শীলা বিশ্বাস
দৃশ্যান্তর
আলিপুর চিড়িয়াখানায় জিরাফের সঙ্গম দৃশ্যে কেন যে সেদিন চোখ
নামিয়ে নিই নি !
হাতে ধরা ক্যামেরা তখন ভিডিও মোডে সুইচড অন
গাছে বসা পাখিটির ছবি তুলতে গিয়ে ফ্রেমে এসে গিয়েছিল
মোহরকুঞ্জে বসে থাকা
স্কুল ইউনিফর্মে
ছেলে ও মেয়েটির চুম্বন দৃশ্য
এ সমস্ত ছবিগুলো এখন নদীতে ভাসে; নদীর বুকে
কোজাগরী চাঁদ জেগে উঠলে
জোছনার মূর্ছনা
মাখি সারা শরীর জুড়ে
চুল,
কানের লতি, গ্রীবা
বেয়ে স্রোত নেমে গেলে চমকে উঠে তোমাকে খুঁজি
জলে
জ্যোৎস্নামূর্ছনা তখন ইমন ছাড়িয়ে কাফিতে
উৎস খুঁজতে অপেক্ষার সিলমোহর ভেঙে শাড়ি ভিজিয়ে নেমে যাই
নদীর কোমর জলে
পায়ের নখ হয়ে জ্যোৎস্না বেরিয়ে মিশে যায় স্রোতে
কে যেন চিৎকার করে কাট বলে উঠলে নদী ও চাঁদ দৃশ্যান্তরে চলে যায় অনিমিখ
ভেজা ছবিগুলো সূর্যোদয়ের আগেই হারিয়ে ফেলি
তবু কেন জানি না ক্যামেরা সুইচড অফ করতে ভুল হয়ে যায় বারে
বারে......।
উপজীব্য
আমার কোনও গল্প বহুদিন তোমাকে ছোঁয় না
অসম্পূর্ণ পড়ে আছে নীল মানুষের গল্প
লাঞ্চটাইমের ডেকার্স লেন, চলন্ত ট্রাম,
কলেজ স্ট্রীটের পুরানো বইয়ের গন্ধ,
কফি হাউসের ভিড়,
তুমি নেই কোথাও !
দোকানের ছিটকাপড় থেকে বুদ্ধ হাসলেন
চৈএসেলে ফাঁকা পকেটে অজাতশত্রু
ফুটপাথে রেলিঙে বাধা রঙ চটা কাপড়ের দোলনায় বুদ্ধ কাঁদেন
কোলে নিয়ে কে কান্না থামাবে ?
কোনও মহামায়া নেই কোথাও !
বৈরাগ্য নয় ,
কৃচ্ছসাধনও নয় ,
বোধির আশ্চর্য বৃক্ষ থেকে টুপটাপ ঝরে পড়বে তুমি
আমার গল্পের প্রধান উপজীব্য হয়ে
আমি সুজাতার পরমান্ন হব ।
কান্না ধোয়ায়
যেভাবে কোলের উষ্ণতাটুকু শুষে নিয়ে পোষা বিড়াল
বুঝে নেয় পশম আদর
যেভাবে জলের অতল গভীর থেকে প্লবতা ভাঙিয়ে
ভেসে থাকা জলের উপর
যেভাবে ছাদ ভেঙে ভাবি পেয়েছি অনন্ত নীল আকাশ
ঘরদুয়ার ভুলে যাওয়া
যেভাবে খরা কঠিন বুকে গোলাভরা শস্য পুষে রাখে
ধানক্ষেত হলুদ ছোঁয়ায়
সেভাবে তোমার থেকে তোমাকে ছেঁকে ছেনে খুঁজে নিই
নিবিড় প্রেম কান্না ধোয়ায়
যাওয়ার পর
প্রত্যাশা ছিল একদিন শুভসন্ধ্যা ভেসে উঠবে আলোকিত জলে
এখন ভেসে ওঠে শুধুই নিকষ অন্ধকার
বন্ধুত্বের কখনও
কোনো বয়স হয় না একথা তুমি বোলতে
তুমি চলে গেলে
বন্ধুত্ব বয়সী হয়ে উঠল
নৈঃশব্দে পরিযায়ী প্রেম ঘিরে ছিল কবিতার মধুচন্দ্রিমায়
এখন উচ্চকিত বিরহ নামে নিঃসঙ্গ কবিতার শরীরে
অধরা
ছবির ভেতরে ছবিটি
অগোচরে থেকে যায়
যেমন হাসির ভেতর
সারকাজম
গল্পের ভেতরে গল্পটি অজানাই থেকে যায়
কতবার তুমি রক্তাক্ত ও জখম
আত্মজীবনীতে অধরা অলিখিত সব সত্যি
যেন প্রেমিক ছিলেনা একরত্তি