সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

জাকিয়া এস আরা


জাকিয়া এস আরা

কঙ্কাবতী উপাখ্যান

চেতনার দ্বীপে যার অবস্থান
কঙ্কাবতী, তাকে ভোলাবে কীভাবে?
লুকানো কোথায় কার প্রাণ, সব
নখদর্পণে তার , রহস্যজাল তোমার
কখন  পুড়ে ছাড়খার!  রুপবতী
রেখেছ কী খোঁজ তার?
বোকার ঢেঁকিতে রাখলে পা,
ধান আর যায়না ভাঙা, যায়না ভাঙা,
শত্রুর বিষদাঁত, কমেনা তেজ,
ভাসেনা শূন্যে  শত্রুর বিশ্বাসের বুঁদবুদ!

      



আশংকার বালুচর

জীবন এখন হামাগুড়ি দেয়, আশংকার বালুচরে,
কোথাও কোনো বিলাপ নেই, কিম্বা প্রতিবাদের ঢল,
যে যার মতো চলছে, বিচ্ছিন্ন কিছু ছোট ছোট দ্বীপ,
অসুমিত আলোহীন দ্বীপগুলো,
যেখানে কোনো জাহাজ নোঙ্গর করেনা,
তারা ভুলে গেছে ভোজ অথবা উপবাসের কথা

কিছু প্রাচীণ কংকাল অট্টহাস্য করে কেবল!
চারদিকে বিষকাঁকড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
তবুও বেঁহুশ তারা নালিশ করেনা !

যে যার মতো চলছে বিচ্ছিন্ন কিছু ছোট ছোট দ্বীপ।


       


বাস্তুহারার বয়ান

উদ্বাস্তু পদ্যের মতো হামলে পড়েছ,
বিস্তার করছ সভত্যার জড়ায়ু,
মানব দেহের তাপ বাড়াচ্ছ আর
সেধে সেধে বিজ্ঞানের রঙ ঢঙ
দেখো, পজিটিভ। আর নেগেটিভ
দুটো অংশে নিজেকে বিভক্ত করে,
সার্কাসের দর্শক সাজিয়েছ পৃথিবীকে
অন্য গ্রহগুলো হতভম্ব !
সভত্যাতো সাতপাঁক ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত,
এখন সে গর্দভ সাজতে চায়না, অথচ,
তুমি পা ছড়িয়ে বসে আছ
যেন  এক  অবুঝ বালক !
যে নাকি বায়না ধরেছে যে ,
অসময়ে  বৃষ্টি  হোক !





কিশলয় আসুক

চেতনে, অবচেতনে মোমবাতির দুধার জ্বালাই
মনের লোডশেডিং  বড়োই  যাতনাসম!
যুগের ওপাড়ের ডাক আজ অচলায়তন
কোনও এক ফোনকলের অপেক্ষায়, দিন কেটে যায়,
যদিও জানি, এ মনের খেলাঘর  বালির বাঁধ!
এখন ঝরাপাতার সুরে গলা মেলাই,
সবুজাভ কিশলয় আসুক,তখন আমি
মাটির সনে হাত মেলাবো,
মুঠোফোনের  পর্দায়  আর চোখ রাখব না!





উত্তর খুঁজছি

সুন্দর, শাশ্বত মুহর্ত,
সময় পারেনা ধরে রাখতে!
জল পড়ে, পাতা নড়ে
ছায়া স্থির, মৃত্যু  স্থির,
কোজাগরী দিঘীর জলে
দাঁড়িয়ে আছে ঢায় !

স্বপ্ন হাত ফসকে উধাও
আমি কেবল বোকার মতো
চোখ বুঁজে ধাঁধার  উত্তর
খুঁজছি----- খুঁজছি ------ !

                       



আসলে কিছুই জানিনা

যাচ্ছি,  যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি,
আসলে আমি নিজেও জানিনা !
এলেবেলে লিখতে লিখতে
বয়স সমূদ্র সমান।
বাবার সাইকেল, মার গল্পের বই
এখন জাদুঘর!
চাপিলা মাছে যেমন ইলশা স্বাদ!
ডুমুরের বাগান কেবল স্বপ্নে দেখি
,নীল অপরাজিতা নিজেই নীল বিষে!
তার কাছে আর কখনো পারব না যেতে
ভূবন ভরা ঈর্ষার আলো
পথে পথে ব্যারিকেড
বাহারি মুখোশ ভাসমান আকাশে
আমি কী তবে সাঁতার কাটব আকাশে?

যাচ্ছি, যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি
আসলে আমি নিজেও জানিনা !





কবিতা কোথায় তুমি

কবিতা কোথায় তুমি?
শব্দপ্রেমিক খুঁজছি আমি
একি!  শব্দরা সব কফিন!
কেউ জানো কি? 
কফিন হলো কখন?
চারিদিকেই লাশের উৎসব,
শব্দলাশ!

রুপবাহারে রঞ্জিত রমণী
চেনা চেনা লাগে,কিন্তু
আমাকে ওরা না চেনার ভান করে !
তরুণ কবির অমেয় বন্দনা মাইক্রোফোনে !

কবিতা কি অধরা মাধুরী
না সরব বুলি?
কবি কি ঈশ্বর
নাকি মিথ আর মিথ্যার আশ্রয়ে
বানিয়ে বানিয়ে কাব্য করে!





কেবল দৌড়

মিথ এবং মিথ্যার সহবাসে
সবুজ হচ্ছে জড়তার জমি,
কোনটা ধ্রুবক,কোনটা সহগ,
জানার জন্য অপেক্ষা  নেই
কারো, দৌড়, কেবল দৌড়,
রুদ্ধশ্বাস  দৌড় !

গোলাপ ফুটুক না ফুটুক,
যেকোনো পুষ্প হলেই হলো,
ত্রিশে একমাস  হয়
আবার  একত্রিশেও হয়,
মুদ্রার কোনো জাতকুল থাকেনা,
আগুন আর জলের এখন
একই বাজার দর!




আশা

মনে করো, কোনো এক জনমে আমি ছিলাম
মৎস্যকন্যা, আর তুমি ছিলে এলিয়েন,
জলজগুল্ম ছিল আমার খাবার আর সূর্যালোক
ছিল তোমার খাবার,তুমি সপ্তাকাশ থেকে আমাকে দেখতে মুগ্ধচোখে! তখন আমি
ছুঁড়ে দিতাম সুস্মিত হাসি তোমার দিকে, লেজ
নাচিয়ে, নাচিয়ে, বিশালাক্ষী হিংসায় পুড়ে যেত!
সেলাকাই'র চোখ হতো আগুনবরণ!

এক সুনামীতে, আমি অনেক অনেক গভীরে,
তলিয়ে গেলাম,  আজ অবধি তোমায় খুঁজে পাইনি, হয়তো কোনোদিন প্রখর
সূর্যালোকে  খুঁজে পাব তোমাকে!





স্বপ্ন
_------
আমি হাঁটছি ধীরজে দ্রাক্ষাবনে,চারদিকে বাতাসের মধুবৎ সিমফনি,
আজ কোনো ক্ষুধা নেই, পান তেষ্টা নেই,পাখিদের  কুজনে মনের নদী উচ্ছল হয়।

ওই দূরে বোধকরি,ঈশ্বর আবাস, আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ, ঘুমপরীর করুণ ভায়োলিন,আবেশে চোখ মুঁদে আসে, ওগো আকাশ, আমাকে ফেলে মেঘের কাছে চলে যেওনা,জানো তো রোদ আমার প্রমিক ছিল!  সে অনেক কথা গো! দেখো, আমি আনন্দলোকের চিঠি পড়ছি,কাল
আলিফ লায়লার শেহজাদা আমার শিথানের পাশে আসবেন!