সপ্তদ্বীপা
অধিকারী
পরকীয়া-১
শাদা
কাগজ ও ব্যঞ্জনবর্ণ চারটি
তর্জনী, মধ্যমা এবং বৃদ্ধায়
উন্মুক্ত হব ভেবে একদিন ঘুমভাঙা রাতের কলম তুলে নিতেই বুকের ভেতরে রামায়ণ। ভেতরে
আকুল মহাভারত।ভেতরে ঝড়। ভেতরে তছনছ। শাদা পাতায় কতটুকই বা ধরবে বলো!...
কিন্তু কলম লিখিয়ে নিল ঠিক
চারটি ব্যঞ্জন।
রামায়ণের
চরিত্রেরা সব জীবন্ত হল কি?
আবার লিখলাম!
এবার
স্বয়ং কৃষ্ণ! বারবার ওই ব্যঞ্জনবর্ণ চারটি লিখতেই, শাদা কাগজটা অদ্ভুত ভাবে হেসে
উঠল হঠাৎ। বল্লাম---"হাসছো কেন?"
--"অকারণে কলঙ্ক দিলে
তাই..."
বলতে
না বলতেই কাগজটা ভেসে গেলো হাটখোলা জানালার দিকে।
বল্লাম---"কোথায়
যাচ্ছো...?
যেও
না...!"
হেসে
উঠল সে। হেসে উঠল প্রতিবিম্ব তার
এ
হাসি আমি চিনি।
এ
হাসি চেনে গোঠের কানহা!
আর কলম? সেও বলল, কানে কানে। মৃদু--
"দুহুঁ কোরে দুঁহু কাঁদে
বিচ্ছেদ ভাবিয়া
আধ
তিল না দেখিলে
যায় যে মরিয়া!"
নিজের
কাছে ধরা পড়ে গেলাম এবার। খোলা জানালার দিকে চাইলাম। চেয়েই রইলাম অনন্তকাল...কেউ
তো নেই! কিচ্ছুটি নেই...শুধু ঠিকানা বিহীন সে, চারটি ব্যঞ্জন বুকে আলো ফেলে অন্ধকারে হারিয়ে গেল অকাতর।
পরকীয়া-২
চাঁদ-তারা
চিহ্ন ছুঁয়ে ছুঁয়ে এক আশ্চর্য প্রকৃতি জন্ম নেয়!
ঠোঁট
চুঁয়ে নেমে আসা কুঁড়িরা মালিকানাহীন।কেননা,তুমি তাকে দেখোনি কখনো।কেননা,সে চাঁপাফুল নয়।
মাধবীলতার মতো জড়িয়ে ধরেনি তোমাকে! ক্যালেন্ডারের বুকে কোনো সংখ্যায় জ্বলজ্বল করে
না সে। পায়েসের বাটি হাতে সেই মৃগনাভিটি কখনো আসে না তার কাছে!
শুধু
নিঃশব্দ এই মৃত অনুভূতির কাছে ঈশ্বরও টুপি খোলেন বারংবার
পরাজয়ের
গ্লানি মাখেন দুই হাতে আশির্বাদ ঝরে...
পরকীয়া-৩
আশ্বিনের
বাতাস জানে,জানে মাধবীলতা...
আবেগী
বাতাস ফিসফিসিয়ে কানে কানে বলেছে সে কথা।
বলেছে
ময়ূরী ঠিক শাওনো রাতে...
অভিমানী
জোছোনা জানিল না শুধু
চাঁদ
আর চকোর-কথা সকলেই বলে
নিহত
রোদ্দুরও সগর্বে ঘোষণা করেছে অপারগতা তার...
নিষিক্ত
মেঘেরাও দেখো পূর্ণ গর্ভবতী আজ
এরপর
ভিজে যাবে তুমি আপাদমস্তক
ভিজে
যাবে গৃহ তোমার
উঠোনে
লাগানো ওই হাস্নুহানার ঝাড়
শীৎকার
জুড়ে দিয়েই করিবে প্রচার
জন্ম
দেবে ধবধবে সুগন্ধী সকল...
তোমার
শ্বাসবায়ু পূর্ণ হবে
চোখে-মুখে
মেঘধোঁয়া ভ্রূণে...
তবু
তুমি আদিগন্ত অভিমান...
তবু
তুমি সর্বনাশা আমায় চেনো না!