রবীন বসু
১
ভীষণ মনখারাপ, ভিতরে ভিতরে আজ দারুণ
আকুতি।
তোমাকে পাবার আশা সারারাত
অন্ধকারে সুড়ঙ্গ কাটি।
পরকীয়া প্রেম তুমি, রক্তে বাজো নূপুরের ধ্বনি অহরহ।
নিষিদ্ধ খিলান ভরে লতাপাতা
গুল্মগাছ আগাছার ডাঁই,
সুযোগ-সন্ধানী ওম ওত পাতে, তার মধ্যে ষড়যন্ত্র ছাই।
সমাজ অনুমোদিত খেলা কে কবে
খেলেছে? রাতভোর
দেখা নিজেরই অস্তিত্বের ঘেরাটোপ, দংশনরত কামনার
ফণা ; কিসেই-বা বেঁচে উঠি, মৃত্যু কেন হয় বার
বার !
প্রতিরাতে কেন এই সঞ্জীবনী তিল
তিল শুশ্রূষায় বাঁচায়
আমাকে?হাঁটুভাঙি কৃৃতজ্ঞতা করপুটে
তুলে নি অমলিন
খুশি,তোমাকে বাঁচাব তাই বেঁচে থাকি
আজও,সারারাত
অন্ধকারে শব্দ নিয়ে খেলা করি
পরকীয়া প্রেম।
২
সীমান্তে পাহারা নেই, তাই আমি সিঁদকেটে ঢুকে
পড়ি ঘরে। কাঁটাতার আছে থাক, গোপন মানচিত্রে আঁকি নিষিদ্ধ ভ্রমণ। যত অশ্ব গজ আছে সব
আমি রেখে আসি প্রান্তিক প্রান্তরে ; সম্মুখ সমর নয় নিরিবিলি গুপ্তঘাত। জয় নেই, পরাজয় তাও নেই ; তবু জয়ের আনন্দ আছে।
আকুল লিপ্ত এক সুখ, অতৃপ্তি
বুকে নিয়ে ধিকি ধিকি জ্বলে। অনন্ত অভিসার নিয়ে ব্যর্থ প্রতীক্ষা ; তাকেও অতিক্রম করে
বিদায়ী কান্না ! কার হাত কে ধরে, কারও বা ছাড়ে? শূন্যতা নির্মাণ করে পরকীয়া মিড। আমি তাকে যত্নে ধরি, সেও আমাকে। তাই আলো
জ্বলে ওঠে,
সুবাসিত
হয় মনের ব্যালকনি। অনন্ত উদ্ভাস নিয়ে প্রেম যেন হেঁটে গেল শ্রীরাধার ঘরে।
৩
ওই তো উড়ন্ত আয়ু, ওই দেখো স্মৃতিঘেরা মেঘ
; কানাই বসেছে দেখো
কদম্বের ডালে। হলুদ কাপড় ঝোলে বৃন্দ বনের ধারে আয়ান ঘোষের বাড়ি। ওইখানে পরকীয়া
পিচ্ছিল কর্দমাক্ত যমুনার পাড় ধরে হাঁটে। যত শ্বাস দীর্ঘশ্বাস হয়, দুঃখ সব স্পর্শ করে
পুলিন মাটিকে। লবণাক্ত হৃদয় খুঁড়ে তবু
প্রেম পরবাসী খোঁজে। অযত্ন- লালিত এই প্রত্যাশার উন্মুখ ক্ষত তাকে তো বিমুখ
করে, আকাঙ্ক্ষা অস্থির হয়, অভ্যাগত দ্বারের ওপারে। করমর্দন
ঠিক প্রথা নয়,
বৃক্ষের
বাকল খুলে আলিঙ্গন করি। চির তাপ শুষে নেয় উদ্বেল বিস্তৃত হৃদয়। সেইখানে
পিঁড়িপাতা,
আসনের
ঠাঁই। মেঘদূত আবহমান ডেকে নেয়, দুষ্টু কানহাই তখন জীবনকে আশ্রয় করে।