রত্নদীপা দে ঘোষ
পাঁচটি কবিতা
১
আপনি বললেন ,
শিল্প । কাঁধের দুপাশে ডানা বেরোলো বেশ ক ’ খানা । সচরাচর দেখা যায় না এমন উপনিবেশ । সুপারমার্কেট
ছাড়িয়ে ডুয়ার্সের প্রকল্প ... যেভাবে আপনি শিল্পকে ডিফাইন করলেন ...অনেকটা jazz এর মতো
মেয়েটির চুল জড়িয়ে গেছে কোমায়
লঞ্চডুবির ঘুড়িটি যেভাবে উড়িয়ে দ্যায় লাটাইয়ের সারাৎসার ...
অক্সিজেন সিলিন্ডারে কুঁকড়ে অ্যাড্রেনালিন
ধাতুদণ্ড এক পা এক পা নামছে যোনিতে
ওহে ফ্যালোপিয়ান ...... তুমি জীবন্ত এখনো ?
টিউব ধুঁকছে দশ আঙুলে ...
নিউটনের আপেল থেকে হাডসন অন রক্স ... কি নেই পকেটে ? আপনার মাথা
থেকে বেরিয়ে আসা শুঁড় সংসদের নিঃশ্বাস উগরে দিচ্ছে দুপুর স্যালাড । লালরোদের বিকেল
গড়ানো আপনার ফ্রি – স্টাইল
। সুড়ঙ্গের তলায় সামগ্রিক গোলাপের ভেলভেট ,
ঝোপ বুঝে কোপ । মোহোময় ফারকোটের ব্যালাড .
..
মেয়েটার অসহায় চশমা লটকে বাসের ফ্রেমে
মেয়েটার পোশাক আশাক বুদ্ধ জিশাস ঝুলছে আলনায়
মেয়েটার সালোয়ার ফুলকারি কুহুকেকা জিন্স
মেয়েটি বাইশ চিরকালীন আয়নায় ...
হিমঘরের মেয়েরা বুড়ো হয়না কোনোদিন ...
বার্গারে কামড় দিয়ে আপনি বললেন বিপ্লব .....
ম্যাকডোনাল্ডসে তৃপ্তির ঢেঁকুর দিল্লী মসনদ
২
আজ আহ্লাদ। ছুটে এসে জড়িয়ে। তোমায়।
শাখায় শাখায় ময়ুর। ঝিলিমিলি অভয়।
মিনারের আয়না। দ্যাখো তারও কেমন পেখম মেলার শখ।
শুনেছি,
খুব ভোরের দিকে নাকি কুসুম-কুসুম।
পথচারী পাখিরা জোট বেঁধে খেলা করে ডুয়ার্স-ডুয়ার্স।
এই সাত-সকাল। শীতকালের মতো নরম। এক দঙ্গল পশম।
ঝরিয়ে দিলো আকাশের নৈশ-পোশাক।বুকের ভেতর। পৃষ্ঠানতুন।
সূর্যের বারান্দা। বহুদিন-না-শোনা রবীন্দ্রসংগীত ধরলো এসে
হাত।
টের পেলাম। জন্মদিন আজ।
৩
মহিলা । চল্লিশ । বিবাহিতা ।
এক সন্তানের জননী । স্বামীর সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক।
চুলের রঙ বার্গেন্ডি । সম্প্রতি বয়-কাট করেছেন ।
না ,
সিঁথিতে সিঁদুর নেই । ভ্রূ 'র
মাঝখানের জায়গাটুকুও ফাঁকা
......সম্ভবত
ইনি ফেমিনিস্ট ।
তবে অন্যান্য নারীবাদী মহিলাদের মতো ইনি কাঠখোট্টা নন ।
খুশমিজাজ । স্বভাব রসিক । ছলকে ওঠা ঝর্ণার সাথে মিল আছে ।
হারিয়ে যাবার সময় পরণে ছিল কালো শাড়ি সোনালী বুটিদার
সমুদ্র ওলটপালট করে দেওয়া স্লিভলেস ব্লাউজ
দু ‘এক
কলি রবীন্দ্রসংগীত অসময়ে ফুটে ওঠা
চোখ ছাড়া মহিলার শরীরে আর কোনো গয়না নেই ...
৪
হে প্রভু !
তুমি যখনি বলেছ পুড়েছি নক্ষত্রে , ব্যাকুল
সিঁথিতে
চড়ুইভাতি জমেছে ,একশত
মাইল দাবাখেলা, সাদাকালো
খোপখোপ কার্বনকথা ,
শরীর থেকে উঠে এসে থাক এসব
আপাতত সামান্য মদ্যপান
সংক্ষেপে বলি ,
এখন বিশাখায় থাকি ,
ঝিনুকঠোঁটে
কতো যে গোপন দস্তাবেজ লুকোনো রোম্যান্টিক অভ্রজ্যোৎস্না
আমাকে ঠুকরে ঠুকরে খায় প্রতিদিন
মৃত্যুর আগে এবং পরে কতবার যে স্ত্রীপাখি হলাম আলিঙ্গনে
শুধু
তুমি চাইলে বলে
কোনো বোধিজন্ম নিশ্চিত কর্পূরে মেলে দেবে প্রাপ্তবয়স্ক
রেটিনা
ফাঁকফোকরে একটু আধটু ডুবোজাহাজ, নির্লজ্জ
পোশাকে স্বাতীনক্ষত্র
এর মধ্যে
হে প্রভু ! বলো তো আমি কোথায় আর কতোটুকু
বিশ্বাস হারাই না তবু,,শুয়ে
থাকি বিশাখায়
আরো আরো কোণঠাসা হয়েছে গোধূলি
হরিণঝংকার বুকে,ত্বকের
বাইরের মণ্ডপে লাগাতার
উৎসব বৃদ্ধ হতেছে একা একা
হে প্রভু ! আর কোনোদিন আমাকে ছুঁয়ো না
নাভির সূর্যাস্তে আমি বারবার নষ্ট হয়ে যাই !
৫
আমি দেখছি পালিশশিল্পীটিকে।
পৃথিবীর পা তার হাতে। পরম যত্নে প্রথম পাদুকাটি পালিশ
হচ্ছে।
কিছুদিন বাদে একে দেখতে পাওয়া যাবে মঞ্চের গুহায়, খনিজ কোটরে
বিদ্যুৎগতিতে।
উৎসবের সিংহদুয়ার,
রোশনাই গড়া ব্রাহ্মমুহূর্ত উঠবেন জ্বলে। বারোটি দুয়ার খুলে দেবে রম্ভাদরজা.
মুখে পুরষ্কারের দ্যুতি,
জোয়ারের লেখনীতে ভরপুর লেখাজ্বর। টইটম্বুর তার ঠোঁটের মেহগিনি।
টেলিভিশনের চোখে স্বপ্নের সানশাইন। হাত এখন পালিশ করছে
কবিতার পা।
নাট্য-ন্যাকাডেমি জুড়ে শুরু নামঘোষণার মহিমা, অনন্ত এক
প্রাইজ-জংশন।
পাদুকা-কালিটি অনূদিত হতেছেন তেরোটি ভাষার জড়োয়ায় ।