রেশমা লস্কর
চোখ সওয়া
মৃত্যুমিছিল
এক নীল রঙা ভূগোলক,সবুজের আলপনা আঁকা
মেঘেদের চাদর মোড়া , বুক ভরা নদী আঁকা
বাঁকা।
পাখিদের কলকাকলি,জীবেদের বহু পরিসর
সুন্দর ধরাতল মাঝে , মানবের হলো অভিসার।
অভিসার প্রতিশোধ
স্পৃহা ,
অভিসার
হিংসা গ্লানি
নীল রঙে রক্তের ছিটে
, সবুজের বনে
হানাহানি।
হত্যার স্রোতে ভেজে
মাটি, খুনোখুনি আর
লাঠালাঠি
আমার দুই চোখ সওয়া
সবই, স্বার্থের ঘরে
দোর আঁটি ।
ওই তো কয়দিন আগে, সীমান্তের কাঁটাতার
মাঝে
নিথর এক মানবের শিশু, সৈকতে মুখ বুজে
কাঁদে।
জমিনের অধিকার বলে , জয় এলো গুলি তরোয়ালে
ছিন্ন সে নিষ্পাপ
দেহে ,
ধর্মের
রঙ খুঁজে ছিলে !
পোশাকি ধার্মিক বেশে
, কত প্রাণ বলি
সন্ত্রাসে
বারুদে আগ্নি দানে , রাজনীতি মুখ টিপে
হাসে।
পাশবিক মানব আচরণে ,ধর্ষণ দেবালয় কোণে
আমার দুই চোখ সওয়া
সবই, বিশ্বের দুর্গতি
ক্ষণে।
বিলাসের বহুতলে উঠে, প্রকৃতির বক্ষটি
লুটে
দাম্ভিক মানব জাতি , যুদ্ধের নেশায় ছোটে
।
দূষণের করাল গ্রাসে, সময় আজ বিশের বিষে
অসহায় সভ্য মানুষ , অদেখা দানবের রোষে ।
অন্যের ঘর পুড়েছে, আপনার ঘর বাঁচিয়ে
মৃত্যুর মিছিল দেখে
নিয়েছি মুখ ঘুরিয়ে ।
চোখ সওয়া মৃত্যু
মিছিল,
আজ
আমার ঘরের দ্বারে
কতদিন বাঁচব আমি ; গৃহদ্বার বন্ধ করে ?
ঝলসানো চাঁদ
রেল লাইনের মাঝে পড়ে
আছে
গোটা আট ঝলসানো রুটি;
রক্তের ছিটে মেখে
...পাথরের ধুলো মেখে ..
আলো আঁধারে পড়ে আছে
পূর্ণিমা রাতের ঝলসানো চাঁদ ,
দেখো দেখো পাথরের
মাঝে পড়ে আছে
ঝলসানো চাঁদ !
চাকায় পিষ্ট হওয়া
ক্ষুধা নামক যন্ত্রটি
টুকরো টুকরো হয়ে....
হয়ত বা
পড়ে আছে আশেপাশে কোনো খানে...!
মাইলের পর মাইল
হেঁটে চলা পা দুটি
চাকায় পাক খেতে খেতে
হয়ত পৌঁছে যাবে...কোনো একদিন ;
ওদের গাঁয়ে....
যে চোখে ওঁরা জীবনের
স্বপ্ন দেখেছিল ,
বেইমানি করে গেল সে
....!
আঁধার রাতে
পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় নেমে আসে
বাড়ি ফেরার
স্বপ্ন...ভেসে ওঠে মেঠো পথ ...
মায়ের
আঁচল...স্ত্রীর সোহাগ...সন্তানের মুখ..
তারপর...তারপর....
তারপর একটা মালগাড়ির
শতাধিক চাকা.....
হেঁটে চলে যায় ওদের
স্বপ্নিল সুখের দেশে....
পাক খেয়ে ওঠে ওদের
শরীর...
আকাশের চাঁদ
ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে ওদের সাথে ।
দেখো দেখো পাথরের
মাঝে পড়ে আছে পূর্ণিমার চাঁদ ...!
শ্রমিকের ঘামে ভেজা
গামছায় জড়ানো পূর্ণিমা চাঁদ...!
মূল্যহীন
...অবহেলে...
সময় ও রাষ্ট্রের
চাকায় পিষ্ট হওয়া শ্রমিকদের দল......
এভাবেই পৌঁছে যায়
তাঁদের স্বপ্নের দেশে.... !
ছিঁড়ে যাওয়া দড়ি
কত শত পথ কাঁটা দিয়ে
ছিল মোড়া
কত শত পথ ভাঙা
পাথরের গড়া ,
কত শত পথ একা অবহেলা
ঘেরা
কত শত পথে সাঁকো ছিল
ভাঙাচোরা,
সবকটি পথে হেঁটেছি
নগ্ন পায়ে
কলঙ্কিনীর কালি মেখেছি গায়ে ।
কত শত ঝড়ে আছড়ে
পড়েছি একা
কত শত ঢেউ পাইনি
কূলের দেখা,
কত শত দিন খুঁজেছি
তোমার দ্বার
কত শত ক্ষণে মন পুড়ে
ছারখার ,
বন্ধ দ্বারের চৌকাঠে
চেয়ে চেয়ে
ফল্গু ধারা বয়ে গেছে
চোখ বেয়ে ।
বইতে বইতে এসেছি যে
বহুদূর
অন্তরে তাই বিদায় বেলার সুর ,
বন্ধ দ্বার খুলে ডাক
দাও যদি
দেখতে পাবে শুকনো
জীর্ণ নদী,
কখনো যে নদীর জলে নেয়ে
কবির কলম ছন্দে উঠত
গেয়ে ।
পাথরের কোলে জীর্ণ
সাঁকো খানি
সইতে পারেনি জীবনের
টানাটানি,
ভেঙে পড়ে আছে শুকনো
নদীর চরে
টুকরো কিছু উড়িয়ে
দিয়েছে ঝড়ে ,
ছিঁড়ে পড়ে থাকা দড়ি
দুটি দুই পাড়ে
স্বজন বিরহে অন্তরে
কেঁদে মরে....।
ঝড়ের উপর ঝড়
ঝড়ের উপর ঝড়
কেমন করে আগলে রাখি
আমার কুঁড়ে ঘর
ঝড়ের উপর ঝড়।
আকাশ ভাঙা জল
বুকের ভিতর মুচড়ে
ওঠে
বাঁধ ভাঙনের পল
আকাশ ভাঙা জল।
হারিয়ে যাওয়া ছাদ
পরার শাড়ি কলসি বাটি
সব কিছু বরবাদ
হারিয়ে যাওয়া ছাদ।
ভাসল মাঠের চাষ
সাগর বওয়া নোনতা
পানি
ডুবিয়ে দিলো আশ
ভাসল চাষের মাঠ।
পেটের ভিতর টান
ত্রাণের চিঁড়ে আসলে
নারে
ঘরে ক্ষুধার্থ
সন্তান
পেটের ভিতর টান।
একটি মেয়ের গল্প
জীবন পথে হারিয়ে
যাওয়া
একটি মেয়ের গল্প বলি
,
কেমন করে ঠাঁই হলো
তার
এই শহরের আঁধার গলি
।
জীবন পথে হারিয়ে
যাওয়া একটি মেয়ের গল্প বলি,
শৈশব তার ভালোই ছিল
বাবার স্নেহ মায়ের আঁচল
কৈশোরে তার ঢাকল
মেঘে
নষ্ট প্রেমের প্রথম ছোবল
।
বাপ বললে ...
পোড়ামুখী ,বাপ ঠাকুরের নাম
ডোবালি
মা বললে ...
কেমন করে মুছবি রে
এই পাপের কালি !
অবুঝ সে মেয়ে প্রথম প্রেমের ছল চাতুরির চিহ্ন কোলে ,
সাত পুরুষের মান
বাঁচাতে ঝাঁপ দিলো সে নদীর জলে ....
সাত পুরুষের মান
বাঁচিয়ে
ডুবছে দেখো নষ্ট নারী ....
চোখ বুঝিয়ে অন্ধ
সমাজ
পাপের বোঝা একলা তাঁরই!
হায় রে সমাজ; হায় রে বিধান;
ডুবছে যে তোর গর্ভধারী....
সাত পুরুষের মান
বাঁচিয়ে
নদীর জলে গর্ভধারী !..
তলিয়ে যাওয়া নদীর
স্রোতে
হারিয়ে যাওয়া নষ্টনারী ....
তীর খুঁজে সে পায়
যদিও ;
আঁধার ঘেরা চারটি ধারই ..
সাত পুরুষের মান
বাঁচাতে
তলিয়ে যাওয়া একটি নারী ..
হায় রে সমাজ হায় রে
বিধান
ডুবছে যে তোর গর্ভধারী.......
ডুবছে যে তোর গর্ভধারী....I
কলম
কলম তোমায় খুঁজে বেড়ায়
আমার দরিদ্র দেশ
কন্ঠ যেন থামিয়ে না
দেয়
হিংসা ও বিদ্বেষ
কলম তোমায় খুঁজে
বেড়ায়
আমার দরিদ্র দেশ ।
কালি তোমার শুষে না
নেয়
দল তন্ত্রের জোঁক
শব্দ তোমার মুছে না
দেয়
বাগিয়ে কালো চোখ
কালি তোমার শুষে না
নেয়
দল তন্ত্রের জোঁক ।
কলম তুমি ভয় পেয়োনা
সত্য পথে চলতে
শব্দ ছন্দ গান
কবিতার
কন্ঠ দিয়ে লড়তে
কলম তুমি ভয় পেয়োনা
সত্য পথে চলতে ।
কলম তুমি বেছে নিও
শুভ্র সাদা কাগজ
অন্ধকারে উড়ছে হরেক
রঙের রঙিন কাগজ
কলম তুমি বেছে নিও
শুভ্র সাদা কাগজ ।