তনিমা হাজরা
শান্তি
বনলতা সেন হওয়া বড়ো
সহজ কার্য্য নয় হে জীবনানন্দ,
সবাই যখন বিষঝাঁপি এনে দেয়,
তখন তুমি তার কাছে,
ওষ্ঠ নয়, স্তন নয়, যোনি নয়,
শুধুমাত্র শান্তি চেয়েছিলে।।
এমন রাজসম্মান বলো ক'জন দেয় একটি নারীকে,
এমন গভীরে সঙ্গম চায় ক'জনায়,
ক'জন এমন আকুল হয়ে
ধারাস্নান করে তার অশ্রুজলে ??
সেই তো অমৃতা নারীটির সব
রত্নখনি পায়,
এমন আকুল হয়ে যে তাকে চাইবার
দুঃসাহস দেখায়।।
একটি নিভৃত প্রাণের
আবেগের যে কথাগুলি ভীষণ
স্পর্শকাতর,
যার গায়ে মাখানো রয়েছে তোমার
মননের,
যাপনের সুগন্ধি দুর্মূল্য,
দুস্প্রাপ্য আতর,
সেই কথামালায় দিয়েছিলে তাকে
পূর্ণ অধিকার,
যে ব্যথাগুলি আর,
কাউকে নয়তো খুলে দেখাবার,
তোমার সেই ক্ষতের নগ্নতায় ছুঁতে
দিয়েছিলে তাকে হাত,
পেরিয়ে এসে হাজার যন্ত্রণাময় রাত,
তার কাছে চেয়েছিলে শুধু
নিশ্চিন্ত আরামের ঘুম।।
এতো বড়ো সম্মান মস্তকে ধরে চলা
বড়ো অনায়াসসাধ্য নয় হে, জীবনানন্দ,
বড়ো অনায়াসসাধ্য নয়।।
এসব ধারণ করতে গেলে,
সব বাসনায় জলাঞ্জলি দিতে হয়।।
পাখির নীড়ের মতো চোখে যে
অজস্র সুক্ষ্ম ছিদ্রপথ,
অশ্রু, বিষাদ, মায়া, উৎকন্ঠা,
সুখ বা আশ্লেষ কোনো ঐশ্বর্য
তাতে জমিয়ে রাখতে নেই,
সবকিছু সেই ছিদ্রপথে
নিরন্তর ঝরে যেতে দিতে হয়।।
বনলতা সেন হওয়া বড়ো
সহজ কার্য্য নয় হে জীবনানন্দ,
বড়ো সহজ কার্য্য নয়,
একান্ত আপনার জন হয়েও
পরমতম পরের ছদ্মবেশ ধরে
পাশাপাশি
শুধু অন্তহীন পথ হেঁটে যেতে হয়।।
এখানেই প্রেমের সর্বোত্তম জয়,
তবুও সমাজ তাকে পরকীয়া কয়-
হে প্রাণের অধিক প্রিয়,
অর্থ নয়, বিত্ত নয়, সামাজিক মর্যাদা নয়
কপালের উপর তার,
শুধুমাত্র কলঙ্কচিহ্নটুকুই নাহয়
তুমি তাকে দিও।
সেই তো বিজেত্রী হোমাগ্নিটীকা,
হাজার বছর ধরে
দুর্লভ বনলতাজন্ম সয়ে
শুধু তোমার প্রতীক্ষায় তার
বেঁচে থাকা।।
সৃষ্টি
মডেলের স্তনে মাটিমাখা হাত,
ঘাড়ে রক্তকরবী,
দুচোখের পাতা জুড়ে কিসের নেশা?
নারীর শরীর নয়,
শরীরের অন্তর্ভুক্ত
সন্ধিবিচ্ছেদ সুললিত শব্দরূপ।
সজনী কে বুঝিতে পারে,
হৃদয় স্পন্দন কেমন ধুকপুক
করে মাংসের
আড়ালে।
কেমন বর্ণমেঘ স্বরে বা ব্যঞ্জনে
আস্বাদ,
ডালে দিলে পেঁয়াজের সম্বর ।।
মেয়েটি কি পেলব মাধুর্যে নত
হয়েছে
আকণ্ঠ চুমু খাবে বলে,
পিজি হাসপাতালের বেডে
প্রস্টেটের যন্ত্রণায়
ছটফট করছেন রামকিঙ্কর।
একটি শীতল মেঘ নত হয়ে ছুঁয়ে যায়
লাল মাটি ঘাসে জন্ম নেওয়া
বেগুনি রঙের ফুল।
শিল্পীর শুধু একটি প্রেম
থাকতে নেই,
কবির থাকতে নেই কবিতা ছাড়া
আর কারো সাথে পরকীয়া।
ভাস্কর মুছে যায় মাটির পৃথিবী
থেকে,
পুড়ে যায় খড়ের কাঠামো,
বেঁচে থাকে তাঁর মডেলের জ্যান্ত শরীরসুষমা,
শরীর চুঁইয়ে সে রগড়ে দিয়েছিল
পলাশের রঙ,
কামধেনু বাঁটগুলি
এখনো ফেনায় ফেনিল।
কবিরা নিভে যায় সূর্যাস্ত হলে,
ফুটে থাকে নক্ষত্র হয়ে
অর্জমা অক্ষর।।
তুর সাঁথ্যে
তুর সাঁথ্যে চড়ক মেলায় যাবো,
নদীকে ডুব্যাঁয়ে গতর
ই জনমের কান্নাগুলান ভালো কইরে
মেজেঘসে উঠাই ধুয়ে লুব।
তুর সাঁথ্যে চড়ক মেলায় যাবো,
শিবের থানে পিনাম কইরে
আর জনমের লেগে তুকেই মাঙ্গে
লুব।
তবে কেউ আর পীরিতটাতে
পরকীয়ার দাগ দিবে নাই বল!!
হঁ রে সাঙ্গাত,
গাছের থিক্যে টগর আমায় পাঁড়ে
দিবি চল,
আর, হাটের থিক্যে কিনে দিবি ঝুমকা
দিয়া মল।
গতরখেউকা যত লোকে,
খুঁজে মরুক কেনে আমাদিকে।
আমরা দুলোক হুইদিকেতে
আজ এক্কেবারে নিরুদ্দেশে
হারাই যাবো চল।।।
দোসর
খাতার ভেতর দুনিয়ার বদনাম
আর পাঁজরের নীচে তোর ডাকনাম
রেখে শুতে যাই রোজ।
পাশে হাঁটে চলে ভ্রষ্ট অতীতও,
গন্ডুষ তার সুতীব্র তিতো,
স্নান ঝর্ণার খোঁজ।
প্রেমের গুঞ্জন যদি যায় থেমে,
শরীরও ভাসান বিজয়ায় নেমে
কেবল হৃদয় ছুঁই।
ঝরোখা দিয়েছে দাবানল ছুটি,
বিপন্ন দৃঢ় শক্ত এ মুঠি,
সে মুক্তি আমার তুই।
ঝড় থেমে গেলে পরে,
যে মানুষ বাড়ি ফেরে
সে তো আর আগের সে'জনা নেই।
দাঁড়িয়ে আছে যে শূন্যের পারে,
ফিরে যেতে গিয়ে বারবার ফেরে,
দোসর তো আমার সেই।।
পরকীয়া ফ্যাক্টর
রঙ চায়নি রঙ্গতে সে
সঙ্গতে রাম তালকাণা,
মাসকাবারি বাকির খাতায়
ফর্দতে তার প্রেম ছিল না,
প্রেম ছিল না।।
হঠাৎ করেই বৃষ্টি এলো,
দুজনাতে উপুর্ঝন্তে
চুবড়ি হয়ে ভিজে গেলো,
ভিজে গিয়ে হাঁদার মতন
হি হি করে হাসছিল আর
হাসছিল।।
গুটি কয়েক খাদ্যশস্য
চিনির চেয়ে ঝালই দড়,
নগদ ট্যাঁকেও খুশির ট্যাঁফোঁ,
আনখাঁ তবু উঠলো ঝড়।
কি করা যায়, কি করা যায়,
হাটমশলায় পঁচিশ সিকে,
ধারবাকিটাও বলে কয়ে
কপালমুদী রাখলো লিখে।
চক্ষু বুজে পাল্লাদাঁড়ি
দাঁড় কাঁটাটি হেলে দোলে
ভাগ্য নিদেন তিলকাঞ্চন
দায়ে পড়ে দিলো ফেলে।।
ফর্দ বানান তালেব্য শ
কুম্ভীকাঁটার নজরদারি,
এক ছটাকী রাম ডাকাতির
উদরপূর্তি ঢেকুর ভারি।।।