সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

দেবাশিস ঘোষ

 


দেবাশিস ঘোষ


প্রথম শ্রাবণ জল অপর ভূগোলে


এক


প্রতি অক্ষে, প্রতি দ্রাঘিমায় জাহাজ খুঁড়েছে জল,

জলেরও ভীষণ বেগ, উথাল পাতাল

ডুবেছে, ভেসেছে সেই আগ্নেয় জাহাজ

ডুবতেই চেয়েছিল, লবনাক্ত জলে

সমুদ্রও নিজেকে চিরে প্রবেশের পথ করে দিয়েছিল

আয়োজন ছিল না কিছুই

কাউকে ডাকেনি কেউ

এতদিন জল এসে ছোঁয়নি জাহাজে

জাহাজ, সমুদ্র  খুব কাছাকাছি এলে

পাগলা হাওয়ার ঘন ডাক আছড়ে পড়েছে ডেকে, জলের ডগায়

এমন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ছিল

কৃষ্ণখাদে প্রপেলার সুতীব্র তাড়না, ভূগোলে মন্থন

কমা কিংবা সেমিকোলনের ভয় বাতাসে উড়িয়ে

জাহাজ এগিয়ে চলে

সমুদ্র ক্রমশ সেই জাহাজের হয়ে গিয়েছিল

অন্য জাহাজটির ছিলনা করার কিছু

নোঙড়ে দাঁড়িয়ে শুধু অপেক্ষায় থাকা

 

 

দুই


সিঁদুরের নিষেধাজ্ঞা থামাতে পারে না

পিন পতনের শব্দ।

পতাকায় হাওয়া লাগে, রক্তিমা তখন অবাঞ্ছিত।

তোমার কাচের দেহে কেন দাগ, কেন কালো অক্ষরের বাঁধা!

আমার সমস্ত পিন ঝরে যায় তোমার বাতাসে।

তোমাকে নিজের করে ভেবে নিই, এত কাছে থেকে

কিভাবে এড়াবো এই বিদ্যুৎ! আমি এক সুপরিবাহী ধাতু।

রক্তিম ঝামেলা এক প্যাকেটের গিঁট,

তোমাকে পৌঁছতে চেয়ে আমার কিছুটা দেরী সংস্কারবশত।

প্রবেশ মধুর খুবই, রক্তিমা কখনো কোনো কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা।

দু'লক্ষ শব্দের 'পর আরো তিন লক্ষ শব্দ জমা হয়ে ওঠে;

এতসব শব্দগুলো কোথায় কিভাবে ছিল জানি নি কখনও।

উজ্জ্বল বৃন্তের ফলে হাত রেখে, গলে গেছি চকলেটের মতো।

কিভাবে অপরজন হয়ে থাকি, এতসব গূঢ় প্রদেশের

বালি, কাদা, ফুল, মেঘ, চোখে, মুখে হাতে পায়ে চিহ্ন দাগ নিয়ে!

 

 

তিন


আমার প্রথম বৃষ্টিধারা তোমাকেই ঢেলে দিয়েছি বৃক্ষ।

শিহরণে কোনো কিছু কমতি ছিল না।

অন্য কারো, অন্যরকম কোনো কিছু বুঝি নি তেমন;

শুধু সব চিহ্নদাগ, অন্য কারো ভূগোলের খোপে

রয়ে গেছো, আমার ভূগোল থেকে দূরে।

মেঘ ও বৃক্ষের মাঝে কোনো দেয়াল তোলা যায় নি কোনোদিন,

চন্ডীদাস, রজকিনী সুদূর অতীত থেকে হেসে ওঠে।

কতসব নিষেধাজ্ঞা, কতসব দাসত্বের দাগ পোড়া দেশে থেকে যায়

ভিতরে উদ্ভিদ তার রসময় ডাল, কান্ড নিয়ে বনসাই ।

স্বপ্নে দেখেছে গাছ আকাশ ছুঁয়েছে, তার ছড়ানো পল্লব শাখা

বৃষ্টি হয়ে হয়ে তাই ঝরে পড়ি বৃক্ষের গায়ে গায়ে পাতায় পাতায়

বৃক্ষ খুব শিহরিত, জ্যোৎস্না মাখে গায়ে।

মেঘের আক্ষেপ হয় কেন গাছ অন্য কারো, অন্য কারো হল