জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
শ্রাবণ
-- ৪
বর্ষাদুপুরের পাণ্ডুলিপি কোনো
কিশোরীর দুলাইন ভাবনায়
লু ছিটিয়ে দিলে বেলফুলগুলি চা
পাতা হয়ে যায় হে দীর্ঘশ্বাস,
তুমি তো বৃষ্টি আনার মন্ত্র জানো
না।পুকুরে কামগন্ধহীন হংসীডাকে
অনাগত খরার দহনকাল শিথিল
প্রদীপশিখার মতো কাঁপে।
শোকদগ্ধ পুরুষের মতো পাখিরাও
উল্লাস হীন কিশোরী জানে না
মুক্তোদানার মতো কত কলি আগুনবাতাস
শুষে খায়।অপ্রিয় বিরতির
হতাশ সময়ে ডানার ঝাপট কোনো প্লাবন
আনে না।শ্রাবণ শুকিয়ে গেলে
বনসৃজনের জমায়েত ফাঁকা যে চারা পায়
না গাছের সংকেত তার জন্য
কয়েকটি শোকগাথা রচিত হবে বিলাসচাতালে
হাঁসের কণ্ঠে সুরের আগুন
যদি শ্রাবণ ডাকতে পারে তবে
যন্ত্রণার দাগগুলি সব মুছে যাবে বর্ষণভারে।
খরা
-- ২
একটি জলহীন শ্রাবণের বুকে ওলটানো
সাইনবোর্ড।
গোপন লেখাটি জানা খুব কঠিন নয় কোনো
সত্য
অতীতের গর্ত থেকে জাতসাপ রুটিন
দিনে মুখ বাড়ায়।
তার নাম খরা।সে ভারী শুকনো
আতঙ্ক।মধ্যসময়ের
অন্ধকারে প্লাবন আনার অহমিকায়
বুঝিনি আমাদের
দানাশস্য লাঞ্ছিত খাদ্যগুলি
জিজ্ঞাসাদীর্ণ হতে পারে
বিজ্ঞাপিত সবুজ বিপ্লবের পরেও।
সংশয় নিয়েও ধ্বংস করি বিপুল সম্পদ।
ভিক্ষার অভিনয়ে রসহীন লকেটে
এইসব দোষ খণ্ডাবে না। কদম্বগোলকটিতে
হাত রাখলে
উপোসের চাপাকান্নার কাঁপন বেশ
বুঝি।কোনো
মরুসরীসৃপের অথবা পর্ণকাণ্ডের
সুচারু সংসার।তারা
বেশ শিখে গ্যাছে বাঁচার কৌশল।আমরা
যারা অনবহিত
অহংকারে ধ্বংসের দোকান পেতে দাপনার
দাপটে মত্ত
তারা ওই শ্রাবণের ধার
ধারিনা।কাগজকুচির দম্ভ
লোনাজল আনলে আমরা জাহাজের গল্প বেশ
জানি।
জল
এবার একটু জলের গল্প হোক।ঝরঝর
ঝিরঝির
অবিশ্রাম শব্দে ভেতরের পর্দা-পাপোশ
জলভারে মুক্ত।
আমরা কাগজের নৌকোদিনে ঢুকে যেতে
পারি।
নিস্তেজ সাপের চোখে দুএকটা ইঁদুর
দোলানো যাক।
প্রবৃত্তি প্রোক্ষভের নাড়া ধরে টান
প্রণোদিত শুক্রাণু কণার মতো
আকাশের দিকে একমুখি হাউই ছুটুক।
এইসব কথা শুধু দগ্ধ
স্লোগান।প্রতিবাদ।প্রেমের বাতাস
লাগুক।শ্রাবণমেঘ লিপিধর লিপিবহ নয়
-- কবির এই
মন্ত্রটিকে মেলে দিলে সন্দেহ থাকে
না এ মেঘ বাহক নয়
ধারক।জাগানিয়া মেঘের কাছে ভেজার
শপথ রাখি।
জাগুক শব্দ ও ছন্দের দ্বন্দ্বহীন
প্রেম।প্রবল স্রোতের
সাথে ভেসে যাক যা কিছু বন্ধন।আসুন
সাঁতার শিখি।
বিবিধ কৌশল শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে
দেওয়া নয়
দেওয়া ডুবিয়ে দেওয়া মনের গভীর থেকে
তুলে আনা প্রেম নামের মুক্তোদানা
নিটোল নিখুঁত
সজল মেঘের বুকে হারানোর প্রাণিত
আশ্বাস।