সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

মৌ মধুবন্তী


মৌ মধুবন্তী

ভয় নেই  ভুতের গলি

ভূনা রক্তের ভিতর
ভাতের আঁশ কেমন
ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে,
এ কেমন দুনিয়াদারী,
দালান-কোঠা দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি,
মারিজুয়ানা লিগাল হলে
লোকে বলে, এয যাহ! গেলো তো নিষিদ্ধের
সব ল্যাঠা চুকে
এইসব কি আর মুখে রোচে?
অবৈধটা'র মৃত্যু হলে
বিবিধরতন হতাশকলে
আর চাপে না ভুতের নাম;
ঘরে ঘরে কুয়োর জলে ভেসে যাচ্ছে
গেরস্থালীর জোরে টানার হরিকাম।

মিস ইউনিভার্স ফিলিপিনো-ক্যাট্রিওনা গ্রে বলে, 
ঔষধরূপে ধরো ঠেঁসে বুকের ভেতর আলতো করে,
সিগারেট আর মদের মত,
পার্টি-সার্টি হলে পরে এক চিলিম
কি দুই চিলিমে ঝাঁকিয়ে নেবে সভ্যতাকে,
ফাঁকে ফাঁকে। 
মামা-মামী,
এমন কি সব
আদর্শ ভাবী,  এখন
গাঁজা বললে-
ঝলকে উঠে
বলকে পড়ে
ঢেউয়ের উপর
ঢেউ দোলায়ে বলে,
এই শুনছ, লিগাল-ইতো চলো না গো একটু টানি।
ইহা এখন পার্টি বাণী। 
প্রথম প্রথম সব কিছুতেই আরক থাকে
খুশীর খড়ম পায়ে থাকে ,
টেবিল ল্যাম্পিক হাসি থাকে।
শেয়ার বাজার চড়া থাকে।
বেগতিকের গতিক থাকে। 
রক্তের ভেতর শক্ত কিছু
আদেশ থাকে,
রক্ত যদি রক্তই থাকে-জলের দাগে বিবেক আঁকে। 
পৃথিবীটা ঝলসে ওঠে
বৈধতার মশাল হাতে
মানবিকতার সংজ্ঞা হাতে।
"মানুষ আমরা জ্ঞান হারাব না "-
বিষন্নতায় আঁতকে উঠে
হঠাত বাঁকে পথ হারাব না।  ভয় নেই ভুতের গলিতে।







ময়ুরকন্ঠী বেদরূপসী

কে লিখেছে প্রাচীন ভারত
তত্ত্বজ্ঞানের গ্রন্থকলি
আমি বলি, নারী! তুই কেনো এমন করে নারী হলি?
ধর্মপ্রাচীন, গ্রন্থপ্রাচীন
তবে ঈশ্বর কেন মুক, ভাষাহীন,
নৈর্ব্যক্তিক আর বেদের বেলে মাটির বাঁটে দক্ষিণাঞ্চল অর্বাচীন?
নারীর বোঁটা
ফোঁটা ফোঁটা
সংহিতা আর আরণ্যকে
তুমুল জয়ী
যোগ্যা ভোগ্যা সবাই তো দেয় ভাইয়ের ফোঁটা
সব ধর্মেই নারী হলো
গভীর খাতে উপত্যকা, পাহাড় তলে পাদটীকা।
গভীর ধ্যানে পুরুষ বসে
মাটির রসে নারীর রসে
সিক্ত হতে বাসন মাজে
মেজে ঘষে শক্ত হলে
ধ্যান প্রকাশে শাস্ত্র বলে
রক্ষাকবচ, মহাভারত অংগে ধরে ব্রহ্মাকে সে
স্রষ্টা বলে,
দিগ্বিদিক জ্ঞান হারালে
লোকে তাকে ঋষি বলে
মান্য করে গণ্য করে
নারী হলে, তখন তাকে গণিকা আর বেশ্যা বলে
অবজ্ঞা আর অবহেলার ডাল ছুড়ে দেয়।
উপনিষদ যজ্ঞ কাজে
হোক না নারী আজেবাজে
তবুও তারে
পুজার নামে
ভোগের কামে
সাজাও তাকে
      করাল সাজে।
নিত্য নতুন ফ্যাশান ডিজাইন বলিদানে
ব্রা, প্যান্টি, লিংগারী আর জী স্ট্রীং এর পন্য শপে
সাজাও তাকে জ্যান্ত কিংবা ম্যানিকেনে।
আস্তিক বলো
নাস্তিক বলো
জুম চাষাদের স্তরের বলো
শ্রেণীভাগের ধারায় বলো
রাতের আগেই জাতের প্রাতে মংগলগ্রহের বসত ভেদে
বেদবাক্য পড়ে পড়ে পাঠিয়ে দাও পাঁঠার ঘরে বলি দিতে।
উর্ধে কমল প্রস্ফুটিত
নিম্নে কেন এমন করে ফুলের পাপেট অর্থকরী
লুটিয়ে পড়ে রাতের কালে সংজ্ঞাহারা জলাশয়ে।
নারী তুই কেমন করে নারী হলি?








দু:শাসনের সেই সে সাহস

টুকরো সমাজ
ভুক্তভোগী
জনগণ আজ-
কোন দিকে ভাসাবে 
আভোগী জাহাজ... ?

দু:সহ জাত
নির্ঘুম রাত
বিমর্ষ ভাত
ফুটতে গিয়ে
পথ হারিয়ে
দাঁত হারিয়ে
পথের উপর
পড়ে আছে
হুমড়ি খেয়ে।
দু:শাসনে নিচ্ছে
খেয়ে, স্বপ্নছোঁয়া
আকাশ বাড়ি
নিরপেক্ষ বটতলাতে
বাজায় ওরা
মাটির হাড়ি
কি ভাংগবি নাকি ?
কে ভাংগবে স্যুপের ফাঁকি
কে ভাংগবে ধুপের কাঠি
কে ভাংগবে ভাংগা  গাঙের খোঁড়া খাড়ির সাজ?।।
কে ভাসাবে ঝুপ নদীতে
আভোগী জাহাজ?







রক্তাক্ত শাড়িপ্রান্তর

এই দ্যাখো আমার
শাড়ির পাড়ে কালো রঙ
চারিদিকে বিশ্বজিতের
কালোদিন;
স্বাধীনতা বর্ণহীন
মানুষগুলো ভাষাহীন
সুর্যেরাও ত্যাজবিহীন
দেশ জুড়ে শুধুই দেখি অবিচারের কালো থাবা।
বিচার বিভাগ পড়ছে দেখো রক্তে লেখা কাবিননামা।

ওদিকে নিরীহ মানুষগুলোকে
গুম করে ফেলার
হিংস্র-কুটিল, শলাপরামর্শ, হত্যা, খুনের ভুয়া আদর্শ
আর দেশ জুড়ে
কালো টাকার দুর্গন্ধ।
হিস্যা আদায় করেই সবাই দায়িত্বদ্বার করছে বন্ধ।

আমি শাড়ির পাড়ে
নাক রাখলেই
গন্ধ পাই অসহায় সব
তাঁতিদের সুতোর অসুখ,
না খাওয়া মুখ উপোশ থেকে বেরিয়ে আসা
উপবাসের পোড়া হাহাকার।
পুত্রহারা 'অপেক্ষা মা'
দুধের ভেতর হাত ডুবিয়ে
শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে ছিঁড়ে
লিখছে হাজার রকম  চিৎকার।

আমার এই
শাড়ির গুটিগুটি
সবুজ বুটি,
সবুজ বাংলার
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফসলের মাঠ।
স্বাধীনতার ডাকে সেদিন
আমিও তো পার হয়েছি
যুদ্ধবৃষ্টির পিছল চৌকাঠ।
সেদিন একদিন বাংলাদেশ
ছিল সবুজ মাঠের
দুর্নিবার
অবারিত খোলা প্রান্তর।
আজ দেখো!
কেমন গুটি মেরে গেছে ক্রমশ: বিন্দু বিন্দু।

আমার
শাড়ির জমিনে এখন রক্তের বন্যা।
 বিশ্বজিৎ,সাগর,রুণির অঝর রক্ত
এখন সারা বাংলার জমিন।
পতাকা এখন
সবুজের  মাঝে লাল সুর্য রইলো না।
হায়রে!
 আমার প্রিয় বাংলার জমিনে এখন লাল রক্তের ধারা আর
টুকরো টুকরো
সবুজ মাঠ।







আঙ্গুলে জলের দাগ

এই আংটিটা তোমার
না, এই আংটিটা আমার।
দশ আঙ্গুলে আটটা আংটি
সোনার মোহর বুঝি?
কিংবা স্বপ্নের পাথর বাটি
এই সময়টা তোমার না
এই সময়টা আমার
দশটা পাঁচটা কাজের
বাতিক বলে
নাম নিয়েছ
   সংগ্রামী আতিক
সব কিছুই ভুলিয়ে দেবে?
     কি সাংঘাতিক

মুক্তিযুদ্ধের লাল ফোটাটা
কপাল জুড়ে বসিয়ে রেখেছি
সাতচল্লিশ বছরের দু:খের প্রহরী
এক পা এগিয়ে দেখো
ঐ পতাকা উড়িয়ে মাথার খুলি।
বাংলা ভাষা আমাদের বুলি –
মনে রেখো এই কথাটা
এই আংটি তোমার না
এই দেশ তোমার না
এই ভাষা তোমার না
এই হৃদয় তোমার না
এই লাল রক্তে মাখানো
সবুজ শাড়ীটা তোমার না
এই অদ্ভুত স্বপ্নে দেখা দেশের মাটি তোমার না
এই পৃথিবীটাও এখন আর তোমার না।
বিশ্বায়নে এখন কেবল বাংলা ভাষা।
বাংলা ভাষা।