শুভঙ্কর
দাস
দরজা
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছ,
না, দরজা তোমার
কাছে নীরবে
জলশূন্য নদীর মতো দাঁড়িয়েছে
সেই ভাবনায় প্রবেশপথে সুদীর্ঘ
লাইন,
লোহা-তামা-সোনার মুকুট ছাড়া
কিছুই দেখা যায় না!
মাতৃগর্ভ আসলে এক অলৌকিক গুহা
যার জলের আকাশ আছে,
আর মৃত্যুকে জয় করার একমাত্র
দরজা
যা স্বর্গেও নেই।
জানালা
অপু সেই যে তাকিয়ে ছিল,
রেললাইনের দিকে
তারপর কতসহস্র বিভূতি দেখল
গ্রাম-গঞ্জ-পাড়া,
হাইওয়ে ধানের চটে-মাদুরে
যত উঠেছে সাড়া,
দিশেহারা একটি ডানা
কখন দুর্গার মতো শরীর ধরে
মহানগর-রাজধানী ছাড়িয়ে চলে গেছে
অপুও জানে না!
রেললাইন জানে না!
শুধু সেই পাঠক জানে,
যে পথের পাঁচালি পড়বে বলে,
সবকিছু ত্যাগ করেছে।
চৌকাঠ
লক্ষ্মীর পা আঁকা
চৌকাঠে মাথা নত করে প্রণাম করলেই,
সমগ্র গৃহটি মাতা রূপ ধারণ করে
তারপর
তুলসিমঞ্চ পেরিয়ে
হাঁটতে থাকে সেই বয়সটার সন্ধানে,
যখন পায়ে কোনো শিকল ছিল না
সহজেই অনেক শিকল ভাঙা যেত!
বারান্দা
প্রত্যেক দুঃখী মানুষের বুকে
বারান্দা থাকে
যদি না থাকত,
তাহলে অহল্যাচরিত
বা উইয়ের ঢিবির গল্প
রক্তমাংসে লিখতে হত!
কুরুক্ষেত্র নিজের হাতের মধ্যে
গোপন করে
শান্তির জল ছড়িয়ে দিচ্ছে
পিতা এবং পিতার আত্মীয়স্বজন।
মাতা সব লাশ গুণে
বৃক্ষের নীচে ঢেকে রেখেছে,
শিকড়ে ঢেলেছে চোখের জল
যত জন্ম যাক,
সত্যিকারের পিতা-মাতা বা
প্রেমিক-প্রেমিকা হতে হলে
বারান্দা চাই,বারান্দা হয়ে
ওঠা চাই
সিঁড়ি
এক জন্ম নিয়ে যতদূর যাওয়া যায়
তার বেশি যেতে হলে
সিঁড়ি লাগে!
সেই সিঁড়ির সন্ধানে এক পৃথিবী
ভালোবাসা আর মন্দবাসা ছুটছে,
মাতৃগর্ভের প্রাণের মতো!
এই তো দুঃখ শুরু,তাহলে
তোমার মা নেই,তুমি অনাথ
এই আনন্দ হাত,
তাহলে তোমার মা সিঁড়ি হয়েছে,
তুমি জগৎ
তোমার এক জন্মে সহস্র জন্ম
বরাত।