সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

রুনা দত্ত


রুনা দত্ত

মৃত্যু -ঘুম

আজ যেন ঘুম আর মৃত্যুর মধ্যে
লুকোচুরি চলছে....

যদি ওপার থেকে শেষবারের ডাক আসে

যদি মৃত্যুর শূন্যতা ঘিরে রাখে আমার সত্ত্বা 

তাও  আজ আমি নিঃশব্দে ঘুমোতে চাই

দহন হেমলক ছুঁয়ে  ফিরে যেতে চাই

আমার নৈসর্গিক পৃথিবীর নিঃসঙ্গতায়








মন - নগ্নতা

নগ্নতা খারাপ ! কিন্তু কেন! 
শিশুতো মাতৃত্ব খুঁজে ফেরে
আর আমি তুমি খুঁজে ফিরি 
চিরন্তন যৌনতা ....

এখানেই যে আকাশ পাতাল তফাৎ
দৃষ্টিভঙ্গির বা বুঝতে পারার! 

আসলে শরীর জুড়ে থাকে
একটা ঈশ্বরীয় ঘ্রাণ
শিশুর সরল মনে যা
সহজেই  বাসা বাঁধে।  

আর আমার তোমার চোখ তো
বাঁধা আদিম চেতনায় ....
তাই তোমার আমার মন জুড়ে
শুধুই শরীরী ঘ্রাণ ।

শরীর নয় আসলে মন- নগ্নতায়
বাঁধা পড়ে আছি আমরা !

তাই ঈশ্বরকেও কি অবলীলায়
যৌনতার দেবীর
আসনে বসিয়ে দি আমি তুমিও আমরা ...








সম্পর্ক

কখনো কখনো সম্পর্কের
শীতলতায় একটা দাঁড়ি টেনে
দেওয়াই ভালো। 

না হলে আজীবন
একটা মৃত সম্পর্কের
সাথে সহাবস্থান....

এই একমাত্র পথ
হিসেবে থেকে যায়
অবশিষ্ট জীবনের জন্য।

 অর্ধেক আকাশ ছোঁয়ার
 অবকাশ থাকলেও হয়তো
 আর ফেরা যায় না।

কারণ সময় আর সুযোগ তো
কারোর  জন্য বারবার
ফিরে আসে না।








শূন্যতার আবর্তে

আসলে মানুষ  সবসময় বড়ো বেশী নিঃসঙ্গ
বড়ো বেশী একা। 
সেই ছেলেবেলায়  সেই শৈশবে বা আজ
যৌবনে এসেও মানুষ  মূলত একাই । 

হাজার নক্ষত্রের ভীড়ে চাঁদ যেমন
নির্জন বা সঙ্গীবিহীন
তেমন হাজার মানুষের ভীড়েও মানুষ
বস্তুতঃ খুব  খুব একাই। 

আসলে সবার মাঝে থেকেও নিজেকে
আলাদা রাখাতেই যেন বেশ স্বস্তি।

হয়তো সবার সাথে নিজেকে ঠিকঠাক
মিলিয়ে দিতে পারেনা বলেই সে
বরাবর নিরাপদ দূরত্বে থেকে যায়  ....

তাই বাইরে থেকে যতোই উচ্ছ্বল হয় 
এর তার সাথে উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় 
মনের গভীর অন্তঃস্থলএ সে কিন্তু সেই একাই 
একাকীত্বই যেন একমাত্র  বিশ্বস্ত সঙ্গী।

তাই আজ কাল বা আগামীর  চির নির্বাসনে
সে যখন ফিরে যাবে ....
তখন চারপাশের অসংখ্য মানুষের ভীড়ে
আপাতদৃষ্টিতে একাকী না হলেও
মূলত সে একাই ফিরবে নিজস্ব শূন্যতার আবর্তে ।







ভালোবাসি কি মুখেই বলতে হয় ---

ভালোবাসি কি শুধু মুখেই  বলতে হয়
চোখের গভীরেও প্রেম বাসা বাঁধে

ভালোবাসি বোঝাতে কি পাশেই থাকতে হয়
দূর থেকে দূরে চলে গেলেও ভালোবাসা যায়

ভালোবাসি বলতে কি ছুঁয়ে থাকতে হয়
মন থেকে মনের গভীরেও প্রেম আন্তরিক হয়

অনুভবে যেমন নিজ নিজ ঈশ্বরকে ঠিক
খুঁজে পাওয়া যায়।

অনুভূতির পরশে তেমন ভালোবাসাকেও
আপন করে নিতে হয়।








ভালোবাসার সমীকরণ

তোমার আমার মাঝখানে একটা সাঁকো
যা না আমি পার হতে পারি না তুমি !

তোমার আমার মাঝখানে অনেক না বলা কথা
যা না আমি বলি না তুমি বলো !

তোমার আমার মাঝখানে যোজন দূরত্ব
যা কখনোই মুছে যায় না !

তোমার আমার মাঝখানে অগভীর প্রেম
যা কখনোই গভীর হয় না !

তোমার আমার মাঝখানে শত বৈপরীত্য
যা কখনোই এক হওয়ার নয় !

এরপর এরপরেও আমরা নির্দ্ধিধায় ভালোবাসি
হাতে হাত রাখি পাশাপাশি হেঁটে যাই। 

তোমার ঠোঁটে ছুঁয়ে যায় আমার ভালোবাসা
অগভীর প্রেমকে ছুঁয়ে আমি গভীর হই ...

ভালোবাসার যে কোন শর্ত হয় না
কোন নিয়মে একে বাঁধাও যায় না।

তাই মন বারবার প্রেমে পড়ে উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়
ভালোবাসায় নিজেকে হারায় ...

আমাদের হাজার অমিলের মধ্যে মিল খুঁজে
এভাবে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়াই যেন
ভালোবাসার আপাত সহজ সরল সমীকরণ।