অরুণ কুমার সরকার
একটা যুদ্ধের আবহে
অচেনা সমাজ
সমাজটাকে বড় অচেনা মনে হয়
দেশ, পৃথিবীটাও
ভুঁড়িওয়ালা প্রশাসন এই বুঝি
জীবনের প্রথম
কর্তব্য পালনে ব্যস্ত রাস্তায়
সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে
পৃথিবীটাও পাল্টে নিল
তার রূপ
এ ছবি চেনা নয়।
একটা মৃত্যু ভয়ে কুঁকড়ে গেছে
গোটা বিশ্ব
অদৃশ্য এক জীবাণুর সঙ্গে
নিঃশব্দ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
বিশ্বের লক্ষকোটি ডলারের অস্ত্র
পড়ে থাকল
মুখ থুবড়ে
সেসব কোনও কাজেই এল না
জৈব জীবাণু যুদ্ধের গুজব বাতাসে
ভাসিয়ে দিল কেউ
অতঃপর শত্রুকে পরাস্ত করতে
মানুষ নিজেকেই করে ফেলল
খাঁচাবন্দি
লকডাউনে চলে গেল আস্ত
নীলগ্রহটাই।
মানুষের স্বভাব দোষে গোবরে
পোকার মতো
কিছু মুনাফালোভী মাথা তুলতে
চাইলেও খুব বেশি
কাঙ্ক্ষিত সুখ তুলে নিতে পারল
না ঘরে।
খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, অস্ত্রের ঝনঝনানি
আর দূষণের গ্রাফটা হঠাত যেন
নিম্নমুখী হতে হতে
মিয়ে পড়া চীনেবাদামের মতো
দুর্বল
আকাশটা আজ আকাশের মতো
নীল।
সব যুদ্ধই নিশ্চিত থেমে যায়
একদিন।
এ যুদ্ধও থেমে যাবে ঠিক
পৃথিবী আবার শান্ত হবে
পৃথিবী সেরে উঠলে
আমরা আবার বেড়াতে যাব...
একটা মধ্য দুপুর এবং
একটা মধ্য দুপুরে চেয়ার পেতে
বসে আছি
বসে আছি আমার পৌনে দু’কাঠার
ছাদের ওপর
পশ্চিম সীমায় পাঁচিলের গা ঘেঁষে
ছাদের সীমা ছাড়ায়
পুষ্ট পেয়ারা গাছ।
মৃদুমন্দ বাতাস আর সে পেয়ারা
ছায়ায়
আমার ঘরবন্দি বিড়ম্বনা কিছুটা
হলেও সরে যায় দূরে।
লকডাউনে শব্দ চাষ করব বলে
হাতে পেন খাতা নিয়ে তীর্থের
কাকের মতো
অপেক্ষার পর অপেক্ষা
অথচ, শব্দ নেই
মাথার উপর শব্দ করে গেল কেবল
একজোড়া
চড়ুই।
আসলে, সময় বন্ধ্যা হলে
শব্দেরা আত্মগোপনে যায়...
মায়ামির পথে
কৃষ্ণাঙ্গের নৃশংস মৃত্যু
ঝাচকচকে পথের ওপর
একটা সাদাহাঁটু চেপে দিল কালো
শ্বাস
হাঁটুর নিচ থেকে বাঁচার মরিয়া
চেষ্টায়
‘আই কান্ট ব্রিদ’ কথাটা কোনমতে
বেরিয়ে এল
কালোমুখ থেকে
তবুও নেই কোনও ভুরুক্ষেপ
হাঁটুর নিচে পড়ে থাকল নিষ্প্রাণ
কালো শরীর।
মুহূর্তে একটা তীব্র জনরোষ আছড়ে
পড়ল সাদা
বাড়িটার ওপর।
ভয়ের একটা উদ্বৃত্ত ক্ষমতা আছে
অতিক্ষমতাশালীও এতে নতজানু হয়।
বিশ্ব, শক্তির ভরকেন্দ্র ভাবে যাকে
সেই সাদা বাড়িটা
মাটির নিচে গোপন রেখেছে কিছু
সুড়ঙ্গ আর বাঙ্কার
প্রাণ বাঁচাতে সেঁধিয়ে পড়ে তাতে
নতজানু
দম্ভ অহংকার।
রাষ্ট্রীয়পীড়ন দেশে দেশে আগুনের
জন্ম দেয়
কালোও মানুষ
জর্জ ফ্লয়েডরাও শ্বাস নিতে চায়
নরম পৃথিবীর
বুকে।
জনরোষের উদ্বৃত্ত ভয়ে
হাঁটু মুড়ে ক্ষমা চেয়ে
কৃষ্ণাঙ্গ কাঁধে কাঁধ মেলাও
মায়ামি পুলিশ
জেনে রেখো, কালো চামড়ার জীবনেরও
বিস্তর দাম আছে।