সৌমিত্র চক্রবর্তী
রাস্তায় মহাকাব্য
ফেলে রাখা রাস্তাটার ঠিক মাঝামাঝি চিরে
যাওয়া দাগের ওপরেই
দাউদাউ জ্বলছিল টায়ারের স্তম্ভ, ওপাশের শতাব্দী প্রাচীন বটগাছ
পাক খেয়ে উঠে যাওয়া ধোঁয়ার কুণ্ডলীর
মাঝে হুহুংকারে বেরিয়ে এসেই
ফের মিলিয়ে যাচ্ছিল অসংখ্য ঝলকিত
তলোয়ার, ভল্ল, আগুন
উগড়ানো নল।
একদল ছুটে যাচ্ছিল 'গোলি মারো' বলতে বলতে, অপরদিকে হিংস্র চুল দাড়ি
দেখতে দেখতে পুড়ে যাচ্ছিল একের পর এক
সঞ্জীবনী আপণ, চিলতে মাথা গোঁজার ঘর
এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরস্ত্র
জীবিকা সন্ধানীর রক্তমাখা দেহ আর শেষ নিঃশ্বাস
অপরা সন্ধের আশ্চর্য মায়াবী আলোয় তখন
রক্ষকের জলসা উল্লাস।
কিছুক্ষণ আগেও দিশেহারা কিছু প্রাণী
ছুটে যাচ্ছিল এ প্রান্তে ও প্রান্তে
ধুম মশালের নারকীয় আগুন হাতে তাদের
পিছনে ধাওয়া করছিল ছায়ামূর্তিরা
নাদির শাহ, তাইমুর লঙ, নিরো আর নাৎসিদের হা
হা উচ্চকিত সংহার মুদ্রা উড়ছিল
তাবৎ দুনিয়ার কাছে নগ্ন হয়ে যাওয়া
রাষ্ট্রের হৃদয় পিণ্ডের আকাশ স্নান করছিল লোহিত কণায়
কেউ এসেছিল কাপড় কাটার আর সেলাইয়ের
মস্ত দক্ষতা নিয়ে কয়েক মুদ্রার আশায়
কেউ এসেছিল গয়নার সূক্ষ্ম কাজ জেনে দু
মুঠো স্বাচ্ছল্যের আশায়
ওদের জন্মগত কিছু নাম ছিল, কিছু পরিচয়পত্র, ব্রত কিম্বা রোজা
নিয়ে মারপিট ছিল না কখনো
ওদের আসল পরিচয় ছিল খেটে খাওয়া মানুষ, ওদের আসল পরিচয় ছিল ওরা ভারতবর্ষ।
পূর্বীয়া যশোদার বাপ মালিকের নিরীহ
দোকানের একেবারে পিছনের জঞ্জাল স্তুপে ঠকঠক করে কাঁপে
দু হাতের আড়ালে পশ্চিমী মালিকের শাবক
জালাল ঠকঠক কাঁপে... রাস্তায় হুংকার দেয় জনাদেশ
রাস্তায় পড়ে আছে অভাগা মালিকের লাশ, তারই দোকানের অবশেষে
ঠকঠক কেঁপে যায় হতভাগ্য ভারতবর্ষ, হামলার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে প্রাচীন অন্তরাত্মা।