সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

পৃথা রায় চৌধুরী


পৃথা রায় চৌধুরী

দুর্মূল্য অন্ধকারবিলাসী

ছায়া খুঁজছি দেওয়ালে দেওয়ালে... নেই; বড়ো বেশি আলো।

এখন আমার অন্ধ হবার সময়।

অনেক অনেক দূর পর্যন্ত দেখে চোখদুটো নাগাড়ে দম টানছে,

তর্ক করছে নিজেদের মধ্যে, তারা অ্যাজমা আক্রান্ত, নাকি অ্যাস্থমায় ধরাশায়ী।


আমার বাগানে এই ঘোর বর্ষায় শুধু সাবাই ঘাস,

ঢেকে যাচ্ছি, ঢেকে যাচ্ছে আমার শঠতা

যা শুধু তুমি বোঝো...


অথবা ভুলে যাচ্ছি তোমার হইহই হাসির একদৃষ্টি!

কোকিলের সেই মাঠ এখন শুধু দাপিয়ে যায় জলপর্দার বর্গী।


আমার শাপিত রেটিনা কর্নিয়া আর

মগজের বেহায়া কোষেরা পরপর এঁকে ফেলে

যা যা দেখতে চাই না, সেসব। ঠিক সেই মুহূর্তে এসব বলে ফেলতে নেই।

বলে ফেললেই পাঁচিলের সীমানা...

বহুকাল যাওয়া হয় না কোনো রবিবারের কোলে।


খালি দোলনায় রেষারেষি থাকে না, যদিও সে আমার ভারি প্রিয়।

মন দিয়ে ঘৃণিত স্বাধীনতা ভোগ করি।

দিন দিন বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছি... এই রায়।

একটু লোডশেডিং হোক না, হোক না একটু... এই এতোটুকু নিকষ?

এতো আলো ভালো না।

সেই হ্যারিকেন আর লম্ফর আলো চাই, ফ্রিতে

ছায়া পাওয়া যায়, ইয়া বড়ো বড়ো, কাঁপা কাঁপা,

যেগুলো লুকিয়ে নিতো কেমন ভয়ভয় আদরে।


যে জিভে লেগে আছে আহা ষাট, সে নাকি অভিসম্পাতি?

দুধদুধ আদরের কালিপড়া রান্নাঘর নেই, নেই রাবণগুষ্ঠির হাঁ উনুন... মাটির।

চাই, সেসব চাই। অ্যাকশান রিপ্লে হবে কিভাবে এসব না পেলে?

কার বাবা যেন ওপাশে চীৎকার করে উঠেছে, 'তোর শরীরে এতো গরম?'

কার স্বামী যেন বলেছে,... কার বর যেন বলেছে,...


থাক থাক! এসব ক্ষতে বরং অ্যালোভেরা কাজ করে কিনা দেখা যাক।

শব্দের গোলকধাঁধায় নির্বোধ চাইছ আমায়, ফেলে দিচ্ছি বোধশক্তি, তাবৎ ইন্দ্রিয়,

তবু কানফাটানো ভেসে আসে 'নোংরা আঁস্তাকুড়!'

নাঃ! গাছের ছায়া হলে চলবে না, শীগগির সেই দত্যিদানো ছায়া এনে দাও।

মেয়েটা বড়ো ছ্যাঁচড়া, ভয়টয় কোথায় ফেলে এসেছে... ও এবার ভয় পেতে চায় একটু।








জলের নাম দিয়েছিলে?

জমাজলে মিশে যাচ্ছে একেকটা স্ট্রিটলাইট

আর তার পথ সরে যাচ্ছে দূর থেকে আরো দূর

মিলিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিসেতু।


ঘেঁটে ঘ হচ্ছে জলছবি আকাশ;

প্রশ্ন আসে, নারকেলতুলি, না সুপুরিতুলি?

ইদানীং কাজলের ওপর চিপকে বসেছে জোড়াকাঁচ।

অদ্ভুত পছন্দ কিন্তু! ডাইনিচোখ, তাও বাঁধন...


খিদে পেলে খাও,

খাও সাংকেতিক বাজের আছড়ে পড়ার উন্মত্ততায়

আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছে ভেজা পথঘাট বেমালুম রাহী

গর্জনের শান্তিতে ফালাফালা গোধূলির আমেজে পালাপালি

উদাত্ত কিছু জয়-শ্রীজাত...

উদাত্ত কিছু সে, স্তিমিত কিছু... কিছু।


ঘুরপথে সন্ধ্যেধারা বাঁচিয়ে পেরিয়ে যাওয়া অনেক জমা খোয়াব

কিভাবে যেন পায়ের পাতা তখনো শুকনো রাখা!







ধমনীর বর্ষণ টান

কচি কচি বৃষ্টি পরিস্কার করে দিচ্ছে জমানো রদ্দি। এই যে ধুয়ে যাচ্ছে চারিদিক, শত শত পাথরকুচিকষ্ট শেকড় ছড়িয়ে দিচ্ছে ভাঁজে ভাঁজে। মাঝে মাঝে বেশ রক্তবর্ণ ফুটে উঠছে কান্নাফুল।


বিষাদ লিখবো না ভেবেছি। ভেবেছি আমার রাস্তার মোড়ে বসে থাকবো অনন্তকাল। সবার আলাদা রাস্তা থাকে। তোমার রাস্তার সাথে বুড়িছোঁয়া খেলতে খেলতে ভুলে যেতে বসেছিলাম, গন্তব্যে ছাদ থাকেনা। যে যার মোড়ে পৌঁছে খালাস! খালাস?


আমি ভেসে থাকি এক মহাবুদবুদে, যেখানে মাটি, মাটির ঘরদালানছাদ, শখ করে দেওয়া ফাঁক ফোকরের রোদের বেড়া। বেড়ার ভেতর অনেক গল্প, ঝুটঝামেলা, তুলকালাম... তবু ডেকে ওঠা সেই আদরের ডাকে। তখনই ঝমঝম, তখনই অকালেই শরৎ বসন্ত আর তুমিআমি ঋতু।


সেদিন জানলাম, ভয়ানক প্রতিবাদী জানলায় দাঁড়িয়ে থাকি, ভেতরে শুধুই প্রেম নিয়ে। এতো প্রেম! জ্বালালে দেখছি। এ প্রেম তোমাকে দিতে দিতে, বেড়েই চলে।


বৃষ্টি এলে চারপাশ আয়না করে পারদ মাখিয়ে দেয় আমায়। আমার রাস্তার ঢাল বেয়ে স্বেচ্ছাচারী স্বৈরিনী জলের ঢল নেমে আসে মোড়ে... মাটি গুলে জন্মায় সাঁঝবাতি জন্মের পাঁক।


সন্ধ্যেভোর আসছে আবার...







মহা মৃত্যুঞ্জয়

ভয় পাই না, একরাশ চিন্তা সেই কারণেই...


গলগল অনর্গল বলে গেলাম

সেই ইটের দেওয়াল পুরনো বাড়ির স্বপ্ন

বর্ণনা করলাম কেমন সিঁড়ি নেমে গেছে

সরু সরু সিঁথি


আমার কবিতা লেখার খাতায়,

তোমার আমাকে দেওয়া ডায়েরির পাতায়, এঁকে বোঝালে

সে তোমার বাড়ি।


জানালাম, সে তো পুরো মরা পাড়া...তুমি চুপ!

হাঁপালাম, রাস্তায় ভুত আলো, ভেতরবাড়ি ভুত আঁধার

... তুমি চুপ।


আর সেই লোকটা কি জানি বেচতে এসে সটান উঠে এলো

আমার পুচকিবেলার তেতলায়

তোমার মিলিটারি নাইফের হাতল ধরে

চকচকে ব্লেডে মাখিয়ে নিয়ে গেল আমাকে


তুমি নিশ্চিন্তে আমার ছায়া আঁকড়ে ঘুমিয়ে পড়লে

হাতে কোল্ট পাইথন পয়েন্ট থ্রি ফিফটিসেভেন ম্যাগনাম।







চান্দ্র চক্র

চট্টোপাধ্যায়দের কার্নিশে সন্ধ্যের বটপাতা।

সেখানে আটকে আছে ছোটো মেয়ের জন্মদিনচাঁদ।

আলোর চেয়ে ভবিষ্যৎ কলঙ্ক বেশি বলে

জন্মগত থেমে আছে পায়েসের আনাগোনা।


বিপ্রবর্ণা চাঁদ, তুমি ঘামছো?

মুখ লুকিও না, তোমার এখন চাঁদমুখ

সে অন্য কোনো দিন ছিলো

যখন তোমার কুৎসিত রূপেও গোত্রান্তরে বাধা হয়নি

সুলগ্না চাঁদ, তুমি গাইছো

আসন্ন অনাবৃষ্টির আখ্যান?


বিদ্যেবতী কামিনী জানে না তন্ত্রমন্ত্র, তবু ধেয়ে আসে দশমহাবিদ্যা।

নীলা হতে নেই, মানুষ নীলা হলে তাকে পরখ করা দায়।

অথবা, সরাসরি তাকে পরে ফেলে সামান্যতম চোটের দায়ী করা...


সেই কোন বাঁকে হরপ্পার ছায়ায় রেবতী নক্ষত্র চাঁদ

নীতিগাছ থেকে ঝরে পড়া গুচ্ছনীতিতে মাখামাখি

পিষে দিতে পারো বাঁ পায়ের ঔদ্ধত্যে

স্তম্ভন সে বোঝে আপন গরিমায় বেলাশুরুর মুখোমুখি

তার সাহস দেখেছো, মার্বেলমসৃণ সততাকে জড়িয়েছো

মিথ্যাচারী বলেছো যতবার

সাগর মহাসাগর পেরিয়ে লাল ম্যাপেল হয়ে উঠেছে ততবার

পাথুরে মেয়ে জন্মচাঁদ।


গোবিন্দভোগের বদলে ভালো চাল বলতে হয়, পাখি পড়ে নিয়েছে সে