তৈমুর
খান
ধর্মের কল
কোথায় বাতাস বইছে ?
ধর্মের কল নড়ছে না আর
দেবতারা সব ভাড়াটে খুনি
খুন করার আগে
ধর্ষণটাও সেরে নিচ্ছে ।
লোভে আর পাপ নেই
শহরে মিছিল আছে
মোমবাতিও বিক্রি হচ্ছে ভালো
সংযমকে ফাঁসি দিয়ে আজ
সুযোগের ঘরে চলো।
রাষ্ট্র আইন গরু-বাছুর হাহাকার
কন্যাশ্রী গোর্খাল্যান্ড আর যা দরকার
পথপ্রান্তে পসরা নিয়ে
বসে আছে কাশ্মীর
বল বীর, বল উন্নত শির
কার জেহাদ ?
উট চলেছে সারি সারি
রামনবমী রামনবমী—
আমরা সবাই অস্ত্রধারী
কথা যোগাও, ভাষণ আসছে
হাততালির পিঠে হাততালি
ঠাকুর আসছে , ঠাকুর যাচ্ছে
সব ঠাকুরের বাপের বাড়ি কুমোরটুলি ।
বাঁশ ফলছে , বাঁশিও ফলছে
সুরের পাহাড় , দূরের আলো
গাছে গাছে প্রেম ঝুলছে
প্রেমের ভেতর নষ্ট দামুশ
জরিপ করছে পাগলামো ।
অন্তহীন খরার দেশে
ছলকে আসছে জলের রেখা,
কাছাকাছি যাই না কারো
স্বপ্নে হয় রোজই দেখা ।
নীরব পাড়ার পায়রা সবাই
কাশ্মীরকা ফুল
পত্থার কিঁউ মারতে হো
হাম্ তো বিলকুল
প্যারকা বুলবুল ।
খুসবু ছড়িয়ে দিচ্ছে আকাশ
আহা বারাঙ্গনা ওই ললনা
ছলনা তার পড়শি বোঝে ,
ঢপের ভেতর বেঢপ আলোয়
কেউ মুরগি হয় , কেউ মুরগি খোঁজে ।
বিকেলের সস্তা জামায়
গরম পোহাই
এখানে নদীর গাভা নেই ,
বালি তুলছে সভ্যতার গাড়ি
গর্জন আসছে , গর্জন আসছে
যেমন করে ভ্রমর আসে
ফুলবাগানে ফুটলে কুঁড়ি ।
উঁচু শহর , আধখোলা বুক
উন্মুখ উন্মুখ
উঁকি দিচ্ছে সভ্যতার আহ্বান —
বাজি রাখছি একটি জীবন , নষ্ট জীবন
বাজি রাখছি না গাওয়া গান ।
রাষ্ট্র আইন সংবিধান
পুলিশ তাড়ছে , পুলিশকে তাড়ছে
মাঝে মাঝে চর্কি ঘুরছে
পাশা খেলছে সম্রাটগণ ।
মাঝে মাঝে বস্ত্রহরণ
দ্রৌপদীও সেটাই চাইছে ?
গান গাইনি, কাকের কাছে গা-ন থাকে না
প্রহরী নই
জল ঢেলে সুখ পাই ,
আমিও সেই জলহরিণী
চেঁচাতে পারি না , ব্যাঘ্র বসত করে
চেঁচাতে পারি না নিরাপত্তাহীন ঘরে
ব্যগ্র আছাড় মারে ।
স্বপ্নের ঘাস, ঘাসের স্বপ্ন
সবুজ আশারা জাগে
জেগে ওঠে হাঁস , নক্ষত্ররা —
বর্ষা আসতে কত দেরি আর ?
ধর্মের কল নড়ে না বাতাসে
ধর্মের কল মানুষ পেষাই করে
রক্ততেল , রক্তের তেল
মেখে নিক সব দেবতারা —
ধর্মের কল বসিয়ে দিক
সারা পৃথিবী জুড়ে ।
ভোরের পাঠানো চিঠি
গৃহস্বাদে ডুবে আছি
ভোরের পাঠানো চিঠি রোজ পাই
আমাদের নবান্ন উৎসব
ধানের আলোয় ভরসা জেগে ওঠে
খড়ের আগুনে শীত সেঁক নিতে থাকি
এখনও নিভৃত ঢেঁকি ওঠে নামে
ইচ্ছেরা যুবতী হলে গান আসে
নতুন চালের ঘ্রাণ পাই
ইক্ষুক্ষেতের পাশে বসে দেখি, কত জমে
ইক্ষুরস
সর্বনাম-ক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ি
মাঠে মাঠে
ভ্রমর-ভ্রমরীর আলো সবুজ
দূর্বাঘাসে
স্নেহের স্কুলগুলি একে একে খুলে
যায়
এখানে বিষাদ ধুয়ে নিতে থাকি
এখানে করুণা জীবিত হয় রোজ
এখানে আমরা আজও ভালবাসা লিখি
গোপনচারী
প্রত্যহ তোমার কল্লোলে ভিজি
ভেসে যেতে যেতে প্রাণপণ তীরে উঠি
সংসার সমুদ্র বলে সতর্ক থাকতে হয়
ওলটপালট জীবন জোয়ার-ভাটায়
জানি না কখন বাজে বাঁশি
হাহাকার মুছে নিয়ে তাকিয়ে দেখি :
সকাল হয়েছে
ভেতরের ক্ষুধা জেগে ওঠে : চলো, চা খাই
বিস্মৃত বিস্কুট সব আলো হয়ে হাসে
আমিও পুরুষ হই শুধু
ভোরের প্রেমিককে হত্যা করে
আলোচ্য বিষয় তখন —— সুখ আনো….
সুখ কি কেনা যায় হাটে?
তবুও এক লম্বা ফর্দ, থলে দুই হাতে…
মাঝে মাঝে নাসিরুদ্দিন হই
মাঝে মাঝে শুধুই গোপাল
সুখের মরীচিকা ঘুরে ঘুরে
খরিদ করি দার্শনিকের চাল-ডাল
আত্মবিজ্ঞাপন
আমারই বিজ্ঞাপন আমি
যত ইচ্ছে ব্যবহার করো
পৃথিবীতে সব্বাই সকলের
ব্যবহারকারী
কথাবার্তায় কিছুটা গলন থাকে
অভ্যাসে গড়ে ওঠে সমর্পণ
প্রবৃত্তির অমোঘ নিয়ম এসে
প্রত্যহ দাসত্ব শেখায়
বিবেক আর কিছু নয়
ধর্মাধর্ম সবাই থাকে একই পাড়ায়
কারও ঘরে আলো নেই
সাধারণ ; সব্বাই অতি
সাধারণ
সেরকম কারও কোনও নাম নেই
ইন্দ্রিয়গুলি জ্যোৎস্না পেলে
চকচক করে
উলঙ্গ নির্জন প্রগলভ আর যা যাকে
মানায়
সবই ভাষা, বিজ্ঞাপনের
আস্ফালন
ব্যবহার করো, গোপন বিষণ্ণ
সব মেধা
অথবা মেধাহীন দুর্বল দুর্জন
আয়নার সামনে মুখ দেখা
যায় না আর
গার্হস্থ্য বিষাদগুলি আমার
একান্ত নিরিবিলি খেয়ে যায়
আয়নায় মুখ দেখা যায় না আর
আয়নার সামনে দাঁড়াই প্রাচীন
অন্ধকার
কতটুকু নীল জ্যোৎস্না ছিল তবে
রক্তে উচ্ছল স্রোত জেগে উঠেছিল
দেখি তার কিছু অংশ বাল্য ও যৌবনে
স্বরলিপি হয়ে বেজেছিল রূপকথা আর
গানে
আজ পরিত্যক্ত বাড়ি
প্রদীপ জ্বালায় না কেউ
শাঁখ বাজানোর সন্ধ্যায়
পরে না শ্বেতশুভ্র শাড়ি
তবুও অক্ষরবৃত্তে পাক খাই
বিষণ্ণ সঙ্গমে পার হই যুগ
মৃত কোকিলকে স্মৃতির জাদুঘরে
রেখে
নষ্ট বিব্রত আমি সারাই অসুখ