তনিমা হাজরা
দ্যাবতার_টুকটু_বেসি
তুমি ঠিক দ্যাবতা লও
হে ঠাকুর,
তার চে টুকটু বেসি,
তুমি যেন ঠিকটি আমার
বুঢ়া ঠাকুরদাদার মথোন,
ছুটব্যালায় জাড়ের
দিনে সে যেমন
জড়াই ধ্যরে ক্যাঁথার
ভিতর সিঁধাই লিথক,
খিদা পেলে চালভাজা
কিনে খেথ্যে পাঁচ লয়া পুইস্যা দিথক
ট্যাঁকের থিক্যে
পাঁচটি লয়া বাইর কইর্যে
হাথ্যে দিথক,
বরফকলে আইসকিরিম
কিনথ্যে যেথম,
তুমি ঠিক সেইরখমেই,
কিরখম দরদ মাকা,
ঠিক য্যামন গরম গরম
নুন নংকায়
মাড়মাখানো ভাতের
কাঁসি,
তুমার ওই কথাগুলান,
ঠাকুরদাদার গানেই
শিখা,
তাই তুমাখেই ভরসা
কইর্যে বইলথ্যে পারি কষ্ট কথা।
ই বাবা, ব্যাঙের মাথা,
কি যে বইলচি ফেল্যে
দিকছুট সব আবোল তাবোল,
আমি এখ বাগদী মিয়া,
টেরেনে ভিক্ষা করি,
অন্ধ ঠাকুরদাদা গান
করে
আর আমি তার গানের
সাথ্যে আখরে সুরটি ধরি।
শিখি নাই লিখা পড়া,
আমি কী জানব কচু,
কি বঠ্যে রবিঠাকুর,
আসলে রায়বাবুদের
রুমকিদিদি
বইল্যেছিলেক
ই সব গানগুলা সব
লিখ্যেছিলেক
কুন এক দাড়িমুখা
রবিঠাকুর,
আমুও সিসব
হারমুনিগান শুন্যে শুন্যে
তুমায় চিনি,
ত্যাখোনও জাইনথম নাই,
ঠাকুরদাদার গানগুলা
সব আসলে তুমার লিখা,
তুমার ওই গানের কলি
আমাখেও জাপুট্যে ধরে,
আমাখেও পাগল কর্যে
তুমার ওই সুরের খেলা,
মা'টা আমার গঞ্জ হাটে
শরীলের ব্যবসা করে
আনাজ আর হাটমশলা
বিহানবেলায় আনথ ঘরে,
ঘরে তার থাকার
মইদ্যে ছিল
অন্ধ লিকলিকা বাপ,
সারাদিন গাইথ্য শুধু, আহা কী গানের গলা।
য্যাখন আমি বছর
পাঁচেক,
মা'টাও মইর্যে গেলেক,
ত্যাখোন থ্যিকেই
অন্ধ ঠাকুরদাদা
মা হইয়্যে আগল্যে
লিলেখ,
প্যাঁটের ভাতের হদিশ
লিথ্যে
ত্যাখন থ্যিক্যেই
গাইতে শিখা,
রবিঠাউর দ্যাবতা কি
গ,
দ্যাবতারও বেসি
বঠ্যেক,
সি আমাদের
অন্নদাতা।।
বিপন্নপ্রজাতি
আমিও কী এতটা নিরাপদ
আছি
দক্ষিণ রায়,
আমারও কী আশেপাশে
নেই হেতালের জঙ্গল,
রোজ রোজ দীর্ঘ দীর্ঘ
দৌড়,
নখের আগায় লাগা ঘাম, মাংসের কুচি,
আর প্রতিদিন রক্ত
সমর।
পায়ের তলার মাটি, পিছল এবং পাঁক,
আড়ালে লুকিয়ে থাকা
কুহকের ডাক,
আমারও কী তোমার মতন
উলঙ্গ হলে
গায়ে দেখা যাবে
ডোরাকাটা দাগ,
কে গুনেছে আদমসুমারী,
কে জ্বালিয়েছে বলো
পিদিমের বাতি,
আমিও তোমার মতো
বিপন্ন প্রজাতি,
হে দক্ষিণ রায়,
আমারও তোমার মতো
শিকার ও ভোজনের পরে
বড়ো ঘুম পায়।।
মৃত্যুরাগ
মৃত্যু আমার পাশের
বাড়ির লোক
মুখ ঢেকে রাখা
মুখোশে
এবং হাতে তার
দস্তানা,
পালে পার্বণে বাটি
চালাচালি,
খোঁজ।
মৃত্যুর সাথে
চোখাচোখি হলে মৃদু হাসি
দূর থেকে হাই হ্যালো
ছাদে উঠলেই দেখি
ওদের উঠোনে
হবিষ্যি রাঁধা হচ্ছে
বারোমাসই।
মৃত্যুর গায়ে
ভগ্নস্তূপের দাগ
উল্টানো চটি,তোবড়ানো ঘটি, ভেসে যাওয়া সুখ,
গুপ্ত ক্ষিদের
স্বরলিপি,
তবুও মৃত্যু হোলিতে
ছিটায় ফাগ।
মৃত্যুর বাড়ি যাবার
ইচ্ছে খুব
মাঝে শুধু কিছু
মায়াটান
তার, সার্কিট, সুইচ বোর্ড,
শুধু স্নানঘর জানে
সবার নিজের উলঙ্গ মৃত্যুরূপ।।