সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

বিকাশ চন্দ

 


বিকাশ চন্দ


তিনটি কবিতা


নিজের হৃদয়ে আত্মার পরবাস

~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কত চাতকই জানে কত চাতকী আহা তৃষ্ণা কাতর

অকরুণ বিষ্ময় কাল আঁচলে বাঁধেনি উতল সুখ,

পোড়া কপাল তবু জুটেছিল চাঁদপানা মুখ--

কেমন সে ছোঁয়া ছিল পরাগ রেণু মাখা কালো ভ্রমর,

বনজ কুসুম জানে হে কুন্তলা বনের আদিম প্রহর---

উর্বশী পরশ জানে খুলে যায় শ্বেত পাথরের গহ্বর।


কত সে অক্ষর কথা গড়িয়েছে মধ্য বুকে শালগ্রাম শীলা

অভাষিত কত আত্মদান মাথার সিতেনে তখন তুলসী প্রহর,

সে বিষের জ্বালা নীলে একই শরীরে কত নীলাম্বর---

পুরাতনী সুরে রাখালিয়া বাঁশির মেঠো সুর

শহর ছেড়ে অনেক দূরে ভেসে যায় বন গ্রামের দুপুর,

আয় আয় চৈ চৈ কলমি লতার বুকে জড়িয়ে জল হংসী নূপুর।


কথার ভেতরে কত কথা কার দায় স্বপ্ন কায়ায় গোপন উদ্ধার---

অজস্র সুখের ভেতর কাঁপে প্রাণ বাঁধো স্বর্ণ কারাগার,

মন ময়ূরীর ডানা ভাদুরে বয়স জানে পরকীয়া সুখ---

কত গ্রাম পাখি ডাক কুঞ্জবন পথে হারিয়েছে দ্বারকার পথ,

হৃদয়ে রেখেছি রামী একথা কী জানে চণ্ডীদাস---

যে যার পাঁজরের ক্ষত জানে নিজের হৃদয়ে আত্মার পরবাস।

 


সমুদ্র মদিরায়


সবাই জানে জলেতে নামেনি সই---

শুকনো চুলে নৈশ সাঁতার এপার ওপার

নীল পদ্ম প্রাণে প্রাণ বৃত্তি শুধু জানে লোকাচার

দু'দিকে সবুজ চাতরে ঢাকা এপার ওপার

মধ্যিখানে নদীর স্রোতে সমুদ্র হাহাকার !


গোপন সম্ভার যত চম্বল দস্যু গুহা ময়

চোদ্দ মাদল ঘোরে চোদ্দ বসতি উতরোল---

রাস রসে মেতেছে আজ অনন্ত ঝুলনে,

মহুলের বাতাস বউলের মাস যেন অনন্ত পরবাস---

শূন্য পথে উড়ে আসে রাজরোষ জানে অনন্ত রসিকা

তবু ও তো ফল্গু বেঁচে অন্তঃসলিলা,

যমুনা পারের সুদৃশ্য মহল জানে নীলমণি

গঙ্গার অবলীলা জানে নীলকান্ত মণি।


পদ্ম পাতার জমা রসে এখনও টলটলে রাঙা মুখ

কি নাম কি নাম রাজপথ জানে  নাম রাতের অসুখ,

রাজধানী জানে নাম উনি চান পরম্পরা সুখ স্বাধিকার---

ঝিম মেরে শুয়ে আছে সূর্য ভোরে লোহিত নদী জল,

গাঙচিল এপার ওপার ছড়িয়েছে ডানা কালের ঈশারায় ---

বন দেবী ভালো জানে মধুময় বরণে বশ্য দক্ষিণ রায়

শূন্য পথের সখি ও যে সে ও তো সমুদ্র মদিরায়।

 

 

পরজ পুরুষ জানে


রাস রসে মেতেছে অনন্ত ঝুলনে ঝোলে রঙ

শরীর গুলো মাঠ ময় শুয়ে আছে নিবিড় পরস্পর,

ক্ষীর ভরা ধানের সুখ নিয়েছে অঘ্রাণের আমন---

কী দায় জানেনা মহুয়া মাদলে শরীরে উদোম নাচুনী

কে কার ঘরে আসে ঢলে পড়ে পরশে উতল পার্বণী।

 

কত প্রাণ ছুঁয়ে যেতে পারি প্রতিদিন আত্মার মতন

জ্বরা ব্যাধির দায় নেই উথাল পাথাল ভাদুরে কোটাল

ফুলে ফলে নুয়ে পড়ে ফলবতি বাহু আর লজ্জা সকল

কখন কে পেতেছে অঞ্জলি খুলেছে বল্কল

অচেনা উষ্ণতায় কত স্মৃতি করজোড় ছোঁয়া করতল।

 

ত্রিভঙ্গ রূপে রসে রান্না ঘরে ব্রতকাল কৃষ্ণা চতুর্দশী

খুদ কুঁড়োতে ভরপেট উদ্ বায়ু ভেসে যায় হেমন্ত হাওয়ায়

শ্মশ্রুগুম্ফ তেজোময় অসহায় সমূহ সন্ন্যাসী প্রবর

নিজেদের মুখ ঢাকে নীরবে আহা কী লজ্জা জটার ছায়ায়

পাঞ্চালী জানে কাটে তার পঞ্চ প্রহর আচ্ছন্ন চোখ কৃষ্ণা মায়ায়।

 

কুঞ্জ বনের পথ কত বার বেঁকে গেছে হায় কোন কুঞ্জ পথে

চাঁদ জানে ষোল কলা ছলা যত চন্দ্রাবলী গৃহে

অরন্ধন প্রহর পোড়ে মনের শরীরে মন চোরা কে হে

কত জ্বালা ধরে আছে এ সংসার মানবী মানব দেহে

দিন আসে রাত যায় পরজ পুরুষ জানে প্রাণের প্রার্থনা।