শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

পৌলমী ভট্টাচার্য্য


পৌলমী ভট্টাচার্য্য

খামোশি
           
একটা সরলরেখার ওপর জীবন থাকে না দাঁড়িয়ে
সে জীবনে থাকে না স্পন্দন, থাকে না ছন্দ
এবড়ো খেবড়ো হয়ে রেখার প্রতিনিয়ত ওঠা – পড়া  --
এর নামই কী তবে জীবন!
মনিটরের ঘেরাটোপে যে ছবি ওঠে ভেসে
যে ছবির সঙ্গতে খাপছাড়া তালে ভাসে শব্দ
সে শব্দাসুর প্রায় অচেতন।
ডেসিবেলের মাত্রা শব্দ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে,
দুর্ভেদ্য শরীরের পরিখা জুড়ে
তীরন্দাজদের তীরের অনবরত যাওয়া আসা
রক্তে বেয়ে চলা তিরতিরে ঝরণার তোলপাড়ে
প্রাণপাখির ওঠে নাভিশ্বাস।
পুরনো হৃদযন্ত্র বিকল হলে
বৈদ্যের হয় পসার
মৃত্যুর পরোয়ানায় কালি পড়ে
মাল্টিঅরগ্যান ফেলিওর।
রক্তের আঁশটে গন্ধ ঢাকা পড়ে যায়,
দাগ হয়ে যায় বিলীন-
স্মৃতি ঘিরে তবু রয়ে যায়
সেই টাটকা ছোপ
অচ্ছ্যুত ঘরের মতন ।।





           
মায়াবী গাছ

            পুরনো ব্যথা গুলো আজ বড় ক্লান্ত
            ঠিক যেমন আমার জানলার সামনে   
            নারকেল গাছটা , ওর মতো।
            শুকিয়ে যাওয়া কিছু পাতা আর
         চকচকে পাতা গুলোর সাথে সহবাস ওর 
            যেমন আমার মধ্যে মুখ গুঁজেছে
                অব্যক্ত কষ্ট আর আনন্দ।
            সময় খুঁজে গাছটার সাথে কথা বলি আমি
            সখ্যতায় বাঁধা পড়েছি অজান্তে   --
            অভিমানী হয়ে পাতা দোলায় আমার অনুপস্থিতিতে,
            জালিকা ফুঁড়ে দিয়ে যায় ওর অন্তর্নিহিত ভাষা,
            আমার চোখের তারার উপমা সাজিয়ে
            নিজেকে যোগায় বাঁচার আশা।
            কখনো নিশ্চুপ  সুখ যাতনা ছড়িয়ে
                 হাওয়ায় দেয় ভাসিয়ে--
            কেন আস না আমার ছায়ায়?
            কেন বসত করো আমার বাসায়?
            আমি বলি , ব্যথা পেয়েছ খুব?
            তোমার ব্যথা গুলো কে আমি নেব দত্তক,
            বর্ষা কে বলবো ঝড়ে পড়তে ভালবাসা দিয়ে,
            চিৎকার করে হাঁক পাড়ব -
            ভিজিয়ে শীতল করে দে ওর ব্যথা কে -
            হেসে দুলে ও কুপোকাত,
               তারপর মাথা তুলে বলে
            আমি বর্ষা মাখব গায়ে ঠিকই
            যদি করজোড়ে বর্ষা কে নিয়ে আমায় দাও মাখিয়ে।
            মায়াবী গাছটা সম্মোহন করে আমায়, অম্লান বদনে বলে -
স্নাত হবো, খেলব, ঠাই নেব তোমার ভালোবাসার       রাজপ্রাসাদে
            অদ্ভুত মাদকতার সুর তখন ওর গলায়,
            মেঘ ছাপিয়ে , মল্লার ছাপিয়ে , রোমাঞ্চ লাগিয়ে
            আহির ভৈরবে জড়িয়ে ধরে আমায়।
            ঝড়ে পড়ে আমার শরীরে ওর আকুলতার গান 
            ক্লান্ত ব্যথারা আমার নিয়েছে বিদায়
            আমার নির্লিপ্ত মন বসত বাঁধে এখন ওর ছায়ায়।।




                                                                            



বাস্তুহারা
                       
পরিযায়ী পাখিরা উড়ছে আকাশের বুক চিরে
আঁচড় কেটে দেয় ওরা,
লিখে দেয় ওরা প্রকৃতির কোলে  --
আমরা আছি আমরা থাকব
জ্যান্ত অতীত হয়ে।
জ্যান্ত অতীত!  তা হয় নাকি!
কেন হবে না শুনি?
কালের স্রোতে ভেসে যায় আবার
অতীতের তরণী বেয়ে।
আমরা আছি আমরা থাকব
জ্যান্ত অতীত হয়ে ।
সারি সারি পাখি যায় আসে
কালের নিয়ম উপেক্ষা করে
ঘর ছেড়ে আবার ঘরেই ফেরে
কাল বিলম্ব না করে।
মৃত্যুর গ্রাসে পড়েছে শ্রমিক
পরিচয়ে পরিযায়ী  --
পাখি নয় ওরা, উড়তে শেখেনি
ঐ পাখিদের মতো ;
মুখ থুবড়ে তাই রক্ত দিল
উজাড় করে আত্মত্যাগী হয়ে।।