বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১

সম্পাদকের কলমে

 


ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

 

বাংলা কবিতার মাসিক সংকলন ‘কবিতাউৎসব’ তার পথচলা থামিয়ে দিল পাঁচ বছর চলার পর। সংকলন সম্পাদক যখন শেষ সংখ্যার ঘোষণা করেছিলেন তখন অনেকের মত আমিও অবাক হয়েছিলাম। প্রশ্ন জেগেছিল কেন এই থেমে যাওয়া? লেখকদের সাড়া পাচ্ছিলেন না বা পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এমন নয়, বরং একটু বেশিই সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল। তবুও থেমে যেতে হল। আমরা জানি যে, জীব জগতের প্রতিটি বস্তুর ক্ষেত্রে, জড় বস্তুর ক্ষেত্রেও, তার সৃষ্টির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তার ধ্বংসের বীজ। কিন্তু সাহিত্য ও শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে তেমন তো নয়! সাহিত্য ও শিল্প সৃষ্টি চিরস্থায়ী তার মৃত্যু হয় না, ধ্বংস হয় না। অনেক পাঠক ও কবিতা অনুরাগীর মতও আমিও দুঃখ পেয়েছি কবিতাউৎসব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে। তবু কোথাও যেন মনে হচ্ছে এই থেমে যাওয়া অনিবার্য ছিল। বাংলা সাহিত্যের আঁতুড় ঘর লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে বলা হয় তার জন্ম যেন মৃত্যুর জন্যই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বন্ধ হওয়া বা থেমে যাওয়ার কারণ আর্থিক। কিন্তু অন্তর্জাল পত্রিকার ক্ষেত্রে আর্থিক কারণ তেনন থাকে না। ওয়েব ব্লগ প্রকাশনার প্রায় সবটাই হয় একক ব্যক্তিউদ্যোগে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ব্লগ প্রকাশনায় হয়তো ক্লান্তি আসে। আমি জানি না কবিতা উৎসব বন্ধ হওয়ার পেছনে প্রকাশক- সম্পাদকের ক্লান্তিই দায়ি কি না।

হরেকৃষ্ণ দে

 

ফেসবুকের দৌলতে লেখালেখির জগতে সহজ ঢুকে পড়লাম বিভিন্ন গ্রুপে লিখতে লিখতে মুদ্রিত প্রকাশনায় হাতেখড়ি হয়েগেল এভাবে কবিতা লেখার চর্চা একটা নেশায় পরিত হল মু্দ্রিত প্রকাশনা ছাড়া ওয়েব প্রকাশনায় লেখা পড়তে লাগলাম একদিন এভাবেই ভেসে এল "কবিতাউৎসব" নামে একটি ওয়েব প্রকাশনা কবিতাউৎসবের ওয়েব পেজের বলিষ্ঠ লেখা পড়তে পড়তে মনের ভেতর লেখার একটা তাগিদ নাড়া দিতে থাকত লেখা পাঠাবো ভেবেও পাঠাই নি বিভিন্ন প্রকাশনার জগতে এই "কবিতাউৎসব" প্রথম সারির সকল ওয়েব প্রকাশনার মধ্যে অন্যতম সেরা একটি প্রকাশনা হয়ে উঠলো আমার কাছে আমার খুব প্রিয় প্রতিভাবান লেখক বন্ধুদের লেখায় সমৃদ্ধ এই "কবিতাউৎসব" প্রতি মাসের একুশ তারিখে নিয়মিত প্রকাশ হয় এই ওয়েব প্রকাশনা এই প্রকাশনা সকলের অন্তরে একটা স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছে তার প্রকাশিত প্রতিভাবান লেখনী লেখনীতে তাই আমি ২০২০ সাল সাল থেকে শুরু করলাম লেখা পাঠাতে আমার লেখার মনোনীত হওয়ার ইমেল সংবাদ পেয়ে যারপরনায় খুশি হলাম মনে হল এখানে না লিখলে হয়তো আমার কবিতা চর্চা বৃথা আমার ভাবনার পরিতৃপ্তি ঘটল সেই থেকে পর পর কয়েকটি সংখ্যায় লেখা প্রকাশিত হল এবার এই ওয়েব প্রকাশনার ভালো লাগা মন্দলাগা বিষয়ে কিছু লিখতে বসলাম

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

"কবিতাউৎসব" ------ হ্যাঁ, সত্যিই উৎসব। আমার কাছে প্রতি মাসের ২১ তারিখ। প্রথমেই বলি, কবিতাউৎসবের সঙ্গে আমার খুব বড় একটা মিল আছে। কবিতাউৎসব যে সময় থেকে ওয়েব প্রকাশনায় তার যাত্রা শুরু করেছে, আমারও ফেসবুক যাত্রা প্রায় সেই সময় থেকেই। তাই এই পত্রিকাটির সঙ্গে আমার এক অন্যধরনের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। সাহিত্য জগতের সঙ্গে আমার প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরের যোগ। তাই এযাবৎ অসংখ্য পত্রপত্রিকায় লেখার সুযোগ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এছাড়া বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের ওয়েব ম্যাগাজিনে লেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, "কবিতাউৎসব"-এর তুলনা "কবিতাউৎসব" নিজেই। পাঁচ বছর ধরে প্রতি বাংলা মাসের ২১ তারিখে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে এসেছে। একবারের জন্যেও তারিখ সময়ের কোনো গোলমাল আমরা দেখি নি। এই নিয়মানুবর্তিতা কিন্তু কম কথা নয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যে মানুষটি এই দায়িত্ব সামলেছে তার জন্যে কোনো বিশেষণই যথেষ্ট নয়। যদিও প্রকাশিত লেখা পাঠালে কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু তবুও আমি কবিতাউৎসব-এ সব সময় নতুন লেখা পাঠাতাম। পাশাপাশি আরও অনেক নবীন প্রবীণ কবির সাম্প্রতিক সৃষ্টির সঙ্গে প্রতি মাসে যেভাবে পরিচয় ঘটত তেমনটি আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই "কবিতাউৎসব" থাকবে না ----- এটা মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু বাস্তবটাকে তো মানতেই হবে। তাই কবিতাউৎসব না থাকলেও কবিতাপ্রেমীদের মনে তার উপস্থিতি চিরকালের।

সোনালি পুপু

 

যত যত বাংলা অক্ষর আর শব্দের আলপনা আঁকার চেষ্টা করে থাকি, তার সব যে কবিতা হয়ে ওঠে এমন নয়। কিন্তু মনের আকুলিবিকুলি ত লিখে ফেলতে পারি, সেটাই বড় আরাম। সেই বাংলা হরফে লেখার আনন্দটাই পেতাম না,  কবিতাউৎসবের প্রধান আয়োজক সম্পাদক সাহিত্যিক বন্ধু শ্রীশুভ্র যদি ডিজিটাল মিডিয়াতে বাংলা লিখতে না শেখাতেন এত ধৈর্য ধরে। অত্যন্ত কৃতজ্ঞ চিত্তে মনে রাখি, আমার বন্ধু ভাগ্য ঈর্ষনীয়। কবিতাউৎসব খুব যত্ন করে লেখাদের সাজিয়ে গুছিয়ে মানুষের সামনে মেলে ধরছে এত বছর ধরে। কবির ছবি সহ এত সুন্দর ভাবে কবিতার পরিবেশন কঠিন কাজ। আর ওয়েবসাইটে থেকেও  যাচ্ছে আর্কাইভ। সেখানে গিয়ে এক ছোঁয়ায় দেখে আসা যায় কে কে কি লিখেছেন এত দিন ধরে। এত বড় একটা কবিতা গ্রন্থাগার নির্মাণ করেছেন যাঁরা, বিরাট সম্মান এবং প্রশংসার ডালি তাঁদের প্রাপ্য হয় পাঠক এবং লেখকদের কাছ থেকে। কবিতা উৎসবকে শ্রদ্ধা ও কুর্ণিশ। আর ভালবাসা ত সব সময়। একসাথে পথ চলার আনন্দে। বাংলা ভাষাকে ভালবাসার আরামে। আন্তরিক বন্ধুত্বের সহমর্মিতায়। এই বিপুল সংখ্যক কবিতার আসরে কত গুণী শিল্পীর লেখা পড়তে পেলাম, যাদের অনেকেরই বই কিনে পড়া হয়ে ওঠে না। হয়ত এদেশে সবার বই পাওয়াও কঠিন। কবিত উৎসব এমন  উজ্জ্বল মণিমাণিক্য হাতের কাছে লভ্য করেছে সহজে। মানসিক কর্ষণে ধনী হয়েছি প্রতিনিয়ত। সাহিত্যের উঠোনে সকলের প্রশংসা এই আয়োজনের জন্য জমা আছে বলে মনে হয়। সাহিত্যকে ভালবাসেন যাঁরা, তাঁদের সকলের  ভালবাসা সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলুক কবিতাউৎসব।

সুধাংশুরঞ্জন সাহা

 

কবিতাউৎসব ওয়েব প্রকাশনার জগতে একটি সাড়া জাগানো নাম। অব্যর্থ ষাটটি মাসিক সংখ্যা প্রতিমাসের ঠিক একুশ তারিখে প্রকাশ করে তার দায়বদ্ধতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এছাড়াও মাঝে মাঝে আমরা পেয়েছি বেশ কিছু মূল্যবান প্রবন্ধ, যার সাহিত্যমূল্য অপরিসীম। অন্তহীন অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই কবিতাউৎসব-এর এই অসাধারণ কাজকে। অন্তত ত্রিশটি সংখ্যায় আমার গুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করে কবিতা উৎসব আমাকে প্রমাণিত করেছে ও আত্মীয়তায় বেঁধেছে, বলাই বাহুল্য। সেই কবিতাউৎসব আর বের হবে না শুনেই আমার খুব মনখারাপ লাগছে। জানি না, কেন এই সিদ্ধান্ত! স্বাভাবিকভাবেই কবিতাউৎসব কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার মে নীতি গ্রহণ করেছে এবং কবি নয়, কবিতার গুণগত মানই প্রাধান্য পেয়েছে তাঁদের সেই নির্বাচনে। ফলে, পাঠক হিসেবে বেশ কিছু ভালো কবিতা পড়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। আজ বড়ো বড়ো প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে যেখানে অস্বচ্ছতা এবং কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফলস্বরূপ ক্রমেই বাংলা সাহিত্য তার ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলছে। হারিয়ে ফেলছে তার ঐতিহ্যও। কবিতা উৎসব যখন শুরু করেছিল, তখন হাতে গোনা কয়েকটি ওয়েব ম্যাগাজিন বেরতো। এখন তো মুড়ি মুড়কির মতো ওয়েব ম্যাগাজিনে ছেয়ে গেছে ওয়েব দুনিয়া। এইসব পত্রিকার মান নিয়ে কথা না বলাই ভালো। তবে, বেশ কয়েকটি ওয়েব ম্যাগাজিন আবার উচ্চ মানের। সেদিক দিয়ে বিচার করলে কবিতাউৎসব - এর বিশেষ ভূমিকার কথা ওয়েব দুনিয়া মনে রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। এইরকম একটি পত্রিকায় লিখতে পেরে আমি আনন্দিত, গর্বিত। কবিতাউৎসব- এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কবি, সাহিত্যিক, কলাকুশলী এবং সম্পাদকমণ্ডলীকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

সমর্পিতা ঘটক

 

কোনও পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাবে শুনলেই মন খারাপ হয়। কবিতাউৎসবের ঠিকানা থেকে চিঠি বা বিজ্ঞপ্তি আসত কবিতা লেখার অনুরোধ নিয়ে, এবারও চিঠি পেয়ে তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু খবর তো মন খারাপের! নতুন ও পুরনো কবিদের কবিতা দিয়ে সেজে উঠত এই পত্রিকা। নিয়মিত। অন্যান্য অনেক নিয়মিত ঘটনা গুলোয় এ বছরে যতি চিহ্ন পড়েছে  এবং বদলে গেছে রোজকার পথচলা। বড্ড বেশি বিচ্ছিন্নতার খবর এ বছরে গ্রহণ করতে হল। পাঁচ বছর ধরে, প্রতি মাসে প্রকাশিত হত কবিতাউৎসব ওয়েব পত্রিকা। এ তো কম কথা নয়! কত অক্ষর, অনুভব, আত্মপ্রকাশ, আত্মবিশ্বাস জন্ম নেওয়ার, ফিরে পাওয়ার কাহিনি এই পত্রিকার পাতায় পাতায়। অকস্মাৎ এই থেমে যাওয়া অবশ্যই বেদনার। কবিতাউৎসবে আমার পথ চলা বড়ো ভালো, বড়ো আনন্দের। এই তো গত আশ্বিন মাসের সংখ্যাতেও লিখলাম। বেশ কিছু সংখ্যায় লিখেছি আমি নিয়মিত। এই ওয়েব পত্রিকায় প্রকাশিত বেশ কিছু লেখায় পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে আমার। পড়েছি অন্য কবিদের লেখা। সঠিক সময়ে লেখা চাওয়া ও পত্রিকা প্রকাশের সংবাদ চলে আসত মেল মারফত। হেরফের হত না একবারও। উন্নাসিকতা ও উদাসীনতা লক্ষ করিনি কখনও। মোট ৬১টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে পাঁছ বছর ধরে। চাইব সংরক্ষিত হোক সংখ্যাগুলি। চাইব কবিতাউৎসব ফিরে আসুক আবার। না হয় থাকল কিছুদিনের বিরতি। কার্যকারণ না জেনে পাঠক ও লেখক হিসেবে এমন বলা খুব সহজ যদিও। বাংলা ভাষায় কবিতা পত্রিকাগুলো চলুক নিজের ছন্দে কবিতাপ্রেমীরা তাই চাইবে। পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্কিত সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানালাম। সবাই ভালো থাকবেন।

শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়

 

'কবিতাউৎসব' তার চলার পথে পাঁচ  বছর পূর্ণ করল। বাংলা কবিতাচর্চার ক্ষেত্রে নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছে কবিতাউৎসব। বাংলা কবিতাচর্চার ক্ষেত্রে নিজের ঐতিহ্য রেখেছে কবিতাউৎসব। তার পাঁচ বছরের যাত্রাপথটি বিভিন্ন কবির কবিতা সম্ভারে সেজে উঠেছে প্রতিমাসে। নতুন যাঁরা উঠে আসছেন কবিতার জগতে তাঁরা আত্মপ্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে 'কবিতাউৎসব' এক বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে  উদীয়মান  কবিদের জীবনে। প্রতিমাসে নিজের গুচ্ছকবিতা  প্রকাশের সুযোগ তরুণ কবির কাছে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এতে সে কবিতা লেখার  তাগিদ অনুভব করেছে ভেতরে ভেতরে। এমনভাবে নিয়মিত লিখতে লিখতেই সে খুঁজতে চেয়েছে নিজের কাব্যভাষা। আবার অগ্রজ কবির কবিতা নিয়মিত পড়ার সুযোগও পেয়েছে এখানে সে। তার প্রিয় কবির কবিতার সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে নিজের কবিতাটি,  এও তো কম কথা নয়। তার লেখা 'কবিতাউৎসবে'  হাত ধরে পৌঁছে গেছে বহু পাঠকের কাছে। পাঠকের উৎসাহ কবিকেও প্রণোদিত করেছে নিজের সেরাটুকু দিতেএই 'কবিতাউৎসবে' আমিও লিখি। অনেক পাঠকের ভালোবাসা পাই এখানে লিখে। পড়ার সুযোগ পাই অজস্র ভালো কবিতা। কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে এঁদের যত্নশীলতা, গুণগত মানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি  লেখক-পাঠক  উভয়েরই মন জয় করে নিয়েছে। 'কবিতাউৎসবে'র দীর্ঘায়ু কামনা করি। পত্রিকাটির আরো শ্রীবৃদ্ধি হোক। আগামীর দিনগুলি  সৃজনের হোক, শুভ হোক।

শ্রাবণী সিংহ

 

শুরুরও শেষ আছে.. শেষের শুরুও এভাবেই। স্মৃতিচারণ একেবারেই নয় বলব যে, 'যে দিন গেছে সুখে'পাঁচ বছরেরও বেশিদিন কেটেছে আমার কবিতাউৎসবে.. বিপুল কবিতাসম্ভারে কিঞ্চিৎ সমুদ্রস্নান। প্রতিমাসে মনের তাগিদ থেকেই লেখা। শুরুর দিকে সংশয় আর জড়তাও ছিল অনেক। ঋদ্ধ কবিদের কবিতার মধ্যে আমার সামান্য রচনা..একসময় তাও কেটে গেল। প্রকাশের দিন আনন্দ নিয়ে অধীর অপেক্ষা। ২তারিখ সময়টা যেন দীর্ঘ। লাইভ কবিতাউৎসব থেকেও অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা পেয়েছি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও বন্ধ নয় হয়তো সাময়িক বিরতি চলবে। তবু ভালোবাসি কবিতাউৎসব অনেক অনেক প্রিয় আমার প্রিয়তা..আপনজনের ছোঁয়া পাই যেন। আমি চাই সামান্যতম বিরতিও নয়,কবিতাউৎসব ফিরে আসুক সোনালীতে। আগামীতে যেন আরো আরো জড়িয়ে যাই কবিতার নিয়ন মায়ায়.. শুভেচ্ছায় ভালোবাসায় নতুন দিনের কবিতাউৎসব.. ফিরে এসো।

শিবানী মুখার্জ্জী পাণ্ডে

 

“কবিতাউৎসব” এই  অন লাইন পত্রিকাটি সম্পর্কে  আমার অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা৷ প্রথম যখন এখান থেকে আমি লেখার আমন্ত্রণ পেলাম তখন আমি  ভেবেছিলাম এই ধরনের পত্রিকাগুলোতে লিখে লাভ নেই৷ মানুষের কাছ আর কতটুকু বা পৌঁছোবে৷ এ সব ভাবতে ভাবতে আমার সঙ্গে সম্পাদক মহাশয়ের আলাপ হোল৷ এরপর ওনার সঙ্গে একটা যোগসূত্রও বের হল৷  জানা গেল যে উনিই নাকি আমার একটি বইয়ের সমালোচনা করেছিলেন একটি   নামী  পত্রিকা থেকে৷ তখন ওনার সঙ্গে আমার আলাপ ছিলনা৷ এরপর ওনার সাথে কথা রলে আমি প্রথম গুচ্ছকবিতার একটি সংকলন পাঠালাম ওনার অন লাইন  পত্রিকাটির জন্যা৷ আসলে আমি একজন গল্পকার৷ তাও কবিতা পাঠালাম ওনার উৎসাহে৷ এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা আমার জীবনে৷ একজন নামী মহিলা কবি সাহিত্যিকের অনুপ্রেরণায় আমি কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম  প্রথমদিকে ৷ এরপর  ওনার  ওয়েব পোর্টালটি  দেখে খুশি হলাম৷ আর লেখাগুলোও বেশ যত্ন সহকারে সাজানো দেখলাম৷ এই ওয়েব পোর্টালটি  যেমন যত্ন  করে করা হয় তাতে বলব, যেকোন আচ্ছা আচ্ছা প্রিন্ট মিডিয়াও ভাবতে বাধ্য হবে৷ এত যত্ন  সহকারে ভাবনা চিন্তা করে পত্রিকাটি করা হয়, সেটি সত্যি প্রশংসাযোগ্য৷  খুব কম সময়ের মধ্যে  এই পোর্টালটি যথেষ্ট  জনপ্রিয়তা লাভ করেছে,  সেটি ভেবেও ভালোলাগে৷ এই পত্রিকার আমিও একজন লেখিকা, আজ সেটিও  ভাবতে ভালো লাগছে।

শাহানারা ঝরনা

 

অনুভূতির মহল জুড়ে সুখ পাখিরা কলস্বরে গায়, আপনতার সূত্র খোঁজে দক্ষ নাবিক। নাবিকের ক্লান্ত চোখ কখনও তৃষ্ণাকাতর হয়, তবুও তা মুছে ফেলে নাবিক জল জীবনের গল্প  শোনায়, দেখায় বিমূর্ত ব্যঞ্জনার প্রতিচ্ছবি, যে প্রতিচ্ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধ হই, নিজেকে আবিস্কার করি সময়ের আয়নায়। আর সেই আয়নাটাই আমার কবিতাউৎসব। যেখানে বুনন করা হয় ঋদ্ধতার স্বপ্ন তাঁত। যার নান্দনিক ছোঁয়ায় উর্বর হয় আমার মেধা মনন ও চেতনার আকাশ। কবিতাউৎসব শুধু নিছক একটা নাম নয় বরং বিমোহিত উপলব্ধির এক অনন্য ছায়াতল। মননশীলতার আবেশ নিয়ে যখন প্রতিমাসে সে আমার কাব্যিক আঙিনায় আসে, তখন আমার অনুভূতির আকাশে বিজুলী চমকায়! আমি ভালোলাগা ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য অনুরণন নিয়ে মন ক্যামেরায় জুম করে দেখি তার সেলুলয়েড প্রতিচ্ছবি। অগনিত কবিতা-মুখ দোদুল ছন্দে দৃষ্টিতে জাগায় মিশ্র মিথস্ক্রিয়া। আবেগে অভিভূত হই, আবেশে বিমোহিত হই। কারুকার্যের নৈসর্গিকতা ও হিরন্ময় আয়োজনের ফ্রেমবন্দী সমন্বয় দেখে মন হয়ে যায় আনন্দের উৎসভূমি। নীরবে নিভৃতে, তাইতো বলি, "মধুর তোমার শেষ যে না পাই /প্রহর হলো শেষ /ভুবন জুড়ে রইলো লেগে /আনন্দ আবেশ!" কবিতা উৎসব আয়ুজীবী সময়ের পথ ধরে দীর্ঘ পরিক্রমায় এগিয়ে যাবে দূর বহুদূর, এই প্রত্যাশা সার্বক্ষণিক।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

 

আমাদের কবিতাউৎসব" এর পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে আমার অফুরন্ত শুভেচ্ছা। গত পাঁচ বছর ধরে নিরন্তর বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে যেভাবে দৃঢ়তার সাথে আমাদের কবিতাউৎসব" পদচারণা করেছে তা প্রশংসার যোগ্য। “কবিতাউৎসব" যার মানস সন্তান কবিতাউৎসবের সেই সম্পাদককে চিনি আমার এই ফেসবুক জগতের প্রথম দিন থেকেই প্রায়। অনাবিল সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমী নিরহংকার এই মানুষটি একজন দক্ষ সম্পাদকও বটে। চারপাশের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তার সুচিন্তিত প্রবন্ধ নজর কেড়েছে। একই সাথে যে দক্ষতার সাথে তিনি কেবলমাত্র ভারত-বাংলাদেশ নয় প্রবাসী বাঙালি এবং বিদেশি অনুবাদকদেরও তার এই ওয়েব জগতে ঠাঁই দিয়েছেন তা আমাদের সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে।কবিতাউৎসব" এর সাথে আমার সম্পর্ক এর জন্ম লগ্ন থেকেই। এই প্ল্যাটফর্মেই পরিচয় ঘটেছে বহু সহ লেখক এর লিখন শৈলীর সাথে। বাংলা অন্তর্জাল পত্রিকার জগতে "আমাদের সাহিত্য উৎসব" যখন পা রাখে তখন এই ধারনাটা অনেকটা নতুন ছিল। ছাপা পত্রপত্রিকার বাইরে যে বিশাল সংখ্যক অনুরাগী পাঠক লেখক রয়ে যায় তাদের প্রকাশের এবং পাঠের সুবিধা করে দেবার জন্য অন্তর্জাল পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য। তখন সবেমাত্র ই-বুকের ধারণা এসেছে ভারতে। পরিবেশবিদরা তুমুল আন্দোলন করছেন কাগজের ব্যবহার সীমিত করে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য। এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে অন্তর্জাল পত্রিকাকে জনপ্রিয় করবার জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য।  পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল মাধ্যম ক্রমশ জনপ্রিয় হবার পাশাপাশি সাহিত্যকেও ডিজিটাল করে তোলার চেষ্টা অবশ্যই সময়োপযোগী। আজকের অন্তর্জাল সাহিত্যের জনপ্রিয়তার দিকে তাকিয়ে একথা স্বীকার করতেই হবে সেদিন যারা প্রথম পা ফেলার সাহস দেখিয়েছিলেন তারা যথার্থই অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। শেষ হয়েও তাই এর শেষ হবে না। সে রয়ে যাবে সাহিত্যের ইতিহাসে।

লিপি সেনগুপ্ত

 

খুব যে একটা লেখালেখি করতাম এমনটি না। লিখলেও নিয়মিত হত না এবং কোথাও পাঠানোর তাগিদ অনুভব করতাম না। এইভাবেই চলছিল গড়িমসি লেখালেখি। ফেসবুকেই একদিন "কবিতাউৎসব" কে পাওয়া। সেখানে উৎসবের সঙ্গী হয়েছি বেশ কয়েকবার। যখনই কোন আহ্বান পেয়েছি বিষয় ভিত্তিক কবিতা লেখায় অংশ নিয়েছি। এক একবার মনে হয়েছে, নির্বাচিত হব তো! মনের সেই দ্বিধা একদিন কেটেও গেছিল। মাননীয় সম্পাদক মহাশয় একদিন ফোন করে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছিলেন। সব সময় সবরকম লেখালেখির আহ্বানে সাড়া দিতে পারিনি হয়ত কিন্তু  প্রায় সব ক্ষেত্রেই আনন্দ আর উৎসাহে  সাথেই থেকেছি। নির্ভুল বানান সহ লেখকের লেখাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছে " কবিতাউৎসব"। অভিনব বিষয় ও ভাবনাকে তুলে ধরার পাশাপাশি মাঝে মাঝেই পড়েছি অসাধারণ আলোচনা। সেই আলোচনা পড়ে সম্বৃদ্ধ হয়েছি একথা বলতেই হয়। অন্যান্য কবি লেখকদের রচনার  সাথে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। একটি পরিবারের মত এই অবস্থান।সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আমরা সহযাত্রী ...."কবিতাউৎসব" তাই অত্যন্ত প্রিয় পত্রিকা। দীর্ঘ সময় ধরে তার অপ্রতিরোধ্য চলাচলা, তার গতি, তার বিন্যাস আমাকে মুগ্ধ করেছে। অজস্র শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা। সকল কবি ,লেখক বন্ধুদের জন্য অভিনন্দন, শুভেচ্ছা রেখে গেলাম। বিশেষ কৃতজ্ঞতা রাখি সম্পাদক মহাশয়ের প্রতি। তাঁর নিপূণ পরিচালনা ও সহযোগিতার প্রতি শ্রদ্ধা, অনেক অনেক শুভকামনা ......

রাহুল গাঙ্গুলী

 

বিগত পাঁচ বছরে ~ (x ১২ = ৬০) & ১টি শারদীয়া; মোট ৬১টি সংখ্যা। তারপর যখন সে চিরবিরতি নেবার কথা বলে ~ ঘটনাটা কোভিডপর্বে আপনজন বিয়োগের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ১টি পত্রিকা, বিশেষ কিছু চিন্তাভাবনায় স্বজারিত হয়েই ভ্রূণ শুরু করে তার বিশেষ যাত্রাটি। তারপর, একসময়, গর্বের সাথে সেই বিশেষ যাত্রাপথের বিভিন্ন বিষম//অসমগুলির মোকাবিলা করতে করতে সে হয়ে ওঠে 'লিটিল ম্যাগাজিন'; যদিও বাংলাভাষায় এই শিরোনামার্থটি 'ছোটো পত্রিকা'। কেউ বলেন ~ বিশেষ সময়ের বিশেষ মুহূর্তটিতে ভাষা ও শিল্পের স্বচিন্তিত দাবিটির আদর্শ রূপদান প্রকাশের আদর্শ ও একমাত্র মাধ্যমটি হলো 'লিটিল ম্যাগাজিন'; যদিও বর্তমানের ভার্চুয়াল আপেক্ষিকতায় ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাইবো 'লিটিল ম্যাগাজিন প্রবণতা'। নাহ; এখানে সেই বিগত সময়ের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর দশক ধরে চলে আসা তথাকথিত দ্বন্দ্বজনিত চর্বিতচর্বণ আনতে চাইছি না। বরং আমাদের কবিতাউৎসব", আমার কাছে কিভাবে 'লিটিল ম্যাগাজিন প্রবণতা'টি অর্জন করেছে, তার অনুসন্ধানটিই মুখ্য।

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

 

পাঁচবছর ধরে কবিতা উৎসবের সঙ্গে যে সুখসম্মৃতি জড়িয়ে আছে তাকে চন্দনকাঠের বাক্সে বন্দি করে নিজের কাছেই যত্ন করে রাখি৷ ধীরে ধীরে গাছটা কখন চারাগাছ থেকে মহীরূহ হয়ে উঠল টের পাওয়ার আগেই ডালপালা প্রসারিত করে আমাদের সকলকে আপন করে নিয়েছে, বেঁধে ফেলেছে ভালোবাসার বন্ধনে৷ নতুন লিখতে আসা থেকে অভিজ্ঞ সকলেই কবিতাউৎসবের ঘরে ঠাঁই করে নিয়েছে পাশাপাশি৷ নদীর মত বাতাসের মত আমাদের সৃষ্টি কবিতাউৎসবের আঙিনায় খেলা করছে৷ কত বিষয়ের ঘনঘটা, বৈচিত্র্য মাখামাখি হয়ে গেছে৷ সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তার মনোহারী বিভঙ্গে কখনও প্রেম কখনও বিরহ কখনও রতির জয়, কখনও সংগ্রামী বৃত্তে ঘোরাফেরা করেছে কবিতারা৷ নকশি কাঁথার মাঠে সোনালি স্বপ্নের ভিড়, বারোয়ারি রাজপথে জীবনের ছবি সব, সবটা সামিল হয়েছে কবিতারউৎসবে৷ এপার ওপার মিলেমিশে সংহতির আনন্দে ভেসে যাওয়া কবিতাউৎসব আমাদের সকলের হৃদয়ের কাছটাতে বাসা বেঁধেছে৷ যখন পৃথিবী অপসংস্কৃতি, হিংসা, দ্বেষের অন্ধকারের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে গেছে ঠিক তখনই কবিতাউৎসব যেন এক ওয়েসিস৷ তেষ্টা মেটে, ছায়া পাই৷ কাঁচামিঠা রোদ মেখে ভুবনডাঙার মাঠের খোঁজে বের হয়ে যাই৷ যে নদীগুলো এতদিন অন্তঃসলিলা হয়ে বয়ে যেত তারা আজ রাস্তা খুঁজে পেয়েছে সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গমের জন্য নিরন্তর বয়ে চলেছে কবিতা উৎসব সরণী বেয়ে৷ শুভেচ্ছারা ছুঁয়ে যাক, নিরন্তর শুভ কামনা কবিতাউৎসবের ভবিষ্যৎ পথ চলার জন্য৷ এই আত্মিক বন্ধন বহবমান নদীর মত অশেষ হোক বহমান হোক।

রমা সিমলাই

 

কবিতাউৎসব" সুস্থ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সৃজনের এক অবিরাম পথচলা। অনিঃশেষ তার অমৃতভান্ডটি। বিস্ময়বোধক তার বিস্তৃতি। স্বনামেই পরিচিত প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে অনায়াসে, মাত্র পাঁচটি বসন্ত পেরিয়ে - এ বড়ো কম কথা নয়। নির্ভেজাল পাঠকের কাছে "কবিতাউৎসব" এক অমোঘ আশ্চর্য আশ্রয়। লেখক - পাঠকের দ্বৈত সত্ত্বা আশ্চর্য সেতুবন্ধ তৈরী করেছে, অবশ্যই সেখানে পালনকর্তার (সম্পাদক মহাশয়) ভূমিকা স্বনিয়োজিত মহীরুহর মতো। তার সুরম্য সুরভিত আন্তরিক সাহিত্য - আবহ দিনে দিনে এক আশ্চর্য আরাম হয়ে উঠেছে হৃদয়ে মেধায়। কখনও পাঠক হিসেবে, কখনো লেখক হিসেবে কবিতাউৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠেছি। এ যেন সুস্থ সাহিত্যের আঙিনায়, নিজেকে অন্যের চোখে চিনে নেওয়ার সুযোগ করে দেয় কবিতা উৎসব। পরিশেষে বলবো, একজন নিঃস্বার্থ পাঠক হিসেবে প্রার্থনা করি, কবিতাউৎসব তার অনন্ত পথচলায় দিশারী দীপবর্তিকা হয়ে উঠুক আমাদের সাহিত্য পিপাসু অন্তরের। নিরাপদ হোক, আনন্দময় হোক কবিতাউৎসবের আগামী পথচলা।

রবীন বসু

 

আমি ২০১৬ সালে ফেসবুকে আসি। প্রথম যে ওয়েব পত্রের সঙ্গে আমার সখ্যতা ও সংযোগ স্থাপন হয় তা "কবিতাউৎসব"। ঝকঝকে স্মার্ট একটি ওয়েব ম্যাগ। অনুসরণ করেই বুঝেছিলাম আর পাঁচটা অন্তর্জাল পত্রিকার মত নয়, এর নিজস্ব একটা রুচি ও অভিমুখ আছে। সম্পাদক মহাশয়ের বলিষ্ঠ অবস্থান, সাহিত্যের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করে। এও বুঝলাম  সম্পাদক -এর গদ্য এবং পদ্য লেখার হাত ঈর্ষণীয়। সম্পাদক যেখানে রুচিশীল দক্ষ সেখানে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার মান যে উন্নত হবেই, তা বলা বাহুল্য। "কবিতাউৎসব" তাই জনপ্রিয়তার শীর্ষে গেল। বর্তমান সময়ের নবীন প্রবীণ প্রায় সব কবি, সাহিত্যিক এর পাতায় লিখেছেন।  কোন অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে বন্ধুদের মধ্যে ওয়েবম্যাগ নিয়ে আলোচনায় কবিতাউৎসবের কথা উঠে আসত‌ । সাথে সাথে তার কান্ডারির কথাও। আমি তো ভয়ে ভয়ে আমার সেরা লেখাগুলো পাঠাতাম। আর অপেক্ষা করতাম দুরু দুরু বুকে মনোনয়ন সংবাদের। এলে মুখে হাসি ফুটত। কত বৈচিত্র্যময় সব সংখ্যা তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। তারমধ্যে "আদিরসাত্মক সংখ্যা" ও "পরকীয়া সংখ্যা" আমার খুব পছন্দ ও ভালোলাগার। তবে গত "শারদীয়া সংখ্যা" বৈচিত্র্য, বৈভব, বিশালতা আর সম্পদে ভরপুর ছিল। মূল্যবান প্রবন্ধগুলোর গুরুত্ব ও সাহিত্যমূল্য ছিল অপরিসীম। কত নবীন কবির কবিতা পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। প্রবীণদের কবিতা পড়ে বিস্মিত হয়েছি। বর্তমান কবিতা, ছন্দ-ছন্দহীনতা, লেখকের দায়বদ্ধতা, তার অভিপ্রায়, সাহিত্যের উদ্দেশ, সবই আমি সম্পাদক মহাশয় এর কাছে শিখেছি, তাঁর লেখা পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমার সাহিত্য জীবনের প্রসারের ক্ষেত্রে এই পাঁচ বছর আমি কৃতজ্ঞ "কবিতাউৎসব"-এর কাছে।

মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর

 

কবিতাউৎসবের যাত্রা সম্ভবত শুরু হয়েছিলো ২০১৬ সালে। সেই থেকে  নিরবিচ্ছিন্নভাবে  প্রকাশিত হয়ে আসছে এই জনপ্রিয় ওয়েবজিনটি। প্লাটফর্মটির কর্ণধার আমার বন্ধু কবি ও প্রাবন্ধিক শ্রীশুভ্র হঠাৎ সেদিন ফোন করে জানালেন আগামী সংখ্যাই হবে কবিতাউৎসবের শেষ সংখ্যা। তাঁর এ ঘোষণায় বুকে যেন আচমকা শেল বিদ্ধ হলো। তার এ সিদ্ধান্তের কার্যকারণ নিয়ে যে যুক্তি প্রদর্শন করলেন তাতে দ্বিমত প্রকাশ করার অবকাশ নেই। শুরু থেকেই নিরলসভাবে কবিতাউৎসবের প্রতিটি সংখ্যা নিয়ম করে প্রকাশ করে আসছিলেন কবি শ্রীশুভ্র। বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটে থাকা বাঙালি কবিদের কবিতা সংগ্রহ করা, লেখা বাছাই করা এবং ওয়েবজিনের জন্য লেখা সেটিং করা চারটিখানি কথা নয়। এতো কাজ  একজন মানুষের পক্ষে  নিপুনভাবে করে যাওয়াটা সত্যিই অলৌকিক। দুঃখের বিষয়, আমরা বাঙালিরা সামষ্টিকভাবে যে সব কাজে বৈষয়িক স্বার্থ নেই তা করতে আমরা খুব একটা আগ্রহী নই। কবিতাউৎসবকে হয়তো এগিয়ে নেওয়া যেত যদি আমাদের যুথবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকতো। কবিতাউৎসব শীঘ্রই ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি বলবো, এই ওয়েবজিনটি কালের গায়ে ইতোমধ্যেই ছাপ ফেলে দিয়েছে। বাংলা কবিতার ইতিহাসে এত বড় প্লাটফর্ম আর নেই, ভবিষ্যতেও আর হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিশেষে বন্ধুবর শ্রীশুভ্রকে কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা। আমি নিশ্চিত জানি,  সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুটি বসে থাকার পাত্র নন, খুব অচিরেই হয়তো নতুন কিছু নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হবেন। সবাইকে ভালোবাসা।

মন্দিরা ঘোষ

 

ভালো করে পা ফেলেছি কী ফেলিনি, চোখে কবিতার  ঘোর, কলমের ডগার নার্ভাসনেস কাটেনি তখনও, ভোরের আলোর মতো কখন পথ পেতে দিলো কবিতাউৎসব ওয়েব ম্যাগাজিন আর সেই পথে টলমল পা রেখে  কখন সাবালক হয়ে গেলাম! কবিতা হোলো কী হলো না সেই দ্বন্দ্বের দোলাচলে থাকতে থাকতেই  যে দু একটি ভার্চুয়াল পত্রিকায় যোগাযোগ তারমধ্যে অন্যতম, বলা ভালো প্রধানত কবিতাউৎসবই সেই সাহস, সেই স্পর্ধা দিয়েছে গুচ্ছ কবিতা নাকি অকবিতা যা বোঝার মতো বোধে উন্নীত করার লক্ষে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে হাত ধরেছিল অবলীলায়,  এক আত্মপ্রত্যয়ের আকাশ হয়ে উঠেছে যা এক অন্তর্মুখী লেখনীকে প্রকাশ্যে ডানা মেলতে সাহায্য করে এসেছে সেই দিন থেকেই। হ্যাঁ, শুরুর দিকের সেই পথচলা থেকে বন্ধুর মতো পাশে পাশে আজও।  সেই ধারা অক্ষত রেখে কবিতাউৎসব আন্তর্জালে নিজেকে স্বমহিমায়  প্রতিষ্ঠিত  করতে সক্ষম হয়েছে। আজ অনিবার্য  ভাবেই সমস্ত পুরনো ধ্যানধারণা  নস্যাৎ  করে কবিতাকে ভার্চুয়াল জগত গ্রহণ করেছে নির্দ্বিধায়। হয়তো লেখার মান নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে! কিন্তু মন্দ না থাকলে ভালোর বিচার হবে কী করে! যে অর্থে রাত না থাকলে দিনের উজ্জ্বলতা! এই ভালো মন্দের সুক্ষ্ম বিচারে না হেঁটে  যে সময়ে একটি শিশু প্রথম রাস্তায় পা ফেলতে শুরু করে, তখন তাকে সামান্য সাহায্যের হাত টুকু বাড়িয়ে দিলে সে লম্বা রেসের ঘোড়াও হয়ে উঠতে পারে। শুধু অপরিণত বলে দূরে সরিয়ে না দিয়ে সাহস আর আশ্রয়  হয়ে উঠলে সেও কোনোদিন সোনার ফসল ফলাতে পারে! কবিতাউৎসব আজ সেই নবীনের স্পর্ধা আর সাহস হয়ে ওঠে  ধীরে ধীরে। কবিতাউৎসব  যখন একটা বড় প্রতিষ্ঠান  হয়ে উঠছে, তখন তাকে  থামিয়ে  দেবার প্রশ্নে মন খারাপ হয়, দীর্ঘ পথের চেনা রাস্তাটি হঠাৎ মানচিত্র  থেকে উবে গেলে যেমন! কবিতা উৎসব  থাকুক ভার্চুয়াল পাঠক আর লেখকের মেলবন্ধনের আশ্রয় হয়ে। মহীরুহ হয়ে ছায়া দিক কবিতা অকবিতার দোলাচলে।

ভাস্কর পাল

 

আমার এক হাত ছুঁয়ে আছে উত্তাল মহাসাগর আর এক হাতের স্পর্শে অনুভূতি জুড়ে অনুরণন তোলে আমার জন্ম মুহূর্ত। জীবন বোধের অগভীর তল থেকে শুরু হয় আমাদের প্রাত্যহিকতা। নিজেদের জীবন প্রক্রিয়ার চারপাশে অতৃপ্তি আর তৃপ্তির পারস্পরিক আর আপেক্ষিক দ্বন্দের ফলে সামগ্রিক জীবন বোধের গভীরে পৌঁছাতে পারছিনা আমরা। আর এর ফলেই আমরা হারিয়ে ফেলছি বৃহৎ মানব জীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি জীবনের মূল প্রেক্ষিত। ঠিক এই পরিসরে বর্তমানের অনুভবে অতীতের অভিজ্ঞতায় সিঞ্চিত করে সচেতন উপলব্ধি আর ভবিষ্যতের বাস্তব কল্পনার সাহিত্যিক মেল বন্ধনের কাজটি বছর বছর ধরে সুনিপুন ভাবে করে চলেছে কবিতাউৎসব। একুশের আলোক শিখায় যার জন্ম, যে একুশের বলে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে চলেছে নিত্যদিনের প্রাত্যহিকতায়। যখন কথা বলি একুশকে নিয়ে আমাদের শিরায় শিরায় অনুরণিত হয় আবেগ। একুশ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। একুশ আমাদেরই অস্তিত্বের আধার, এই একুশই এক উত্তরণের পথ, একুশ অসাম্প্রদায়িক একুশ ধর্ম নিরপেক্ষ। একুশের আবেগকে সাথে নিয়ে বহু নামী, অনামি কবির লেখার মঞ্চ উপস্থাপনার মুন্সিয়ানায় হয়ে উঠেছে এক উৎসবের প্রাঙ্গণ। আমরা অনুভব করেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনামির মতো আছড়ে পড়া অক্ষরবৃত্তই যে কবিতা নয়। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে খ্যাতির আলো পড়া শব্দবন্ধই যে কবিতা নয়। কবিতা যে আরও বড়ো কিছু। সাহিত্যচর্চা বা কাব্যচর্চা অবসর বিলাস নয়। জীবনকে ছুঁয়ে ছেনে অনন্ত সময় ও মহাজীবনের পটে গভীর ভাবে অনুভবের বিষয়। যে অনুভব মানবিক উপলব্ধির সীমানায় মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। জীবন সংগ্রামের প্রতিদিনের অলিন্দে যাবতীয় অন্ধকারকে প্রতিহত করতে প্রেরণা দেয়। অনুপ্রাণিত করে নব জীবনের উদ্বোধনে। আর এই প্রাসঙ্গিকতা আমাদের উপলব্ধি করিয়ে দিয়েছে কবিতাউৎসব। আমরা এক নীহারিকার জন্ম দেখলাম, আকাশ জুড়ে তার উদ্ভাসিত আলোক মালায় বিচরণ করলাম আজ তাঁর মূল্যায়ন ও স্মৃতিরোমন্থন বড়ই কষ্টদায়ক। আমার আশা সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে কবিতাউৎসব এমন করেই নবাগত কবি ও লেখককে তাঁর উৎসব প্রাঙ্গণে স্থান দেবে।

বিকাশ চন্দ

 

বড় মোবাইল (এন্ড্রয়েড ) ফোন ছিল না। জুন ২০১৭ হাতে এলো বড় মোবাইল। ফেসবুকে বিভিন্ন লেখাজোখা পোস্ট দেখতে দেখতে "কবিতাউৎসব" র প্রতিমাসের অনবদ্য কবিতার আরশি অঙ্গনে ইচ্ছে হয়েছিল আমার কবিতার মুখ দেখতে। সে কারণেই আগস্ট ২০১৭ তে লেখা পঠানো শুরু তারপর থেকে সময়সীমা বেঁধে ফেলার দিন পর্যন্ত একটা আত্মিক বন্ধনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়লাম। পাঁচ বছর সময়সীমা ঘোষিত হওয়ার পর অজানা দলা পাকানো কিছু একটা গলায় তালগোল পাকাচ্ছিল --- একে কি কষ্ট বলে না অন্যতর অকাল রক্ত নাচনে বিষণ্ণ অবসাদ। হয়তো বা...।  মনে ছিল "কবিতাউৎসব " চিরঞ্জীব হোক, এভাবে অভাবনীয় মুখ বন্ধে আন্তর্জালের কলকল অশ্রু নদী আনন্দ ঢেউ আলোর উৎসবে নিয়মিত নদী সমুদ্র গাছ পাখি ফুলেদের অমলিন মেলবন্ধন হয়তো অমলিন থেকে যাবে,  অচেনা পথের ধুলো মাটি মাখবো, বৃষ্টি রোদের স্নায়ু খেলায় দেখবো বাঁধা নৌকা আর নদী স্রোতের উদাস নাচন। কমতো নয়, প্রতি মাসে আটচল্লিশ জন কবির একশত চুয়াল্লিশ কবিতার ডালি, কতনা ভাষার ভেতরে জেগে উঠতো শরীর রক্ত মাংসে গড়া শব্দময় জাগর কথার বহুতর বিবর্তন, অনেকটা ঋজু মানুষের হিম্মতের মতো কথা বলে উঠতো । "অব্যয় কাব্য"র সম্পাদক মণ্ডলীর মুন্সিয়ানায় বিবর্তনের কথায় থেমে থাকে না কিছুই, তাই বোধহয় " অব্যয় কাব্য"এর  সীমানা নির্ধারণ করে দিলেও সংশ্লিষ্ট কবি সাহিত্যিকের আত্মিক রাজত্বে প্রিয় আলোমুখ হয়ে প্রেম প্রণয়ের কথাকলি হবে।

বন্যা ব্যানার্জী

 

কবিতাউৎসব। খুব ভয়ে ভয়ে একটি কবিতা পাঠিয়েছিলাম। ভয় হয়েছিল এইকারণে এই ব্লগের লেখা, সম্পাদকীয়  আমি পড়েছি। সব লেখাই উচ্চমানের এবং মন ছুঁয়ে যায়। আমার কবি বন্ধুরা প্রায় সকলেই  যুক্ত আছেন পত্রিকাটির সঙ্গে। কবিতা পাঠানোর পর প্রাপ্তি স্বীকার তো করলেন মাননীয় সম্পাদক, কিন্তু লেখা মনোনীত হলো কি না সেই বিষয়ে আশঙ্কা রয়ে গেলো। কারণ আমার ভীষণ ইচ্ছা ছিল কবিতাউৎসবের পাতায় আমার লেখা থাকুক। তারপর তো সূচিপত্রে আমার নাম দেখে যার পর নাই খুশি হয়েছিলাম। খুশিটি অব্যাহত ছিল। তবে কয়েকটি সংখ্যায় নিজের গাফিলতির জন্যই সময় মত লেখা জমা দেওয়া হয়নি। সম্পাদক এই ব্যাপারে কোনো পক্ষিপাতিত্ব, কোনো অনিয়ম কখনও করেন না। খারাপ লাগলেও তাঁর এই  বিচার বিবেচনায় আমি স্বশ্রদ্ধ ছিলাম। কিন্ত হঠাৎই একটি পোষ্ট দেখে কেমন থমকে গেলাম। আমাদের ভালোবাসার "কবিতাউৎসব" তার পথ চলার ইতি টেনে দিচ্ছে। মনে হাজারো প্রশ্ন!‌ কেন? সেই সঙ্গে অনুভব করলাম আত্মীয় বিয়োগের ব্যাথা। হ্যাঁ ।কলমের সঙ্গে,ভাবনার সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে  মিশে কবিতাউৎসব আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছিল। ভীষনই খারাপ লাগছে। অনুরোধ সম্পাদক মহাশয়কে- যেন আর একবার তিনি সবকিছু ভেবে দেখেন।

পৃথা রায় চৌধুরী

 

কবিতাউৎসব’! এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি আমার কাছে। এ তো সামান্য এক কবিতা প্রকাশের ব্লগজিন নয়, এ যে সত্যিকারের এক কবিতার উৎসবের নাম। ২০১৬র মার্চ মাস থেকে এই উৎসব প্রাঙ্গণে আমার নিত্য আনাগোনা। এই আনাগোনায় কখনও সুর ভাসিয়ে দিই নিজের দুচার পংক্তি কবিতার, অথবা নিজেই ভেসে যাই কতশত সুরের লহরীতে। এতো আদরের, এত যত্নের এক ক্যানভাস, এও এক গন্তব্যে এসে “বিদায়” বলে যাবে, এ যেন কল্পনাতীত। তবু, এমন সময়ে এসে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক ও সমগ্র সম্পাদকমণ্ডলীকে জানাই অন্তরের শ্রদ্ধা, এই ক্যানভাসকে চিরশাশ্বত করে তোলার জন্য। নানা জায়গায় কবিতা উৎসব হয়, যাওয়া হয়ে ওঠেনি কখনও, কিন্তু এই যে কবিতার এক বিপুল আয়োজন, এখানে “ড্রপসিন” হবার কথা ভাবতেও পারিনি, আর তাই যখন তখন যে কোনও চিত্রপটে মিশে যেতাম নানা কাব্যশৈলীর অনুরাগে। এখানে নবীন-প্রবীণ ও দুই বাংলার এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র রচনার সাক্ষী থেকেছি, প্রত্যক্ষ করেছি কবিতার কবিতা হয়ে ওঠা, নিজের কবি কলমকে বারে বারে যাচাই করে নিতে পেরেছি। ক্রমশ নিজেকে ধাপে ধাপে এই উৎসবের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখিয়েছি যাতে কবিতার প্রাঙ্গণে সামান্য হলেও এক কাব্য-আলপনা এঁকে রাখতে পারি, আর দুহাত বাড়িয়ে কবিতাউৎসব টেনে নিয়েছে আমাকে আরও বহু কলমের সাথে নিজের বুকে। সমাজের প্রতি দায় থাকে কবির, সর্বদা এই কথা উচ্চারিত হয়েছে এই উৎসব প্রাঙ্গণে। বড়ো নাটুকে লাগবে কি, যদি বলি, কবিতাউৎসবের শেষ সংখ্যা মেনে নিতে বড়ো কষ্ট হচ্ছে? বলতে ইচ্ছে করছে সোচ্চারে,

পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়

 

কবিতাউৎসবের সম্পাদক মহাশয় হঠাৎই যেদিন ফোন করে বললেন, "এটাই শেষ সংখ্যা"। আমি প্রথমত একটু অবাক হলাম!  বললাম, সেকি! কেন? বেশ তো চলছিল। উনি উনার অসুবিধার কথা বললেন। প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথার মতই আমার নাকের পাটা নিজের অজান্তেই চিনচিন করে উঠেছিল সেইদিন। সূচনার প্রথম দিন থেকেই যে উৎসবের সঙ্গে ছিল আমার কবিতার অন্তরঙ্গ সহবাস।  সেখানেই সহসা বেজে উঠল বিদায়ের সুর। স্মৃতি কাতরতা জড়িয়ে ধরল আষ্টেপৃষ্ঠে। মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা। এই কবিতাউৎসবের কর্ণধার, প্রিয় সম্পাদক মানুষটি পরম আবদার নিয়ে লেখা চাইতেন। এত ভাল লাগত! ভুলে যাওয়া স্বভাব বলে বারবার তাগাদা দিতেন। অবাক হতাম! আমি ভুললে উনার কি?  সম্পাদক তো অনেক আছেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকার। কিন্তু এমন ভালবেসে অন্য কবির লেখাকে সন্তান স্নেহে সমাদর কদর করতে দেখেছি খুব কম, হাতেগোনা। লেখা পাঠালেই যে ছাপা হত তা নয়। চলত চুলচেরা বিশ্লেষণ!  যতটা পারা যায় নিখুঁত লেখাটি বের করে নিতে চাইতেন। সেই লেখা আরো আরো কবিদের সঙ্গে মিলেমিশে মনের মধ্যে উৎসবের আমেজ এনে দিত। বিষয় ভিত্তিক নির্বাচিত লেখাগুলো ছাপার অক্ষরে জ্বলজ্বল করে উঠত! সহজ কথায় বলি, কবিতাউৎসব সম্পাদক মহাশয়ের একান্ত প্রচেষ্টার ফসল। একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।  যেখানে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নাম না জানা কবিদের তিনি প্রচারের আলোয় এনে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রিয় সম্পাদক মহাশয়, আপনি আমাকে ঋদ্ধ করেছেন। আপনার কাছে ঋণী হয়ে থাকলাম আজীবন।