নুরুন্নাহার
শিরীন
শীতকাব্যজালে জড়িয়ে
আছি
এক
সে এক মাঘের দিন ছিলো।
শহরে রোদেলা ছায়া ঘুমকাতুরে দুপুর ছিলো।
কুয়াশাভেজা পাড়ায় ঝরে পড়ার কবিতাগুলো
লেখা না লেখার ঘোরে মুগ্ধচিত্ত ছুঁলো।
অমনি আকাশতল একাকার উড়োধূলো
ওড়ালো মাঠের পানে অলিখিত গানগুলো।
ভুলে কী গিয়েছো কত সহজ জীবন ছিলো !
ঘুমপাড়ানি মাতৃক্রোড় কী মধুর ছিলো !
পাড়ার সখীরা মিলে রুমালচুরির খেলা -
খেলেছি তুমুল রঙে রঙিন বিকেল বেলা।
চিতইভাপার ধুম সে এক হিমেল কাল -
না ভোলা পড়শিদের মায়ামুখ চিরকাল।
রেখেছি আদরগুলো যেন সে গরম শাল -
পাঁজরের কড়ানাড়া শুনি উথালপাথাল।
দুই
আমাদের শহরটা খুব ছিমছাম ছিলো।
সবার সাথেই বেশ পরম আত্মীয়তা ছিলো।
আদানপ্রদানে বেশ প্রেমময় সম্প্রীতি ছিলো।
এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়ানোর
সম্পর্ক ছিলো।
এখন কেমন অনুদার অপরিচিত পড়শির
মুখ।
শীতল সকাল দেখে অদেখায় খুঁজি সুখ।
আমরা কত কী ভুলি অথচ তথাপি কিছু আছে।
হারানো সবকিছুর উর্ধ্বে সে আমাদের কাছে।
তারেই আজও গাছ যেমন জানলাপাশে -
ছায়াময় অকাতরে যাপিত জীবনে আসে -
পুরাতনীর মতোন তারে বাজাই হৃদবাতাসে।
আজও উধাও হয়ে আবার গভীর সুর আসে।
একটুকু সে আসন পেতে তুমুল সবুজ ঘাসে -
কুয়াশাগান গাইতে বসে শিশুর মতোন হাসে।
তিন
সেসব স্বপ্নমাখা গাছপাতাদের কাছে -
তোমারআমার শত কালের শতেক ঋণ আছে।
ষড়ঋতুর সে এক
সূর্যচন্দ্রমুখী দেশ -
সে ছাড়া স্বপ্ন খুব এতিম ছন্নছাড়া শেষ।
এইতো একটু আগে তোমারআমার পাশে -
শিকড়জাগা জবার রেণু উড়েছে শীতবাতাসে -
তার কথাটি লিখতে গিয়ে লিখেছি বাংলাদেশ।
সতত সে প্রিয়তম প্রেমিক বাংলাদেশ।
যখনই দূরাশায় দূরবর্তী নোঙরে ডিঙি ভরা -
সোনালি ফসল দোলে তখনই মনে পড়া -
সে আমাদের আকুল করা গ্রীষ্মবর্ষাশীত।
সে আমাদের প্রথম রোমাঞ্চ সঙ্গীত।
হয়তো ধারণাতীত সে অসীম আবাহনী।
আলোর উৎস হতে ভেসে আসা আগমনী।
চার
সে যদি না ঋতুমতী অপার আকাশতল -
তবে আর কারে বলি আহা সে ছিলো অতল।
ফেলে আসা সে অপার হয়ে জেগে আছে -
সাগরসেচা আগুন হয়ে এক জীবনের কাছে।
পাতাল যেমন জ্বলে জলের অতলরেখা -
হতে জোয়ারভাটার দেশে আমাদের দেখা -
অনেকটাই তেমন এই আছি এই নেই করে
অকস্মাৎ আবার টুপ করে খসে পড়া ঝড়ে।
তখন কী আর তত শীতার্ত সন্দেহ মনে পড়ে?
তখন কী আর শত জাগ্রত ঢেউ মনে পড়ে?
কত যে কেটেছে শীতকাল উষ্ণতাহীন জলে -
কত যে কেটেছে গ্রীষ্মবর্ষা মৃত কলরোলে -
সেসব কে রাখে তুলে গান ও কবিতা করে?
সেসব কে রাখে ভুলে শিল্পিত ছবি করে?
পাঁচ
কী যেন আলোয় পোড়ে কী যেন
প্রথমালোক।
তার কিঞ্চিৎ পাঠক পড়ে কিঞ্চিত
প্রাচীনশোক।
তারও বিস্তর ব্যখ্যা অতঃপর
জর্জরিত।
ঝিঁঝিঁময় শিখাতলে ইতিহাসরক্ত
মর্মরিত।
বুঝি বা খানিক পরে পাশে বসবে
কবিতা।
বুঝি বা কবিতাপাশে নদীগুলো
ধূলিকার মিতা।
বুঝি ছমছমে পায়ে নাচবে জোছনাসই।
বুঝি ছায়াঘুমঘোরে পোড়ামন থইথই।
তখন জখম থেকে মৃত্যুসুদ্ধো মেনে
নেবে হার।
তারই জন্য অশ্রুঅপহ্নবে জ্বেলেছি
ভঙুর হাড়।
যেন কোনও হারই হার নয় আশাও হয়তো
সবে
জ্বলতে শিখেছে আহ অনন্ত ছুঁয়েছে
কে কবে
তারচে' এইতো এই
শিখাজলে দেখা হলো।
জ্বলে উঠলো সেই সলতে পোড়ানো
খেলাধূলো।
সে তবে জ্বলুক।
সে তবে সকল ফেলে ষড়শ্বৈর্যে
জ্বলুক।
সে তবে চোখের অধিক দেখার কথাটি
বলুক।
সে তবে ছায়ার অধিক মায়ার কথাটি
বলুক।
না থাকার কালাকাল ছুঁয়ে থাক
দেশকাল।
না থাকার মায়াজাল ছুঁয়ে থাক
শীতকাল।