সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

কাজল দাস


কাজল দাস

আজন্মের আর্জি

তোমার সাথে বহু দিনের আড়ি
কেমন আছে তোমার স্বাধীন দেশ?
রক্তস্রোতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি
এখন আমার সয়ে যাওয়া অভ‍্যাস।

এখনও কি- ওখানে তেমনি যুদ্ধ হয়?
বুকের কোটরে গেঁথে যায়?  তলোয়ার
সিংহাসনের পৌরাণিক অভিনয়-এ?
দ্রৌপদী সাজে রাধা আর রাবেয়া?

আমার এখানে নীরব নিশিদিন
একাই আমি রাজার রাজা সাজি
আমার রাজ‍্যে অনন্ত পরিধির
নিজেই মেটাই আজন্মের আর্জি।

চুপচাপ থাকার এখন সময় নয়
চিহ্ন খোঁজারও সময় হয়েছে শেষ
রক্তের ঋণ মানুষের পরাজয়
যুদ্ধ করতে শেখেনি তোমার দেশ

ধানের গোলায় আগুন লাগার আগে
কোমর বাঁধার এটাই যোগ‍্য সময়,
বিবেক থাকলে জীবদ্দশায় জাগে
মৃত্যু সেতো সবার জন্য নয়।।





দেশ

দেশ বলতে নদীর পাশে গ্রাম
লোকে তাকে হিরুরডিহি বলে
দেশ বলতে একটুখানি থাম
পা দুটোকে ভিজিয়ে নি জলে
দেশ বলতে পলাশ ফুলের বনে
সারি সারি শাল শিমুলের গাছ
দেশ বলতে মাদল বাজা তালে
সাঁওতালিদের কোমর ধরে নাচ
দেশ বলতে দুয়ারসিনি-র বন
পাহাড় ঘেরা শাল-পিয়ালের ছায়া
বসন্তবৌরী ডাকছে সেথায় শোন
দেশ বলতে দুলদুলি আর টিয়া
দেশ বলতে সাতগুডুং- এর জল
সুবর্ণরেখার চোখ জুড়ানো মায়া,
ঢাল তলোয়ার সঙ্গে নিয়ে চল
মুখোশ পরে নাচছে পুরুলিয়া।

দেশ বলতে পাহাড় ঘেরা গ্রাম
বেলপাহারী নাম দিয়েছি তাকে
দেশ বলতে একটু না হয় থাম
কাঁকড়াঝোড় হাত বাড়িয়ে ডাকে
দেশ বলতে সোনাঝুরির বনে
লাল মাটিতে কপাল খানি থুই
দেশ বলতে কাঁসাই নদীর পাড়ে
টুসুকে দেখতে যাবি নাকি তুই?

দেশ বলতেই মনটা ভরে যায়
দেশ বলতেই চোখে আসে জল
মায়ের মতই সবার চেয়ে সেরা
মেয়ের মতোই অমূল্য সম্বল।
যে মাটিতে জন্ম আমার মাগো
সেই মাটিতেই মৃত্যু দিও তুমি
মরেও যেন শুনতে আমি পাই
-"সকল দেশের রানী,
         সে যে আমার জন্মভূমি।"




নতজানু হয়ে আছি

ছিঁড়ে রেখেছি আদিম সভ‍্যতা
দক্ষ মানব ওঠাও তোমার চোখ
কতদিন আর মেপে যাবে নাব‍্যতা
মিছে প্রবচন- সকলের ভালো হোক

দুলছে শরীর আঢাকা মত্ততায়
ছিঁড়ে নিচ্ছি চোখের শানিত কোপে
সাজিয়ে শহর কিনছি সভ‍্যতা
নখ দাঁত সব লুকিয়ে ফেলেছি ঝোপে

শব্দ গুলো শূন্যে-ই ভালো লাগে
সমাজতন্ত্রে রামরাজত্ব হোক
আমিও আছি সমান্তরাল ভাগে
আসলে আমি তোমাদের-ই তো লোক।





একটি নদীর নাম

হঠাৎ-ই, একদিন তুমি আসবে!

যখন আমি একচল্লিশ বছরের অনুতাপের রোদে-

নাক ডুবিয়ে পোড়া অতীতের ঘ্রাণ খুঁজছি।

ঠিক সেই মুহূর্তে-

তুমি আসবে,

একটা একটা করে একচল্লিশ টা দরজা খুলে

অবশেষে বলবে-

কয়দিন থাকতে এলাম তোর কাছে



এলে?

এতো দেরি কেন তবে?

দেখ, অঙ্ক কষতে কষতে আমার হাতে শূন্য বাদে

আর কিছুই নেই।



তৎক্ষণাৎ তুমি হাসতে হাসতে বলবে-

বোকা ছেলে-

আমার বুঝি আর কোনো কাজ নেই,

সাদা জামাটার বুক পকেটে এতো অন্ধকার

জমিয়ে রেখেছিস কেন?

এখন বুঝি কবিতা বাদ দিয়ে

ধূসর শব্দের ইতিহাস লিখতে ভালো লাগে?”



ওসব ছাড়,

নদীটার নাম কি রেখেছ?

যে নদীতে ভেসে যেতে যেতে বলেছিলে-

সময় মত খেয়ে নিস, বাবা

খুব রাগ হয় বুঝলে!

আমি এখন আর আগের মত নেই।

তুমি আমায় নিমপাতা দিয়ে ভাত মেখে দাও,

দেখ, তোমার ছেলে কত ভালো হয়ে গেছে।



তোমার একটু পায়ের কাছে বসি,

এখন তো আর সেভাবে তোমাকে পাইনে।

জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে,

কপালে হাতটা রাখ,

এতো কি কাজ তোমার বল'তো-

জ্বরে আমার গা পুড়ে যায়।

তিনশো ত্রিশ কোটি অভিমান

জট পাকিয়ে আছে,

একে একে সব খুলে দেব আজ

তোমার পায়ের কাছে।

আগে বল-

নদীটার নাম কি রেখেছ?





প্রেমের জন‍্যই আসবো না হয়

আমরা যখন প্রেমে পড়বো-
বয়স টয়স মানবো না আর, জাত-পাতও বাছবো না আর
তোমায় দেখেই প্রেমে পড়বো,
দুই বাড়িতেই অসম্মতি, থমকে সময়?
মানবোনা আর, দিব্যি দেবে, দিগ্গে যা
আমরা কিন্তু প্রেমে পড়ব'ই।

ছুট লাগাব তেপান্তরে, ছুটতে ছুটতে বেসামালই
নষ্ট হব, বেজাত হব,
আমরা কিন্তু থামবনা আর-
নদীর মত ছুট লাগাবো
হাতের কাছে জীবন খুঁজে-
দু'হাত দিয়ে রঙ মাখাব,
ছুটতে ছুটতে আবীর হয়ে-
তোমার বুকে ঘড় বাঁধব,
তোমার চোখে, তোমার মুখে তোমার ঠোঁটে ঘর বাঁধবো।
আমরা কিন্তু প্রেমে পড়ব'ই।

সুধরে নেওয়া জীবনটাকে
সাজিয়ে তেমন রাখবনা আর, তুমি আসবে
সঙ্গে যদি উস্কোখুস্কো সময় আসে?
তাকেই নেব আপন করে,
তোমার হাতে ঘন্টা খানেক ঠোঁট রাখবো,
তুমি কি খুব লজ্জা পাবে?
তুমিও হবে মুক্ত আকাশ, আমি হব প্রথম পুরুষ
মেঘের মতই উড়নচণ্ডী।
সময় যদি পাই বা না পাই
আমরা কিন্তু প্রেমে পড়ব'

একটু তোমায় ছুঁয়ে দেখবো,
না না একটুতে নয়, চোখ যেখানে পায়নে নাগাল-
তোমায় আমি দেখবো ছুঁয়ে।
ঝড় ওঠা কোনো সন্ধ্যে বেলায়
যখন আকাশ ক্লান্ত হবে-
একটুখানি কাছে যাব,
তুমিও খানিক আসবে কাছে,
সেই সুবাদে ধূলোর রাশি মাখবে তোমার চোখের ভাষা।
আমিও খানিক দেখবো চেয়ে তুমি কেমন বইতে পার,
না না একটুতে নয় আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে ধরার ইচ্ছেটাকে রাখবো ধরে সঙ্গোপনে।
আমরা তখন বৃষ্টি হওয়ার অপেক্ষাতে
ফুলের গন্ধ মাখব গায়ে,
প্রেমে পড়বো।

তোমায় নিয়ে, হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ তোমায় নিয়ে
পাহাড় চূড়ায় ঘড় বাঁধবো, ছনের চালা,
মাটিতে তার মাদুর পেতে বসবো দুজন
পিঠের সাথে পিঠ ঘেষিয়ে নানান সুরে গান গাইবো,
যে গান তোমার ভালো লাগে, সেই গানটাই গাইবো না হয়।
দু এক ফোঁটা শিশির মেখে আসবে আমার পরম চাওয়া,
হাওয়ার সাথে মিশিয়ে তাকে-
তোমার চুলে, তোমার ঠোঁটে তোমার গলায় মাখিয়ে দেব।
একটা ঘরে দুজন মিলে কাটিয়ে দেব
এ জীবনটা।

আবার যদি প্রেমে পড়ি!
এবার কিন্তু আমি নারী, তুমি হবে প্রথম পুরুষ
প্রথম তোমার দেখার দিনে,
আমি হব লাজুক মেয়ে, তুমি হবে
আমার মতই এখন যেমন উড়নচণ্ডী
নির্লজ্জ বেহায়া বড়, তাই হবে, তাইই হবে।
এবার আমি নারীই হব,
বুকের ভেতর তোমায় পাবার ইচ্ছেটাকে-
সামলে নেব, নারী হলেও ক্ষতি তো নেই,
আবার দুজন প্রেমে পড়বো।

আমি হব নরম নদী তুমি হবে মেঘলা আকাশ,
শুকিয়ে যাওয়া ইচ্ছেটাকে এক নিমিষে-
ভিজিয়ে দিয়ে বলবে- আমি এই এসেছি, বৃষ্টি হয়ে, দুকূল ছেপে।
তখন আমি তোমার কাছেই পরাজিত,
তোমার কাছেই দেব ধরা,
তুমি হবে প্রথম পুরুষ, তুমিই আমার বৃষ্টি মনে একপশলা।

অনেক খানি সময় গেল
এ জীবনটাও অপেক্ষাতে
এবার যদি প্রেমে, পড়ি না- পড়বই
তোমায় নিয়ে ভাববো না আর
তুমি নারী আমি পুরুষ, তুমি পুরুষ আমি নারী
সেসব কথা ভাববনা আর।
ভাবনা মিছেই, কি হব   তা সময় হলেই দেখা যাবে,
এ জীবনটা যেমন তেমন কেটে গেল-
কেটেই গেল অপেক্ষাতে।
এবার যদি........
না না ভাববো না আর-
শুধুই,- শুধুই তোমায় বাসবো ভালো,
ভালো বাসবো, ভালো বাসবো

এবার যদি...………





অরণ্য রোদন

আমার একটা রাত ছিল

তোমার হাতে হাত ছিল

তোমার চোখে চোখ রাখা অজানা এক সুখ ছিল

হয়তো-  তুমি  ভুল বুঝে

থাকলে শুধুই চোখ বুজে

আমার বুকে মুখ গুঁজে, তোমার চোখে জল ছিল



তোমার কথাই শেষ কথা

ভাবনা আমার অযথা-য়

 ইচ্ছে ডানায় যায় ভেসে,  যেখানে আকাশ ভুল ছিল

নষ্ট-        মনের বান্দায়

যেথায় ভাষা মুখ লুকায়

বেওয়ারিশ কোনো সমঝোতায়, তোমার চোখে জল ছিল



আমার ছিল-পথ চাওয়া

আপন মনে গান গাওয়া

তোমার হাসির মেঘ ছুঁয়ে,-    বৃষ্টি ভেজা সাঁঝ ছিল

বৃষ্টি-     সেতো বৃষ্টি নয়

বানভাসি এক পরাজয়

হারিয়ে যাওয়ার ভাবনাতে তোমার চোখে জল ছিল



তোমার ভীষন মান ছিল

অনেক জবাব ধুক ছিল

প্রশ্ন বৃথাই বুক জুড়ে-  তোমার তোমায় খুঁজছিল

হয়তো তুমি- কাঁদ ছিলে!

দু'হাত- দিয়ে ঢাক ছিলে

তোমার চোখের মন ছুঁয়ে আমার চোখের জল ছিল