অনুপম
দাশশর্মা
তরুশাখা ও শীতদুপুর
শীতের দুপুর। বর্ণহীন মুখশ্রী
নিয়ে কেউ যেন
সন্তর্পণে এসেছে কাছে বুনোগন্ধ
ছড়িয়ে।
এখন আসন্ন ফুলের উৎসব
অথচ স্ফূর্তির থেকে শত যোজন দূরে
যে গৃহিনী গাঁথে ফুলহার পেটের
তাগিদে
তাঁকে অবিকল দেখছি এখন কাছে
তীব্র মহুয়া গন্ধে।
এসেছিল আগে তরুশাখা হয়ে, মাধবী
বিতানের রথে
সরাসরি বইমেলায় তুমুল ঢেউ তুলে
তারপর হঠাৎ এক প্রদোষে খসে পড়ল
যোগাযোগের উত্তরীয়।
নির্মম বেদনায় নীল হল অভিমান
মর্মরধ্বনি শুনেছিলাম তাঁর ঝাপসা
ছবিতে
হলুদ কুয়াশায় সে আত্মমগ্ন, চোখ কবিতাময়।
অভিমুখ
বদলে যায়। যাওয়াটাই নিয়তির ধারা।
পারাপার করি ক্রমাগত পিছল ঘাসের
বন
দেখি পথে পথে সাজানো প্রলোভনের
সম্ভার, চলমান
পিপাসার স্রোত যেন ধাবমান
ইহজন্মের দিকে
কৌতূহল জাগে। স্বপ্নঘুম আর
বাস্তবের মাঝে
সজাগ থাকে বিপন্নতার ভাষা
তবুও এগোতে হয় লাজুক পাতা মাড়িয়ে
সন্ধের আলোয়
ঘুরপাক খায় গতির অভিমুখ
সংযত রাখি চিরায়ত তৃষ্ণার
শব্দহীন কাতরতা।
ধ্বনি রং ছড়া
কলেজস্ট্রিটের মোড়ে নেমে ডানদিকে
মোচড় নিলে দেখি হাঁটু মুড়ে বসে
আছে
সারি সারি সরু-মোটা বইয়ের কিয়স্ক
এগিয়ে যাই, ধুলো মনে
করায় কলেজবেলা
পাকা রং লেগেছে স্তব্ধতার শরীরে
জাল বুনতে পারি এখন নীল আকাশের
চিবুকে
কথা নয় কবিতা, ব্যবধান
সরিয়ে রেখে
পাতা ওল্টাতে থাকি সুদৃশ্য
মলাটের
ধ্বনি রং ছড়িয়ে ভেজাতে থাকে
অক্লেশে
আমার পৌঢ় বিকেলে।
প্রবল খিদে
মুখ ডুবিয়ে আছে তরল ভাগ্য
শুষ্ক নাক বাতাসে শুঁকছে
গরম ভাতের গন্ধ
পালক ছড়িয়ে ইতস্তত পোষা মোরগ
ওদের খিদের হদিশ জানে
এঁদো পুকুরঘাট
মাথার ওপরে জ্বলছে রোদ্দুর ভগবান
হয়ে
ফাটা খেতজমিতে খরার উল্লাস
কুঁচকে যাওয়া শরীর দেখছে
লাঙলের করুণ মুখ
খিদের কামড়ে গোবরলেপা ঘর অচেতন
যোজন দূরত্বে রোদ্দুর-রঙা ফুল
উঠেছে
মহাজনের মার্বেল ঘরে
খিদের বায়না মেটাচ্ছে মূল্যগাঁথা
নারীশরীর।
অক্ষরমতি শরীর
অনেক ঋতু পার করে এখন স্থিতধি
তুমি
ক্ষয়মান লবণের স্বাদ নরম ঢেউ
নুইয়ে পড়ে আবছা রেখায়
বাথটবের সাবানফেনা বিষণ্ণ
নগ্নতা খুইয়েছে বিস্ময়
ঘুম ভাঙে মাঝরাতে অদৃশ্য
স্বপ্নের খোঁজে
সকালের রোদ দীর্ঘরেখায় তুলে আনে
শ্রান্ত ছায়া
সন্ধেবেলায় প্রসবে সফল হয়
অক্ষরবেদনা।