বৈজয়ন্ত রাহা
জোকার
আমাকে স্তম্ভিত করে পাশ থেকে
উঠে যায় বিমূর্ত জোকার,
খালি সীটে শুয়ে থাকে
সাবধানবানী--
'একটুও নড়বিনা',
শব্দেরা স্থানুবৎ, হেলে সাপ, বাস্তুভিটা,
প্যারাডাইসের সেই টিকিট ব্রোকার,
কাটাকুটি খেলে, নির্বিকার প্রশ্ন ছোঁড়ে--
'তুই
সরবি না?'
ডান হাত চেপে ধরি, নখ বসে, বাম হাতে, কলমটা খুলি,
সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে মোহহীন
গ্রীষ্মের ধূসর গোধুলি,
খরচোখে চায়,
দুভুরু সামান্য নাচায়,
তুড়িতে বুঝিয়ে দেয়,
মৃত্যুর দাসখৎ নেহাৎই
আমার বাঁচায়।
তারপর সন্ধে নামে, অন্ধকারে গেয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ ছাদ,
ঈশারায় বিদ্যুৎ হানে , দূরে, ছায়াময় শহরের পাপ
ইস্তেহারে ভেসে ওঠে,
যতটা যাবার নয় তার চেয়ে বেশি গেলে, খাদ,
জোকার কোথাও নেই,
দশকের রাজপথে পড়ে আছে অস্ত্রহীন
খাপ....
কথা
নির্বিঘ্নে সত্য সারি, তারপর মিথ্যে নিয়ে
বসি,
স্তব্ধতার বেড়াজাল ভেঙে ঢুকে পড়ে অলীক মেঘেরা,
মানুষেরা কথা হয়, কথারা অর্ধেক জলছবি,
সেসব কথার কোনো মানে নেই,
সেসব কথারা শুধু কান্না হয়ে
ফেরে,
ধান রঙা রোদ হয়ে উড়ে যায় ফড়িং
এর সাথে,
তারপর ছুট,
দেদার,
হাওয়া চিরে, মাঠ ফুঁড়ে
অনির্বাণ বঞ্চনার দিকে,
তারপর একদিন নতজানু হয়ে বসে,
যেন প্রার্থনায় বসেছে ঋষিশিষ্য,
স্তোত্রপথে উঠে আসে জলের নিনাদ,
দেয় ধাক্কা, চৌচির করে দেয় নিশ্চিন্ত যাপন,
অন্যমনস্ক ঝড় এসে ঢেকে দেয় ধূসর
তীর্থস্থান।
কথারাই সত্য হয়, মিথ্যা হয়,
এঁকে রাখে শাশ্বত মৌনকাহিনী।
২
সো কেস খুলে ধরি,
থরে থরে বই, অক্ষরলিপি পড়ে আছে
মনখারাপের মতো।
আর পড়া হবে?
পাতায় পাতায় লেখা আছে কথা,
ওটুকুতে তুমি আছো।
ফিরে এসো শাল্মলী ইচ্ছেরা --
বললেই ফিরে আসা যায়?
তার চেয়ে কবিতায় থাকো।
প্রতিদিন রাতে,
পাতার পোশাক তুলে দেখি,
তোমাকে।
আমগ্ন কথা হোক।
খুব চুপচাপ। কেউ জানতেও পারবে
না।
আবির্ভাব
যেভাবে বৃষ্টি আসে, উড়ে যায় চাল, উঠোন দুয়ার, জানলা কপাট
ঝড়ে, সেভাবে এসেছ তুমি কখনও কখনও , দিয়ে গেছ মাঠ ,
দু-হাত উল্টানো প্রাচীন আকাশ, সমস্ত শরীরে জল আর
জলের বিষাদ
চলে গেছ নির্বিকল্পে , অকস্মাৎ আলোটির ছায়া
নেমে গেছে,
খাদ
আর খাদের গল্পে বড় হয়ে উঠেছে সে
আসাটুকু ,
তোমার
কথাটি
পাহাড়ে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে
গেছে পুরোনো পুরাণে, খাঁটি
জীবনের মতো মিথ্যে নিয়ে তবু বসে
আছি অযুত নিযুত শব্দ আর ধ্বনি
নদী হয়ে বুকের ভিতর পলিরেখা আঁকে, চাঁদ বেয়ে জ্যোৎস্নাঅশনি
ঘিরে ফেলে নিষাদ-পৃথিবী , জলহাস বালুচর থেকে শব্দহীন ডাক দিয়ে যায়
হাহাকারে , যেভাবে সে শূন্য আসে
, ভয় এঁকে রাখে নিরন্ন
চোখের তারায় তারায় ...