জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
মৃত্যু-বান্ধব
মৃত্যুকে বন্ধু বলে ডাকি।বন্ধু
বললে পাথরও দুর্বল হয়.....
আত্মীয়তার ইতিহাস বলে সম্পর্ক
গ্লানিময় তবু বাঁচার প্রয়াস।
পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী
কন্যাকে সন্ধির শর্ত করে কতজন....
আমি তো বন্ধুতা চেয়েছি কাছের
বলে যদি কোপ না পড়ে।
মন্ত্রীকে আত্মীয় বলে পদশব্দ
ভারী চৌকাঠ পেরোলেই ফড়িং নাচ
চব্বিশ ইঞ্চি স্টিলপাতি হাসি
এফোঁড়ওফোঁড় করে।কেন যে বলো?কেন বলি!
এই যে নগণ্য বোধ দুর্বলতা বন্ধু
বলি ফুল ছড়াই..... যদি তার প্রসন্নতা
ছাতা মেলে দুর্বল মাথার
উপর।ব্যঙ্গ হয় যদি দন্তরুচি।
মরণকে শ্যাম বলে ডেকেছি মাঠে
কুঞ্জ নয় কুঞ্জ কৌশলে নয়
অগোছালো ভিক্ষাপাত্র হয়ে পথে
তার শরীর মেলেছি পদরেণু নয়
চেয়েছি বর্ম আর রক্ষাকবচ আমার
ঘরে নয় কাছাকাছিও নয়
যাও তুমি শত্রুর সন্ধানে।মার
খেতে খেতে মৃত্যুকে অস্ত্র ভেবেছি
যাও তুমি তাদের সন্ধানে যারা
আমার আপন বা প্রিয় নয়।
তুমি তো কতই পারো দেখাও তো মারণ
কৌশল! প্রাণ নিলে ফুল দিও
আর কিছু বাছাই শব্দবন্ধ শোকের
গ্রেভিমাখা পরম উপাদেয় শ্রবণবিলাস।
ভালোবাসা --
৫
কোনো বিমূর্ত ধারণার চাদর কিছু
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উদ্দীপক
উদ্ভূত প্রতিক্রিয়া আর অনুভূতির
সম্মীলন।
আচরণ পরিবর্তনকেই না কি শিক্ষা
বলেন প্রাজ্ঞজন
প্রেমের যুক্তিগ্রাহ্য সংজ্ঞা
দেবে কে?
পরিবর্তনে মানুষ নতুন।
অন্যরা অসুখ ভেবে কিছু আদি অন্ত
টোটকা তাবিজ
অথচ বৃষ্টিভেজা গায়ের গান আতপে
দগ্ধ মন
বাঁকা বাক্য শিহরনহীন বরাহমিহির
ফেল
হয়তো অবোধ রুগি দগ্ধবালুর ক্যাকটাস
লোকেরা শ্রীহীন শব্দটি জানে কি?
তারা আক্রমণের ধারে ঝাঁপ দিলে
দ্রৌপদীর শাড়ি
অফুরন্ত গোলকধাঁধায় গিলে নেয়
সুখ।
ঈশানের বেগুনি রং দেখি
উত্তরায়ন-সকাল আনে।
এস্পেরান্তো
এক
রামেশ্বরম দ্বীপের
বেলাভূমিতে ভাঙা ইংরেজি বলা সামান্থা
আমাকে
নারকেল তেলে তৈরি সবজির স্যুপ খাইয়েছিল তার কথা ভুলিনি।
সে তাদের প্রিয় খাবার।উপরোধে
কালমেঘের রস হয়েছিল যা
তা আজ পরম উপাদেয় ভাবি অথচ সে
রামও নেই স্যুপও নেই।
দুই
কাঠঠোকরার ঠকঠক শুনলে যারা
জঠরজ্বালার কথা ভাবেন
তাঁদের জানা উচিত খাদ্য শুধু
একইরকম নয় চঞ্চুর পৌরুষ
ওদের শৃঙ্গার কৌশলও।
তিন
গাড়োয়াল পাহাড়ের সরসতিয়া আমাকে খেতিবাড়ির গল্প আর বারোমাস্যা শোনায়
বাপ-ভাইয়ের জন্য লোকগীতের সুরে
তার চলকে ওঠা চোখ এখনো ভুলিনি
কোলকাতা দেখার স্বপ্নের কোনও
কারণ ছিল না তবু...... সে আসলে
গত প্লাবনে মন্দাকিনীর প্রবল
স্রোতে পূর্ববাহিনী হয়ে গ্যাছে।
চার
মায়াপুরের দোলে ভাঙা বাংলায়
কীর্তন নাচে এক আনাড়িকে নাচিয়েছিল যে
বিশ্রামে তার কথা বুঝতে একটুও
অসুবিধা হয়নি সে ছিলো তাতিয়ানা।
ভোলগা থেকে ভাগীরথী ভেসে যায়
কথার বিকেল।