লক্ষ্মী
নন্দী
চেতনাতে রবীন্দ্রনাথ
দেহ ছেড়ে তুমি গেছ চলে অমৃতলোকে
হে শ্রদ্ধেয় বন্ধু তবু তুমি জেনো
আছ এই ভূ- লোকে।
ছেড়ে গেছ যদি, চলে গেছ
ফেলে
বন্দী করেছি হৃদয়ের কারাগারে
তোমার মূর্তি, স্তব ও
বন্দনা।
জানি তুমি আছ সুন্দর ভুবনে
গেছ, শুধু নিয়মের টানে।
জল স্থল সৃষ্টির সকল সম্ভাবনায়।
হয়ত তুমি ক্লান্ত হয়ে অণু পরমাণুকে
মুদিত নয়নে দিয়েছিলে বিশ্রাম
হয়ত তুমি জান, আবার জান- না
তোমার চেতনাহীন দেহ তরে
প্রকৃতি - পুরুষ কেঁদেছিল
অবিরাম।
আমিও জানিনা, হয়ত সেদিন
পল্লীবধূ রূপে -
ঘোমটা টেনে যাচ্ছিলাম
তোমার স্বপ্নদ্বীপে।
হয়ত সেদিন -রাখাল বালক,
বাঁশি বাজিয়ে ছিল - বিষাদ করুণ
সুরে
হয়ত সেদিন - কোকিলেরা সব স্তব্ধ
ছিল
নীরব ভোরে।
হয়ত ডাকছিল কাক গাছের ডালে -
তোমার অন্ত কালের আভাস পেয়ে
আবার ছোট্ট দোয়েল ঘুম ভাঙ্গাতে
তোমায় ঘিরে দেখাচ্ছিল ব্যালে।
হয়ত সেদিন - আকাশ মাঝে ঠাঁই
নিয়েছিল এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।
হয়ত সেদিন
বিনিদ্র ছিল সমস্ত
জোড়াসাঁকো।
হয়ত সেদিন শব্দকোষের হয়েছিল
নির্জলা একাদশী --
হয়ত -সেদিন শোকসাগরে ভেসেছিল
বিশ্বের সকল বিশ্ববাসী।
হয়ত সেদিন ও ছোট্ট বালিকা -
তোমার জন্যে গেঁথেছে টগর মালিকা
পরাতে গেছে সে যখন সম্মুখে -
তুমি শুয়ে আছ পরম সুখে
কপালে চন্দন চিহ্ন।
এও কি রঙ্গমঞ্চ ?
বালিকা মনের চিন্তাতে জাগে
তুমি কী সেজেছো মৃত সৈনিক সাজে?
ওঠো ওঠো দেখো
আমি এনেছি জয় মাল্য।
সম্মুখে ছিল যত দর্শক বৃন্দ
বালিকাকে বোঝাল সকল বৃত্তান্ত,
সবকিছু বুঝি দেখি,
বালিকা করি শ্রবণ
আজও সৈনিক তরে মালা গাঁথে
সে পঁচিশে বৈশাখ ও বাইশে শ্রাবণ।
বাইশে শ্রাবণ বিদায়ের সুর
হৃদয় বিয়োগ ব্যথায় বাজে,
পঁচিশে বৈশাখ বার বার আসুক,
নব নব সুর নব নব সাজে।
তোমার বিদায়ের শূন্যতাকে
মিরাকল ঘটিয়ে ছিলে।
নিয়ে গেছো শুধু জীর্ণ দেহ,
তখনও বুঝেছে কি এতটুকু কেহ,
দিয়ে গেছ সব উজার করে ঢেলে।
দিয়ে গেছো কত জ্ঞান ভান্ডার
দিয়ে গেছো কত গ্রন্থ গ্রন্থাগার
দিয়ে গেছো কত শিক্ষার আলো
জানি এর থেকে আর নয় কিছু ভালো
শিখিয়েছ মিলনের আলো -
ঘরে ঘরে জ্বালো
হিংসাকে দূরে ফেলে।
এখনো আমরা আবেগে ভরে উঠি
তোমার মুখ খানি পেলে।
আবার তোমার গানের দোলায় দুলি
যখন পরম আনন্দে -
কে বলেছে? তুমি নেই
মনের অলিন্দে।
তুমি আছো ছিলে থাকবে আমাদের
জীবনের প্রতিক্ষণে
তোমাকে চিরদিন রাখব আমরা
মনের সিংহাসনে।
তুমি নাটক তুমি নাট্যকার
আবার কখনো, মিলে মিশে
একাকার
আবার কখনো বিস্ময়ের ভাব
ভাষাহীন চোখে মুখে।
আবার কখনো কথা কাহিনীতে
মাতিয়ে তোলো চরম স্বর্গ সুখে।
শ্রেষ্ঠ তুমি, সম্পদ তুমি, বিশ্ববন্দিত
অক্ষয় তুমি , অমর তুমি,
চিরকালের শাশ্বত।
তুমি আমাদের বিশাল মহীরুহ
বিরাট ছত্রছায়া।
আমরা সকলে তোমার আদলে
হতে চাই মধুর মিলনে
শান্তি স্বস্তির সুস্থ সুন্দর কায়া।।