মৌলি
বণিক
১
মাঝখানে আজও তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ
শীতার্ত রাত্রি
দু'পাশে আমরা দু'জন দুই
ভাঙনপথের যাত্রী-
না-বলা কথাকে গোপনে খুঁজি ঘন
কুয়াশার ভীড়ে
ওম না-পাওয়া ব্যথারা শুধু ঝরে
শিশিরে শিশিরে।
২
তোমার আমার শীতকথা শোনাব আজ
ভিন্ন তাপে-
ভিন্ন পশম চাদরে ঢাকা, চিরদিনই
ভিন্ন মাপে।
শীত পড়েনি তখনো তেমন, তবু কাঁপন
শীতার্ততায়
মন চায় মন একটু তাতায় পরষ্পরের
নক্সিকাঁথায়।
উপেক্ষার শীতলতায় হচ্ছে মনে ভীষণ
তুষারপাত
তবু সেই তুষার গলে পাগলাঝোরা যেই
ছুঁয়েছো হাত।
ভাবছি ভূমিকম্প আর ধস বুঝি এমনি
করেই আসে
পরিত্রাণ খুঁজতে গিয়েও হয়না
খোঁজা এমন সর্বনাশে।
হাড়-কাঁপানো শীতের রাতেও ফাগুন
বাতাস বইল ঘরে
স্বপ্নে তুমি সোহাগ করে যেই
ডেকেছ সে' নাম
ধরে।
৩
পরিযায়ী পাখীর ডানায় লেগে থাকা
হিমাঙ্করেখা
বলে, কুয়াশায় ভেসে
এল পাতা খসানোর বেলা-
আমি শীতঘুম ভেঙে দেখি শিশিরে
সোনালীলেখা
কটাক্ষে ডাকে- এসো তোমার সঙ্গে
খেলি প্রাণের খেলা;
কিছু শীতার্ত বিষণ্ণতার সঙ্গে
করেছি বিদায়ী দেখা,
পাতা কুড়ানির ওম জ্বালাতে দিয়েছি
সে হেলাফেলা।
৪
কুয়াশারা ধোঁয়াটে শরীর বিস্তার
করে ক্রমে ক্রমে-
ঢেকে যায় রাতের আকাশের
সপ্তর্ষিমন্ডল
ধানক্ষেতে আমবনে কঙ্কালবৃক্ষে শিশির
জমে
বেহুলা একা চলেছিল তখন ভেঙে
গাঙুরের জল।
পরিযায়ী পাখীর শীতল দেহ ভেসে ওঠে
দহের জলে
সঙ্গিনীপাখী আর্তনাদে ছিন্নভিন্ন
করে নিশুতি রাত
হিমাঙ্করেখা বদলে বুড়োবট তলে
ওমের আগুন জ্বলে
অপেক্ষা পান্ডুরজ্যোৎস্না হেলে
কখন আসে রোদেলা প্রভাত।
৫
রাত্রির তৃতীয় প্রহর ধীরে নেমে
আসে-
বন্ধ জানালার শার্সীর ও'পাশে
নিঃশব্দে ঘনিয়ে আসা কুয়াশারা
ভাসে।
উজ্জ্বল নীহারিকা মেঘ সাঁতরে
ভেসে যেতে থাকে
ও'কি ভালোবাসার রূপকথা বুকে আঁকে?
শীতার্ত দীর্ঘশ্বাস তোমায় তবে
বিদায় পথের বাঁকে।