চিরন্তন ব্যানার্জী
অপারাজেয়
আমার সারা দেশের ভীষণ জ্বর,
আমার শহর একরাতে ছারখার;
এতো হেঁটেও পাচ্ছে না কেউ ঘর;
বেঁচে থাকার ম্যাজিক - চমৎকার।
রাতের শেষে কেউ গিয়েছে ভেসে,
স্বপ্ন কারো ধুলোয় আছে পড়ে;
ছেড়েই যদি যাবে এ অক্লেশে
মানুষ তবে বসত কেন গড়ে?
খিদের আগুন এই কবিতায় ঢালি;
ফোস্কা পায়ে উড়ন্ত গাঙচিল;
চারিদিকের মৃত্যুমিছিল খালি,
আমার শহর বিশের বিষে নীল।
ঝড়ের শেষে লড়াইটুকুই থাকে,
নদীর বাঁধে, খেতের আলে আলে;
নতুন শহর নতুন নামে ডাকে,
হার না মানা আদর, নরম গালে।
স্বপ্ননদী
সেই নদীটার কাছে একবার যাবো-
যে নদীর জলে দিলে পা
হৃদয় শীতল হয়, মন হয় খুশী;
আমার তো আজকাল অবসাদ দিন।
কতবার গল্প শুনেছি
স্বচ্ছ জলের নিচে কুঁচো কুঁচো মাছ,
সাদা বালি; পাড় জুড়ে জঙ্গল পাহাড়।
কতবার যেতে গিয়ে মাঝপথে থামি,
দুই পা দুচোখ জুড়ে ক্লান্তি ভীষণ;
টানাপোড়েনের সুতো নক্সা বানায়।
আঁজলা ভরা জল তুলে নিয়ে,
মুখে গালে কপালে লাগাবো,
যেমন আমার মা, এলোমেলো চুলে বিলি কাটে;
আমি শুধু চেয়ে দেখি হাঁপানির টানে,
পাঁজরের ওঠানামা, জোয়ার ভাটায়;
চাঁদ চাঁদ করে দিন পার হয়ে যায়।
বাবার দুকাঁধে চড়ে গেলে,
সহজেই যাওয়া যেতো, একদিন।
আজ আমি শরীরে গেঁথেছি,
এত এত যুক্তি তর্কবাণ,
এ ভার বইতে পারে এমন শক্তি কার আছে?
শহরের ধুলোধোঁয়া মেখে, ধূসর পলাশ।
সেই নদীটির কাছে কোনদিন যাবো-
সে নদী আমার তুলি ধুয়ে
রঙে রঙে রামধনু এঁকে যাবে রোজ, বারোমাস;
বাকি সব বাদ থাক কাজ;
ছোট্ট নরম হাত ধরে,গল্পের অছিলায়,
দিয়ে যাব এক আকাশ জুঁই সূর্যমুখী।
অসুখ
সকাল দুপুর হয়, জলের স্ফটিক কুঁচি
ভিজিয়েছে মন, ভেজা মুখ
আমার চিলেকোঠায়, বয়ামে যত্নে রাখা
ছোট বড় গভীর অসুখ।
রোদ্দুরে মাথা
রাখি, কোনদিন সেরে গেলে
সযত্নে বেঁধে নেব বেণী
এমন কি কারো ঘর
আছে, যার কোনদিন এই
অসুখ করেনি?
এ রোগের মায়া আছে, শরীরে জড়ানো শেষ
গোধূলির আলো,
সকলেই মনে করে, তার আগে কেউ নেই, সেই তো প্রথম বাসে
ভালো।
ভালোবাসা সেরে
গেলে মন জুড়ে থেকে যায় সবজেটে কামনার দাগ;
আশাবরী ছুঁয়ে যায়
ইমনকে, শেষে বেজে ওঠে, পরিচিত রাতের
বেহাগ।
আবার সারবে রোগ, আবার ধরবে জ্বরে, জমিয়েছি কতশত
অসুখের নুড়ি;
রাইকিশোরীর ছাদে, এখনো আটকে আছে, রোদজ্বলা বিবর্ণ
ঘুড়ী।