তাপসকিরণ রায়
শ্রাবণ ধারা
কখনও চোখের পলক
ব্যাপে শ্রাবণধারা নেমে আসে
নির্জনতা ভেঙে
সেখানে শব্দরূপগন্ধময়--
আদুড় গায়ের মেয়েটি
বৃষ্টির ছলকে নেচে যাচ্ছে।
সেই সাঁওতালি মেয়েটি
ভেজাগন্ধ ও সোঁদামাটির আলাপনে
আপনি আপনি হেলে দুলে
উঠছিল।
ঝমাঝম বৃষ্টিরণনের
মাঝখান দিয়ে এক সুর বেজে উঠছিল।
তাকে সে চিনতে
পেরেছিল--
কোথাও তো বুকের মাঝ
থেকে মাদল বেজে উঠছিল।
পুরুষালী ঘ্রাণে ও
ক্রমশ জেগে উঠছিল,
এমনি বর্ষার গন্ধের
তার শরীর পিপাসা
এমনি শীতালী
অগ্নিতাপের মন তার,
কাঁঠালিচাঁপার খোঁপা
ভাঙা এক ঢাল চুল তার
পিঠ ও নিতম্ব বেয়ে
নেমে গেছে
তবু সমস্ত
শ্রাবণধারা তার স্তন খুলে নিতম্ব আশ্রয় বেয়ে
নিচে, ক্রমশ আরও নিচে নেমে
যাচ্ছে,,,
ব্যাঙাচী ও
আশ্রয়
বর্ষায় কিছু
ব্যাঙাচির দল জন্ম নিয়েছিল।
ওরা খুব করে লেজ
নাড়তে নাড়তে
একদিন শ্রাবণের ধারা
নেমে এলো।
জলতোড়ে ওদের ল্যাজ
গেলো খসে--
ওরা উঠে এলো
ডাঙ্গায়।
ওদের গ্যাঙর গ্যাঙর
শব্দে তখন
পড়শি মেয়েটা ভয়
পাচ্ছিল খুব--
তাকে আগলাতে নেমে
এলো এক কৃষ্ণকায় ছেলে
বাইরে তখন ঘোর বর্ষা, শ্রাবণের ধারা
নেমেছে,
ভয়ে দমকে বারবার
কেঁপে উঠছিল মেয়েটা,
ছেলেটি তাকে বুকের
মাঝে আরও নিবিড়ে আঁকড়ে নিচ্ছিল।
সম্ভ্রমে সে আগলে
রাখছিল মেয়েটির সমস্ত শরীর,
শুধু ওদের দুটি চোখ
পরস্পরের চোখে বাঁধা পড়ে ছিল--
সেখানে অভয়দৃষ্টি
জেগে উঠে ছিল।
শ্রাবণের ধর্ষকাম ও
স্পর্শকামের বাইরে থেকে
এক প্রেমিক-প্রেমিকা
খুঁজে পাচ্ছিল তাদের আশ্রয়।
শ্রাবণের
অন্তঃধারায়
মরা জোছনা ও গহন
কালো মেঘের কোন্দল ছিল।
দেখ ঝড় থেমে গেছে, বাতাসঝাপট থেমে গেছে,
ও লো বকুল সই, এবার মালা
গাঁথ--বিনি সুতোর মালা,
শ্রাবণধারা যাকে
ছিঁড়ে দিতে পারবে না,
মনের মধ্যে আঁটসাঁট
বাঁধন রাখ--
শরীর যেন অযথা
দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে যায়!
কিছু অসাবধানী বেনো
জল গড়িয়ে আসতেই পারে
মনের ভেতরটা তুই
তখনও কোমল ও তরলিত রাখ,
শক্ত কাঠামো যতই
নাড়া দিয়ে দিয়ে যাক--
সেখানে তোর সৌন্দর্য
থেমে থাক।
এই আনন্দ উৎসবে
শ্রাবণের সহস্র ধারা আসুক না নেমে--
গায়ে মাথায় এবং
অভ্যন্তরে
বৃষ্টির ভিজে যাওয়া
রাঙামাটি ও কালো মাটি এক হয়ে কাদা হয়ে
রাস্তায় সে কাহিনী, গন্ধ হয়ে, রূপসীর অন্তর্বাস
ভিজাক--
তবু প্রিয়া, এমন বল্গাহীন শ্রাবণ
ধারার তৃষিত তাপে
অপেক্ষা, আরও অপেক্ষায় আমরা
তবু বসে থাকবো।