মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

সুকল্যাণ তপস্বী


সুকল্যাণ তপস্বী

বৃষ্টি কথা

বৃষ্টি ঝরেছে আজকে সারাদিন,
ভিজেছ তুমি প্রবল সে বর্ষণে?
ফুলের মতোই আমিও শঙ্কাহীন
মেঘ সরে যাবে জানি ভ্রমরের গানে।

আজ টুপটাপ ঝরে যাক যত আলো,
ঝরে যাক যত হিসেব না রাখা ক্ষতি।
দুঃখগুলোও বৃষ্টির ছাঁটে সাফ,
এটাই নিখাদ বৃষ্টির কেরামতি।

পড়ছে বৃষ্টি আমার বাড়ির টিনে,
পাগলের হাতে জলতরঙ্গ যেন,
বিরহীর শ্বাস উতলা ষোড়শী-হাওয়া
সাগরের বুকে মোচড়ায় ঢেউ কেন?

ভিজছে ডাহুক কলমীর আবডালে,
পোশাকের নীচে ভেজে উত্তাল মন,
বুকের ভেতরে বৃষ্টি বলেই চলে
এবারে আসবে তোমার নিমন্ত্রণ।

আকাশেতে যেই ঘনিয়ে এসেছে মেঘ
মনটা কেন যে দুষ্টু চাতক হলো?
আকাশের মতো নির্বাক না থেকে
চাও চোখ তুলে, বলোনা বেসেছো ভালো!







রামের বনবাস

কীর্তন গান গাইত স্বপন দাদা
গলা ছিল দরাজ এবং সাধা,
শ্রাদ্ধবাড়ি কিম্বা দোলের দিনে
দু-হাত তুলে গাইত নিজের ঢংএ ।
গাইতে গাইতে হত আত্মহারা
কখনো হাসি, কখনো অশ্রুধারা ।
বনের পাখি থামায় নিজের গান
স্বপন যখন ধরে সুরের তান।

রাসের মেলা চলছে তখন গ্রামে
স্বপন দাদা ব‍্যস্ত হরির নামে ---
কৃষ্ণ গেছেন মথুরাতে চলে
স্বপন দাদা কেঁদে কেঁদে বলে ;
ছেলে বুড়ো সবার চোখে জল
মন্ত্র-মোহিত !শরীরও বিকল।

ঐ দিকটায় দোকান পশার মেলা,
বনবনিয়ে ঘুরছে নাগরদোলা ;
ফুচকা,ঘুগনি,বরফ,আলুর দম,
হাসি মুখ আর খুশিতে গমগম ।
এমন সময় ওমা !একি হলো !
একটা দোলনা শুণ‍্যে উড়ে গেল ।
হুড়োহুড়ি ,পড়ে এ ওর ঘাড়ে
দোলনা থেকে ছিটকে কিশোর পড়ে ।
মাটি ছুঁতেই হয়েগেল স্থির
রাধা শ‍্যামের বিরহে অধীর ।

ভীড় জমেছে কুঁড়েরই চারধারে,
দাঁড়িয়ে গাঁ টা,স্তব্ধ শোকের ভারে ।
স্বপন কোথায় ?এতো পাগল রাধা !
ছেলের শোকে অশ্রু নীরে বাঁধা।
শবযাত্রা এগোয় শ্মশান পথে
মৃদুস্বরে হরিধ্বনি ওঠে ;
ছুট্টে এসে আছড়ে প'ড়ে পথে
জড়ায় মাটি, পাগল দুইহাতে।
কখন যেন ঘোরের মধ্যে উঠে,
শবযাত্রায় সবার আগে ছুটে
গলায় বেঁধে সাধের হারমোনিয়াম
পাগল-স্বপন গাইছে হরির নাম ।
সপ্তমেতে পৌঁছে যাচ্ছে স্বর
সুরে তালে নিঁখুত স্বয়ম্বর।
পুত্র হারা পিতার আর্তি আজ
নিখুঁত আঁকে রাধার মাথুর সাজ;
সমস্ত গ্রাম চোখের জলে ভাসে
চোখের মণি রামের বনবাসে ।







তোমার ধ্যানে আত্মহারা

আকাশ থেকে সজল ধারায় নামো ---
আমার বুকের লুকোনো ভালোবাসা;
ছোট্ট ফুলের ঠোঁটের গন্ধ মাখা,
দাড়িম দানার রক্তাভ প্রত্যাশা।

সকাল থেকেই আজকে সারাদিন,
দাপিয়ে চলে মন আকাশের গায়ে,
তারার মালা এখন দূরে থাক!
মেঘ সাজাবো বিজলী নক্সায়।

সন্ধ্যা আকাশ টুকটুকে লাল বৌ,
সদ্য এলো বাপের বাড়ি থেকে ।
দুচোখে তাই সজল-আলপনা,
মেঘ-রুমালে নিংড়ে বৃষ্টি ঝেঁপে।

সলাজ চোখে বিজুলী চমকায়!
বরটা বুঝি ভীষণ রকম প্রিয়?
পরশু দিনের ফুলসজ্জার ঝাঁঝ
এলে চোখে, ঘোমটা টেনে নিও!

আমার প্রিয়া ওলো বর্ষা-সখী!
আজই ঝরো, রীতি রেওয়াজ ভুলে!
ফুলসজ্জা পরশুই থাক তোলা ,
জল ঠোঁটে ছোঁও ! সন্ধ্যা ঘনালে।