বিতস্তা ঘোষাল
তুমি
এভাবেই কেটে গেল
কয়েকমাস
হয়তো কেটে যাবে
কতগুলো বছর
আমাদের বয়স বাড়বে
আকাশের?নদীর?সূর্যের? তারাদের?
চাঁদের?
চড়কিবুড়ির কী বয়স
বেড়েছে?
এক মনে এখনো চরকা
বুনেই চলেছে।
এদিকে আমার দৃষ্টি
ক্ষীণ হয়ে আসছে,
চুলে পাক ধরে গেছে
শরীরের জৌলুস ম্লান
তবু দেখো, এই প্রবল দুর্যোগের
দিনে,মহামারীতে
তোমাকে চাইছি কত
ভাবে
তোমার বুকের নিরাপদ
কবচে
নিশ্চিত আশ্রয়
খুঁজছি
কোথায় তুমি?
ছিলে কী কখনো!
নাকি সবটাই মায়া!
অথচ আজও
বিশ্বাস করি তুমি
ছাড়া
এই অনন্ত বিশ্ব
নিঃস্ব।
ক্রান্তিকালীন
কাল রাতে স্বপ্ন
দেখি
চঞ্চল সমুদ্রে
অবিরাম ভেসে চলেছে
শ্রমিকের ক্লান্ত পা
গঙ্গা যমুনা ভাগিরথী
সাঁতরে তারা হাঁটছে
এক দিগন্ত থেকে আরেক
দিগন্তে।
মানবতা পথে বিকোচ্ছে
ভালবাসার দেশে
সব ভালোবাসা রাস্তায়
জড়ো হচ্ছে
প্রেমের বদলে কেবলই
অসম্মান
নিহত মানুষের রক্ত
মাটিতে শুকোয়
সব তীর্থের
আঁকা-বাঁকা পথ ঘুরে
ক্ষুধার্ত শিশু ঘরে
ফিরতে চাইছে
পিঠে তার বোন, হাতে রুটি
নগ্ন পা চুঁইয়ে
কে হাত বাড়ায় কেই বা
দেয় আলো!
আমরা ঘরে চুপ করে
বসে থাকি
আমাদের বিদ্রোহ একটি পোস্টে
তারপর রান্নার
রেসিপি আর
ফেসবুক লাইভে ঢাকা
পড়ে যায়
মৃত শ্রমিকের লাশ।
আমরা হাসি ততক্ষণ
যতক্ষণ না
একটা মড়া শালিক
আমাদের ঘরের
ভিতর কেউ রেখে যায়।
বাকিটা দৃশ্যান্তরে
চাপা থাক---
মাটির কাছে ফেরার
ছিল
কাল সারারাত দেখলাম
তুমি একটা সাজানো
বাগানে বসে,
হাতের সামনে খোলা
ভাস্কর চক্রবর্তীর কাব্য গ্রন্থ।
আমি যেতেই তুমি বললে,
আমরা সবাই জিরাফের
মত উঁচু হয়ে যাচ্ছি
নিচের কিছু আর
আমাদের দৃষ্টিতে আসছে না।
আমাদের ভাষা এখন
জিরাফের। আরও বললে-
'আমরা কেউ কারো নই'-ভাবতে ভাবতে,
দিন ফুরিয়ে
এল।"
আমি একবার তোমাকে
আরেকবার বাগানের
ফুলগুলোকে দেখছিলাম।
ফুলগুলো টবে,
মাটি থেকে অনেক
উঁচুতে ছাদে সারিবদ্ধ ভাবে।
ভাবছিলাম, কখন ভোর হবে,
মাটির কাছে ফিরতে
পারব।
শেষ পর্যন্ত মাটির
কাছেই ফিরতে হয়,
মাটিতেই মিশে যায়
আমাদের প্রাত্যহিক
চাওয়া পাওয়া..