মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

শ্যামশ্রী রায় কর্মকার


শ্যামশ্রী রায় কর্মকার

খুদকুঁড়ো এই জীবন

নেইমানুষের গল্প কাঁধে হাঁটছে কবি একলা পথ
বুকের ভিতর মেঘজমাট রাত্রিদিন
পথের ওপর শুকনো মুখ
নদীর মতোন বইছে চোখ
স্বপ্নরঙের সব পলক আজ রঙবিহীন
নেইমানুষের গল্প কাঁধে ধুঁকছে কবি, একলা পথ
বুকের পাথর মেঘজমাট রাত্রিদিন

সাপের মতো বাঁকছে দ্যাখো পিচের রাস্তা, ট্রেনলাইন
সাপের মতোই  হাঁমুখ তার ভয়ংকর
এক গ্রাসে সহস্র লোক
দৃষ্টি বিষ, শেষের শ্লোক
নিঃশ্বাসে তার চিতার মতোন পুড়ছে ঘর
সাপের মতো দুলছে দ্যাখো পথের ফণা, ট্রেনলাইন
চোয়াল খুলে তাকিয়ে আছে ভয়ংকর

ইতিহাসের পাতায় যারা রক্তবিন্দু সাম্প্রতিক
তারাই ছিল ক্রমিক নং কাজের খাতায়
আধপেটা ভাতের জীবন
খিদের বড়ো আপনজন
জলের দরে মৃত্যু কেনাও তাদের দায়
ইতিহাসের পাতায় এরাই সংখ্যা থাকে সাম্প্রতিক
এরাই থাকে ক্রমিক নং কাজের খাতায়

দুএক পঙক্তি যন্ত্রণা ও দুএক স্তবক চিৎকারে
দিনবদলের স্বপ্ন তবু দেখবে লোক
কত হাজার গিঁটের পর
খুলবে দরজা খুলবে ঘর
ভাগ্য আবার হাসবে ফিরে একঝলক
দুএক কলম রক্ত আর দুএক ছত্র চিৎকারে
দিনবদলের স্বপ্ন তবু দেখবে লোক





রুটি

সরে এসো
পৃথিবী ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে একটি ট্রেনলাইন
নিশ্চিন্ত আশ্রয় ভেবে শুয়ে পড়লেই
ঘুমের ওপর দিয়ে হুহু করে চলে যাবে ট্রেন
কয়েকটা শুকনো রুটি পড়ে থাকবে দেহের তলায়
রুটি
যাকে পেতে গিয়ে চাঁদকেও ছিঁড়ে ফেলা যায়





যে জীবন আজ অকস্মাৎ

অনুপমা
এমনই মায়াবী নামে ডেকেছিল পৃথিবী আমাকে
দুটি করতল ভরে দিয়েছিল শষ্পশ্যাম মায়া
আয়ু এক নিবিড় জ্যোৎস্না
অজান্তে ছড়িয়ে ছিলো আমাদের মতো কিছু জন্মান্ধের হাতে

আজ যেদিকে তাকাই, শুধু সারিসারি বিষণ্ণ দরজা
মৃত্যুর ধূসর খাম কার হাতে কবে এসে পড়ে
এই ভয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে আছে সমস্ত দোকান
যে কটি ভয়ার্ত আদল দেখি বারান্দায়, ছাদে
তারা কি আমারই মুখ?
দ্যাখো, ওদের দুচোখে এক বিশুদ্ধ ম্লানতা
যন্ত্রণার নীলবর্ণ দাগ

গোলাপি চাঁদের গায়ে আজও কত আশ্চর্য মায়া
যেন কী পরম স্নেহে হাত রেখেছে সে তার আত্মজার হাতে
পৃথিবীকে মনে হয় হেরে যাওয়া ক্লান্ত যুবতী 
হেমন্তে গাছের মতো ঝরে যাচ্ছে তার সুখসংসারের পাতা
যে ব্যধি জড়ালো তার স্নেহ
সে অসুখ আমাদের আত্মমগ্ন স্বার্থ-প্রবণতা

সুস্থতা দূরের স্বপ্ন, আকাশেরই মতো এক অধরা মাধুরী 
একথা তুমিও জান, মিতা
এই আয়ুরেখা ধরে তুমি আমি হাঁটব তবুও
আমাদের হাতে থাক ভালোবাসা আর বিষণ্নতা