বনশ্রী
রায় দাস
ভাষা স্রোতে ভেসে
মায়ের বালুচরি ঘোমটায় আকাশ
নেমেছে
চাঁদ- স্রোতে ভেসে গেছে আরণ্যক
পাহাড় ।
বরফ চূড়ায় ধ্যানের নীরবতা দিয়েছেন
আমার পিতা এবং পূর্বপুরুষ।
কতবার মায়ের বুকে সূর্যোদয়ের
নম্র সকাল দেখেছি ।
কুয়াশার সংকেত মুছে শক্ত
শিরদাঁড়ায়
আগ্নেয়গিরি হয়ে গেলেন আমার বাবা
।
আদি জননি আমার, এই মায়ের নাম ভাষা-
নদী ।
এ মায়ের দুধের ধারায় ভাসিয়েছি
শব্দ- ধ্বনি স্রোত,
ভেসে যাচ্ছে অক্ষর ফুল দেশ থেকে
দেশান্তরে ।
আমার মা আমাকে হাতে ধরে
শিখিয়েছেন
অন্য মাকে চিনতে, জানতে ।
শপথ-পত্র
তোমার কাছে কিছু চাইবার নেই
অনন্ত শূন্যতার মুখোমুখি সংঘর্ষে
রক্ত ঝরে বারংবার ।
প্রশ্নের কাছে নিজেকে ফেরাই
উত্তর আসে পারদের ওঠা নামায়।
কবিতা লিখে ছিঁড়ে ফেলা,
নির্ঘুম রাতের বিষণ্ণতা ,
কিংবা ভগ্ন সেতুর মাঝ বরাবর
চোখের কাজল মোছা।
সমস্ত বন্ধক রেখেছি একটি শব্দের
কাছে ।
তৃষ্ণার্ত আড়াল পেতেছে অস্থিরতা
শুধু ধ্বনি-ময় ঘড়ির ঘন্টা
এভাবে নিরলস জানলার রোদ গড়িয়ে
পড়ে ।
হৃদয়ে চাষ করি সংসার ,রান্না-বাড়ি
দীপ জ্বালাই পাঁজর দুমড়ে ।
নিবিড় স্নানে তুমি দেখেছো
কৃষ্ণবর্ণ মেঘ
অথচ ভালোবাসার শুশ্রূষায় তুমি
রেখে গেছ আমৃত্যু শপথ-পত্র।
মোহজাল
কলম ও কালির নির্জনতা চুঁইয়ে
রক্ত বৃষ্টি ,
না পাওয়ার তরঙ্গ ঢেউ ভেঙ্গে
ভেঙ্গে
আছড়ে পড়ছে কালো স্ক্রিনের
সিম্ফনিতে।
কালের শকুনি যেন ঘ্যানঘেনে
ক্রমশ মায়াজাল বিস্তার করে চলেছে
।
দুর্যোধনের দাম্ভিক চোখে
আর পৃথিবীর ধ্বংস তরান্বিত করছে
জালের ফাঁসে আটকে নাভিশ্বাস
সর্বত্র ।
বিষণ্ণ- হাওয়া
কলম ছোঁয়ার আগে বুক খুলে রাখে
সাদা পাতা
এদের কোন জাত নেই ,
অভিমান-বন্ধন থেকে সৃষ্টি করে
মুক্তির আকাশ ,ডানায় লিখে
রাখে স্বাধীনতা ।
এই যে খয়েরি ঘাসে ,উন্মুক্ত
চাঁদের ঝালর
বেদনা ভাসায় খোলা মেঘের খাতায়
বিপ্রতীপ ভাষা গুমরে গুমরে
বৃষ্টি নামায় অঝোর ।
মন ও মায়া সংলাপ আওড়ে চলে বেঘোরে
।
শাপলার বন ঘন হয়ে এলে সাধের
পেখমে প্রেম
ধরে ময়ূর ,ময়ূরাক্ষী
তরী ভাসায় বুকে ,
আকণ্ঠ নিমজ্জনের পর প্রশ্ন ওঠে
চতুরতা ঘিরে ।
একক আমি ,নিবিষ্ট শৈশব
আঁকি বুকের খাঁচায়।
সুযোগ সন্ধানী
প্রতি ভোরে এখনও মানুষ খুঁজতে
যাই
রূপনারায়ণ পারে নিম, নিসিন্দা,সর্পগন্ধার
পাতা সরিয়ে ,
আঁকড়ে ধরি পরপার বন্ধু তোমায়।
ভাঙা হৃদয়ে ফিরে আসি জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে ।
সুখ- বাগানের গোলাপ ছুঁয়ে
ভাস্কর্যের অনুধ্যান ।
অনেক শামুক উঠে আসে ঘরে,
নিরীহ প্রাণ ভেবে কেউ সুযোগের
অপেক্ষায় ,
কেউ নীল বুক ঠোকাঠুকি করে ।