সম্পাদকের কলমে~~
শ্রাবণের
বৃষ্টিভেজা মনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। মেঘ বৃষ্টি আকাশের ফাঁক দিয়ে ভিজে রোদ উঁকি
দেয় কখনো সখনো। তখন সোনালী জল রঙের ইজেলে তোমার চোখদুটো ভেসে উঠলে শ্রাবণের পৃষ্ঠা
জুড়ে কবিতা আসে নেমে। দিগন্তবিস্তৃত শ্যামলিমায় বাংলার হৃদয় জুড়ে তোমার সহবাস। জলভরা
মেঘের নৌকা ভাসিয়ে চলেছো মহাকালের দিগন্ত থেকে মহাপ্রস্থানের পথে। মধ্যবর্তী সময়ের
ইশারায় তোমার সাথে দেখা। তুমি চোখ তুলে তাকালে যখন, আমার কবিতার খাতায় তোমারই বন্দনায়
সময়ের আরতি। এই যে একটা জীবন। স্বার্থ দ্বেষ ক্ষোভ বিক্ষোভের সরণী দিয়ে মিছিলের মতো
পিলপিল। এগিয়ে চলার বদলে ভিড় বাড়িয়ে তোলাই শুধু। সেই জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে দেখ
আজও কেমন তোমার চোখে চোখে রেখে বসে রয়েছি। তাই তো কবিতা আসে। অক্ষরের স্রোত জুড়ে ভালোবাসার
বীণায় হৃদয়ের তারে বেজে উঠতে পারি আজো। তুমি আমি। আর আমাদের মতো যারা। এধারে ওধারে।
নয়তো এই জগৎ
এই সংসার শুম্ভ নিশুম্ভের মল্ল যুদ্ধ শুধু। তাতে সমুদ্র মন্থনও হয় না। উঠে আসে না অমৃত।
বরং যুদ্ধের গরলে ঢাকা পড়ে যায় মানুষের প্রতিদিনের কবিতা। যে মেয়েটি এইমাত্র চোখ রাখলো
বাসন মাজা হাতে কপালের চুল সরিয়ে, বেকুবের মতো চেয়ে থাকা ফেরিওয়ালাটার চোখে। সেই দুটি
চোখের অক্ষরে বিশ্ব প্রকৃতি যে রঙ ছুঁইয়ে দেবেন বলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন, হতভম্ব কবির
মতো। সেই রঙের কারবারি তো সেই তুমিই। আমার কবিতার পাতা জুড়ে যে তোমাকে সাজাই গোছাই
ভরিয়ে তুলি। প্রতিদিনের অনলস পরিশ্রমে। দেখো সে ইতিহাস মুছে দিতে চেয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ
কেমন নিজেদের ভিতরে যুদ্ধের বখড়া ঠিক করে নেয় রোজ। আর এই বাংলার ঘর দুয়ার জুড়ে থমথমে
আকাশ। শ্রাবণ নামলে কবিতা নয়, জল জমে ভাসতে থাকে ঘর।
একটা ঘরই
তো। চারটে দেওয়াল। মাথার উপের একটা ছাদ। শক্তপোক্ত। রাত নামবে। একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাবে
মানুষ। ভালোবাসার তাপ উত্তাপজাত সন্তান সন্ততি নিয়ে। বাইরে বৃষ্টি নামুক ঝমঝম। ভিতরে
ভিজে উঠুক হৃদয়। পরস্পর সিক্ত স্পর্শের অনুভবে একটু ভালো ঘুম হোক ওদের। এই তো সামান্য
চাওয়া। তোমার আমার কবিতার স্বাক্ষরে। কিন্তু এই বাংলা জুড়ে তবু ত্রাণের রাজনীতি। সকাল
সন্ধ্যা সে আর এক মহাকাব্য। কুরুক্ষেত্র থেকে কম নয়। গদির মূল্য পরিমাপ হয় রাজকোষে।
তাই ঠেকা এত বেশি। তোমার আমার কবিতায় এর ব্যাখ্যা হয়তো নাই। হয়তো খুঁজে পেতে চাই না
আমরা। তার থেকে শান্তি ভালো। স্বস্তি অনেক বেশি কাম্য। রোজ যে কবিতা পড়ি কাব্যপাঠের
আসরে, সেই ভালো। কি হবে অযথা খোঁচাখুঁচি করে। কবিতার সাধ্য কি দিন পাল্টায়? তার থেকে
তোমার চোখে চোখ রেখে দেখি, ছন্দমিলের সনাতন কারুকাজ। নয়তো উত্তরআধুনিক মেলড্রামা।
শ্রাবণের
ঝুল বারান্দায় ঝুলে থাকি। শীতল বৃষ্টির কুচকাওয়াজ ব্যালকোনি জুড়ে। নাগরিক সংস্কারে
সুখে থাকার দায় বেশি। তাই বারান্দা থেকে কেউ নামি না। রুদ্রনীল মন্দ বলে নি কিন্তু
কথাটা। হয়তো তুমি তখন ভর করেছিলে রুদ্রের হৃদয়ে। সঠিক তারে বেজে উঠলে সত্য যত কদর্যই
হোক, মন্দ লাগে না শুনতে। অসুবিধে শুধুই মুখ আয়নায় দাঁড়ানো। সেও অভ্যেস করে নিয়েছি
সবাই। চোখবুঁজে তাকিয়ে দেখি নিজস্ব অবয়ব। হাততালি দিই। শেয়ার করি। সকলকে শোনাই। বিখ্যাত
হয়ে ওঠে রুদ্রনীলের কবিতা। ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে শ্রাবণের ছাঁট মেখে চোখে মুখে পরিতৃপ্তি।
নাগরিক সংস্কৃতি ইতিহাস লিখে চলে প্রতিদিন।
সেই ইতিহাসে
আবার ফিরে ফিরে আসে শ্রাবণ। বাংলার কবিয়ালদের ডাক পড়ে। পত্রিকার পাতা ভরিয়ে তুলতে হবে।
বৃষ্টিভেজা সুন্দর কবিতায়। প্রেম বিরহ আনন্দ বেদনার গীতিতে ভরিয়ে তুলুন আপনার কবিতা।
আমরা প্রকাশ করবো। শুম্ভ নিশুম্ভের রাজনীতিটা থাক। আমাদের কবিতার বিষয় হোক মানব হৃদয়।
এমনটাই তো তুমিও চেয়েছিলে বল মেয়ে। দুই চোখ শ্রাবণে বাংলার সবুজ মেখে মনে। তোমার নরম
হৃদয় ভর করে আমাদের কবিতার পাতায়। তাই শুম্ভ নিশুম্ভের যুদ্ধে উলুখাগড়াদের প্রাণ নিয়ে
টানানটানি করি না আর। বরং মন্দাকিনীর মেঘে রাজকন্যার অশ্রু জমলো কত, সেই ছন্দের শোকগাথা
হতে পারে এই শ্রাবণের বিষয়।
তোমার চোখে
চোখ রেখে বলতে কোন শরম নাই, আমার কলমে আত্মসুখের স্বতঃস্ফূর্ত ঝর্ণায় আজ আর কারুর আর্তনাদ
প্রতিধ্বনিত হয় না। তাতে কারুর মাথাব্যথ নাই। কবিতার রাজসভায় বরমাল্য পেতে এই যথেষ্ট।
সময়ের অনুঘটকে আমাদের কবিতা যদি স্বপ্নবিলাসে আইভরি টাওয়ারে চড়ে বসে, তবে সে তোমার
দায় মেয়ে। তুমি শ্রাবণগন্ধা সাবনে চারিদিক সুরভি ছড়িয়ে রক্ত ক্লেদ গ্লানির গন্ধ ঢেকে
দিলে আমরা নাচার। দশদিক আবর্জনা ঠেলে কবিতার ঠেলাগাড়ি ঠেলতে রাজি হবেন কোন কবি? রাজসভার
কবিতার আসরে সকলেই আমন্ত্রিত হওয়ার সাধনায়। সেই নিমন্ত্রণ নিয়ে কবে তুমি আসছো বলো বরং।
আমার এই শ্রাবণের ব্যালকোনি তোমার নামেই বাঁধিয়ে দেবো। কথা দিলাম। ততক্ষণে বরং শোনো
এই শ্রাবণে আমরা কে কেমন কবিতা লিখলাম~~~~~~
৫ই শ্রাবণ’
১৪২৭
কবিতাউৎসব