নীলাঞ্জনা নীলা
কৌমুদী-বৃষ্টিতে...
চাকভাঙ্গা জ্যোৎস্নাকে সরিয়ে রেখে
বৃষ্টি খুঁজি বোধি পূর্ণিমায়।
শুয়ে থাকা রাত্রিকে উঠিয়ে দিয়ে বলি,
আমাকে নেশাগ্রস্ত একটা আকাশ দাও।
যে ভাবেই হোক জলের ঘ্রাণ চাই
যা-কিছুর বিনিময়ে।
প্লিজ এক মুঠো বৃষ্টি দাও এই ভরা
জোছনায়।
খবরের পাতায় শিরোনাম হবে
গর্ভবতী শুক্লপক্ষে প্রেয়সী
রাত্রির স্নান।
তারপর ক্লান্ত অন্ধকার জেগে উঠবে
জলের শব্দে।
বহুদূর থেকে ভেসে আসবে মেঘ-বৃষ্টির
গান,
বৃষ্টি তুলবে তানপুরায় সুর। তেওড়া
তালে বিদ্যুতের সঙ্গত;
সমস্ত পৃথিবী যেনো ভেসে যাবে
কৌমুদী-বৃষ্টিতে
ওই দৃশ্য কেউ না, শুধু
আমি দেখবো, একলা আমি।
চুপিচুপি শোনো, তোমাকেও
দিতে পারি ওই বৃষ্টি, বিনিময়ে?
রিক্সা কোথায়!...
সেই সে যেবার বৃষ্টি হলো পূজোর
মাসে
পথ-ঘাট সব জল থৈ থৈ
রিক্সা কোথায়!
তুমি তখন অপেক্ষাতে বসে ছিলে,
এদিকে আমি কিভাবে যাই,
সে কথাই ভাবছিলেম।
তখন তো আর ফোন ছিলোনা,
শুধুমাত্র চিঠি ছিলো
আর বসে মুখোমুখি যা কিছু সব কথা
হতো।
কি যে করি, ভাবছি
তখন,
রিক্সা কোথায়! কি করে যাই!
তোমার তো একটুকুতেই রাগ উঠে যায়।
মাঝে-মধ্যে মন বলতো,
আজই শেষ! আর না! খুব হয়েছে!
কিন্তু আমি হেরে যেতাম,
তোমার চোখের বিষণ্ণতায়;
তবু সেদিন ভাগ্য ভালো একটা রিক্সা
খুঁজে পেলাম,
এই রিক্সা যাবেন নাকি টিএসসিতে?
ভাড়া আমি বাড়িয়েই দেবো। চলুন না
ভাই!
তখনও ভাই ডাকের মূল্য ছিলো,
তেড়ছা নজর কাটিয়ে দিতো।
বেইলি রোডে এক হাঁটু জল,
বেচারা রিক্সাওয়ালা প্যাডেল ঘোরায়
টেনে টেনে;
ওদিকে তো আমার তাড়া, তুমি
তো বলেই খালাস,
'আসতে হবে।'
এই যে ভাই, একটু
প্লিজ জোরে চালান।
অবশেষে পৌঁছে গেলাম যথাস্থানে,
কিন্তু এখন তুমি কোথায়!
বৃষ্টি আবার নামলো বলে,
ভিঁজতে আমার আপত্তি নেই, তুমিও
জানো
কিন্তু এখন তুমি কোথায়!
ওই সময়েই তোমার বন্ধু তমাল ভাইয়া
সামনে আমার এসে দাঁড়ালেন,
'কখন এলে? নিমগ্ন আসেনি বুঝি!
বড্ড পাগল, এলোমেলো।
নাটাই তুমি ছেড়ে দিওনা, বুঝলে?
একটুখানি কঠিন হয়ো।'
হেসে ফেললাম কথা শুনে,
তখনই বৃষ্টি এলো, এক
ছুটে ক্যাফেটেরিয়ায়
কে জানতো তখনই তুমি,
এসে খুঁজবে আমায় সে বৃষ্টিতে!
বোকারা রাগে বেশী, তেমনি
করে সন্দেহ,
তুমিও তেমনই ছিলে,
কে একজন বলে ফেললো,
'রিনিকে তো দেখলাম ক্যাফেতে
ছুটে যেতে,
সাথে ওর তমাল ছিলো।'
অমনি তুমি রেগেমেগে অস্থির হয়ে
ফিরে গেলে;
বোকা তুমি! তাইতো আজ একলা ভীষণ
সন্ধ্যে নিয়ে বসেছিলেম শুধু তোমার
অপেক্ষাতে,
সন্ধ্যে যখন গড়িয়ে গেলো রিক্সা কোথায়!
ফিরে এলাম,
কে জানতো আজকে আবার এমন করে দেখা
হবে
তোমার সাথে রিক্সা স্ট্যান্ডে এমনই
বৃষ্টি দিনে?
কিন্তু আজও রিক্সা যে নেই
হঠাৎ এক রিক্সা দেখে, এই
রিক্সা যাবেন নাকি?
একই সাথে বলে ওঠা,
দুজনেই চমকে গেলাম, চেয়ে
দেখি সামনে তুমি।
বললে তুমি, 'কেমন আছো? কোথায় যাবে, নামিয়ে
দেবো?
আমি যাচ্ছি টিএসসিতে।'
কিন্তু আমার অন্যপথে যাবার তাড়া,
আত্মজ বসে আছে অপেক্ষাতে।
আহ!......
ভুলের ভেতর ফুল হয়ে ফোঁটার
অপচেষ্টায় ব্রত
আস্ত একটি গোলমরিচ জীবন।
তবু উড়ুক্কু ডানার ভাঁজে ভাঁজে
রক্তচন্দন ঘ্রাণ নিতে নির্জন
নগ্নতায় সাঁতার কাটে নি:শ্বাস;
নোখের ভেতরে উঠে আসা উত্তপ্ত
মূহুর্ত
শূন্য হাত দিয়ে ধরে রাখা কথাগুলো
হাসে বাঁকা ঠোঁটে। পাওয়া হয়না কিছু;
অবোধ জ্যোৎস্না
শ্বেতপদ্মের শরীরে আছড়ে পড়ে
তছনছ করে তার রাজকীয় রাজপ্রসাদ।
ওদিকে হাওয়ার তোড়ে উড়ে যায়
ইতিহাসের পান্ডুলিপি
টুকরো টুকরো হয়ে ছিঁড়ে পড়ে একেকটি
সবুজ পৃষ্ঠা
সূচিপত্রে নেই দিকনির্দেশনা
অক্ষরের ভীড়ে পাওয়া যায়না খুঁজে
একটি নাম।
‘আমি’ নামহীন, ছাদ-চারদেয়ালের ভেতর গৃহহীন।
দারুচিনি দ্বীপ ডেকে যায়,
ছুটছি—–
বুকের ভেতরের ওম ছটফট করে,
আহ!
**হঠাৎ পায়ের পাতায় আলতো ছোঁয়া
কার! আমি! আমার!!!
যেন এলাচের ঘ্রাণে ডুবে যাচ্ছে
নিখাঁদ রাত্রি রোমাঞ্চকর শিহরণে।