ইন্দ্রাণী
সরকার
রূপান্তর
দুর্বোধ্য কোনো বিষয়ের মত তোমায়
পড়তে চেয়েছি |
সকালের টুপটাপ ঝরে পড়া ফুল,
বিকেলে মুদে আসা পদ্মকোরক
রাতের রজনীগন্ধার আতর সুবাস
বিপন্ন কৃষকের অপারগ কৃষিকাজ আর
খেয়াপারাপার
সবই গতানুগতিকতার কোনো সুচারু
নিয়মে
অভিধান খুলে শব্দের পর শব্দ
খুঁজেছি তোমায় মানাতে
পরিশেষে চোখ বুজে নিজের মনে
প্রবেশ করে দেখি
রূপ থেকে রূপান্তর, দেশ থেকে
দেশান্তর,
গ্রাম থেকে শহর, সেখানে মানুষ
আছে, শুধু তুমি আমি নেই।
পর্ণকুটীর
পর্ণকুটীরে আসিয়া দাঁড়ায়েছ
কে বা তুমি পথিক ?
বারেক ফিরায়ে চাও
আজি এ কোজাগরী জ্যোৎস্নাপ্লাবিত
রাতে
তোমার পায়ের মৃদুপরশটুকু দিয়ে
আমায় পূর্ণ করো
তোমার সুমনে আমার এই কিঞ্চিৎ
হৃদয়ের
ছায়াটুকু এঁকে যাও
দেখো সুনীল আকাশ, আঁধারে
প্লাবিত,
পল্লবিত আম্রকানন, হাসিভরা মম
তন্ময় মুখশ্রী, কাজল পেতে
রেখেছি দু চোখে
একবার এই সুহাসিনী বদন
তুলিয়া নাও ও মোর বকুল ফুল
আমায় গৌরবান্বিত কর হে প্রভু !
শ্রীতে ভরে উঠুক আমার এ শ্রেয়সী
নন্দিত কানন।
অমানিশার অন্তে
অমানিশা কেটে যাক
মানুষের ভোর হোক জাগতিক স্বপ্নে।
কথাহীনতার রেশটুকু ধরে
মেলে দিক ময়ূর পেখম ।
আজ এই নিঃশব্দ ভোরের মিছিলে
প্রান্তর থেকে ভেসে আসুক বিজয়
সূচক হাসি।
পৃথিবীর সমস্ত কলুষ নিঃশেষিত হোক
তোমার ওই পদ্মসম করতলে,
আর জবাকুসুম পায়ের পাতায়।
তোমার ওই পবিত্র মুখ থেকে ধ্বনিত
হোক
দন্তমঞ্জনী সুরলহরী ও যমুনার
কলতান ।
নবজাগরণের রিক্ত প্রান্তরে
পুনর্বার ডাকুক মত্ত দাদুরী।
উপন্যাসের রাত্রি
কৃষ্ণপক্ষের রাতে বায়বীয় আঁধারে
শুনতে পাই বাতাসের শিরশির।
মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারাগুলি
ঘন আঁধারের বসনের আড়ালে
জড়িয়ে রেখেছে চোখের পাতা।
অনুরাগের মুর্চ্ছনায় বিবশ মনের
কথা
বিশ্বাসের রৌদ্রে পোড়া মনকে
ছুঁয়ে যায় ভ্রমরের গান নীলিমা।
অজস্র শিলালিপি ছড়ানো চোখের
সমান্তরাল মেঘে ঢাকা পড়ে যায়
নক্ষত্রদের উপন্যাসের রাত্রি।
দ্বিধাহীন সত্ত্বাগুলি আবার ফিরে
পায়
বিগত দিনের আশা ও সৌরভ।
শিলালিপি
ভালো আছি কথাটা বলা যত সোজা
আসলে থাকাটা ততই দুরূহ ;
আলোকবর্ষ মাড়িয়ে মৃত্যু উপত্যকা
ক্রমশ: ঘনীভূত হয়ে আসে।
অস্তিত্বহীনতার অস্তিত্বে রচিত
হয়
কুয়াশাঘন মিথ্যের বেড়াজাল ;
অবিন্যস্ত কিছু খোলা পাতায়
তাও মুদ্রিত থাকে প্রাচীন
শিলালিপি।