মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

শতরূপা চক্রবর্তী


শতরূপা চক্রবর্তী

বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ

বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ

কার্নিশ চুঁয়ে টুপটাপ ঝরে পড়া জলকণার

আশ্বাস বাণী "আছি, থাকবো আরো কিছুক্ষণ"

চোখ বুজে কেটে যায় আরো কিছুটা সময়

দূরে কোথাও নাকি রামধনু জেগেছিল আজ

রামধনু সময়ের রং... সবাইকে ছোঁয় না

কিছু রং অদেখাই থাক...কিছু সুখ অধরাই ভালো

একদিন বুক পকেটে জোনাকি ছিল যার

সে নাকি আজকাল অন্ধকার পুষে রাখে মনে, ঘরের কোণে

সব গল্প তোমার আমার হবে এমন কথা তো ছিল না কখনো

আমাদের কিছু স্মৃতি আছে... অতীত নেই, ভবিষ্যৎ নেই

সিনেমায় হাতে হাত রেখে নায়ক নায়িকা হেঁটে যায়

বাস্তবে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং.. ভালোবাসা ব্র্যাকেটে




                                                  

আমার শ্রাবণ

আমার শ্রাবণ,

ঠিক কবে তোমায় ভালোবেসেছিলাম

আজ আর মনে নেই

হয়তো সেই সময় থেকে

যখন পৃথিবী ছিল একটা উত্তপ্ত গোলক মাত্র

সেই সেবারেই কি তোমার স্পর্শে

শীতল হয়েছিলাম আমি?

জানিনা..

কি ছিল সেই ছোঁয়ায় কাউকে বলতে পারিনি

নিজেও কী ছাই খুব কিছু বুঝেছিলাম

শুধু এটুকু জেনেছিলাম সেইক্ষণ থেকে

আমার সমস্ত জমে থাকা রাগ অভিমান

যখন আগ্নেয়গিরি হয়, ঠিক তখনই তুমি আসো

আমার শ্রাবণ হয়ে

বারান্দা থেকে হাত বের করে স্পর্শসুখ অনুভব করি

তারপর একে একে কপাল গাল চিবুক ছাড়িয়ে

বহুদূর বয়ে চলো তুমি.

আমার মধ্যেকার গর্জে ওঠা প্রতিবাদ ভিজে নেতিয়ে পড়ে

বৃষ্টির ফোঁটা আমার কল্পনায় মিশে

এক অপূর্ব জলরঙের ছবি আঁকে

সে ছবিতে ভালোবাসা ছাড়া

আর কোনো গল্প নেই

বৃষ্টি শেষে আমাদের মিলন রংধনু হয় আকাশে







অজান্তে

ভালোবাসি ভালোবাসি... ভালোবাসবো আজীবন

ধ্বনি প্রতিধ্বনির ফারাক বুঝতে বুঝতেই

পেরিয়ে যায় অনেকগুলো বর্ষাকাল...

এক ছাদ এক বিছানা পাশাপাশি রাখা

দুটো চায়ের কাপের মাঝে

দূরত্ব বাড়তে বাড়তে আলোকবর্ষ পেরোয়

কখন যেন অচেনা হয়ে যাই তুমি আমি...অপরিচিত নই

অন্তর্ভেদী পোড় খাওয়া দৃষ্টি নিমেষে ধরে ফেলে

একে অপরের দোষ ভুল অন্যায়

গুণ গুলো শূন্য দিয়ে গুণ হয়

গাণিতিক নিয়মে গুণফল শূন্য

তিক্ততা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে

সাদা কালো খোপে

হিসেব কষে এগিয়ে পিছিয়ে আনা

নৌকা, বোরে, গজ

দুর্বল রাজা, রানী ভীষণ দামি

অতীতের সুখস্মৃতি বিস্মৃতির অলিগলিতে

পথ হারায়

কতকাল ভালোবাসার কথা বলা হয়নি

চোখে চোখ রেখে হাতে রেখে হাত

সুখী থাকার অভিনয় রপ্ত করতে করতে

হারিয়ে ফেলেছি সত্যি আমি...সত্যি তুমিকে

কবে যেন মিথ্যে আমরা হয়ে গেলাম দুজনে

অজান্তে







হঠাৎ দেখা

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা’ তোমার সাথে..

চুপ কথার সেতু পেরিয়ে আমাদের স্মৃতি গুলো

একে অপরকে ছুঁয়ে যায়...তুমি আমি চুপ থাকি।

নীরবতা ভেঙে কাজের অকাজের আলাপচারিতা করাই যায়

কি জানি এসুযোগ আর আসবে কিনা

তবু চুপ থাকা...স্মৃতির সরণি বেয়ে

বারবার ফিরে যাই সেই ফেলে আসা আদরবাসার দিনে...

যেখানে ভালোবাসা নিয়ে কোনো প্রশ্ন চিহ্ন ছিল না

শুধু আঙ্গুল ছুঁয়ে এক উপন্যাস প্রেম

উজাড় করে দিতাম আমরা...মনে পড়ে?

একবার মনে হলো উঠে যাই... পাশে বসে বলি

আমাদের গেছে যে দিন

একে বারেই কি গেছে ?”

কি জানি বললাম কিনা.

তোমার আচরণেও অস্থিরতার স্পষ্ট ছাপ..

হয়তো অনেক প্রশ্ন তোমারও আছে

অনুচ্চারিত সেই সব উদ্বাস্তু প্রশ্নেরা

কাঁটা তারের দুদিকে মুখোমুখি দাঁড়ায়।

ফ্লাস্কের চায়ের ধোঁয়ায় আবছা হই তুমি আমি

আলাদা আলাদা গন্তব্যের জন্য

আমরা একই স্টেশনে নামি

নাহ্ , ওয়েটিং রুমে

কোনো ‘ইজাজত’ এর গল্প লেখা হয় নি তোমার আমার জন্য

ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ক্লান্ত জীবন দৈনন্দিন আবর্তে ঢুকে পড়ে।