
তবু মন যে অবোধ।

হতে পারি নীল শাড়ি তোমারি ভিজে গায়,
নরম কার্পাসে নিবিড় বাহুপাশে,
দুরন্ত এক দস্যু যে শুধু তোমাকেই
চিরকাল পেতে চায়।

তবু সাজি এক বাউল সন্ন্যাসী,
ভেঙে ফেলে বাঁশি, সাধি একতারা,
বলে দাও তুমি  হেঁটে যাব আর কতো দূরে চলে, 
ছেড়ে তোমার পাড়া।।।







বর্ষাতিহীন

বর্ষাতিহীন দিনেরা আমার দূর থেকে দ্যাখে অট্টালিকার  সুরম্য সুরক্ষা ছাদ,
এই বর্ষার জলস্রোতে ভেসে যাক গত বর্ষার যত তিক্ত বাদানুবাদ।
মাটিও জেনেছে কি প্রবল সুখ আপাদমস্তক এভাবে উথাল ভিজে,
আকাশভাঙা এ ভালোবাসা দিয়ে ডুবিয়ে নিয়েছে
সে যেন নিজেকেই নিজে।
ধূলির চাকায় শান্তির জল, রথের রশিতে পড়লো যে হেঁইইয়ো টান,
এ কোন গুহায় এত ক্ষুধা ছিল চোরাবালি চাপা দিয়ে রাখা, সব টুকু সে এক নিঃশ্বাসে করে আকণ্ঠ পান।
বৃষ্টিতে ভেজে অনেকদিনের অনেক প্রতীক্ষা যত,  ধূসর দেখায় দূরের সবুজ মাঠ,
তুমুল ভিজছি আর ভিজছিই শুধু এই বর্ষায়, এখনো তো তুই খুলিস নি তোর দ্বার, বাইরেই তাই দাঁড়িয়ে রয়েছি অপেক্ষায় , কবে পার হবো বল তোর চৌকাঠ।।।