রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯

তারিক-উল ইসলাম


তারিক-উল ইসলাম

আসবেন রবীন্দ্রনাথ

দেখা হয়েছিল একবার রমনায়। বটমূলে এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’- এই আবাহন
শেষ ততক্ষণে। দুলছিল বটের পাতাগুলি। লালপাড়-সাদা শাড়ি, মেয়েরা গাইছিল-
প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে/ বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও।/  ভুলিব ভাবনা, পিছনে চাব না/

পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও।

আহা! পাল তুলে দাও’- স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যেন সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ছেলেরা কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাচ্ছিল। দর্শককণ্ঠও সেইখানে সুরে সুরে উড়ে উড়ে ঘুরে ফেরা পাখি।

পাতাগুলি দুলছিল, উড়ছিল আঁচলগুলিও। যেন, ‘দোলা লাগিল, দোলা, দোলা, দোলা

আহা, দোলা ! সামনে যেন বসে আছেন নজরুল ।

গাইছেন - দোলা লাগিল দখিনার বনে/ বাঁশরি বাজিল ছায়ানটে মনে মনে।

ছায়ানট তখনও বিদ্ধ হয়নি স্প্লিন্টারে। তালপাতার পাখায় ঢোলের ছবি। বাজাচ্ছেন ঢুলি।
শোভাযাত্রার রঙ চোখে মুখে।

ছোট গানটি প্রলম্বিত হচ্ছিল সুর-আবহে - প্রবল পবনে তরঙ্গ তুলিল/ হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল
পাগল হে নাবিক, ভুলাও দিগ্‌বিদিক/ পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও।

ঘাড় ঘুরাতেই দেখি তোমার মুখ। মেলাচ্ছো ঠোঁট গানে-প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে/
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও।
চোখে চোখ পড়তেই খানিকটা চমকে উঠলে তুমি। কাঁপছিল তোমার চোখের ভ্রু।
অদূরে নাগরদোলা, দুলছিল পয়ার-পালক ছড়িয়ে।

আলাভোলা এই আমি তাকিয়ে রইলাম তোমার প্রস্থানের দিকে। তুমি একটু হাঁটছিলে আর
একটু একটু করে পেছনে তাকাচ্ছিলে। রোদ আর বাতাসে গাছের পাতাগুলি তখন কেবলই দুলছিল।
ছায়া-মেঘ ছুঁয়ে দিচ্ছিল তোমার চুলগুলি। রোদ-ছায়া, ছায়া-রোদ।

কেবল দেখতে পারছিলাম না তোমার চোখ। বুঝতে পারছিলাম না হরষ না বিষাদ ।  পারিনি আজও।

এবং আজও যাবো রমনার বটমূলে। এবং আজও আসবেন রবীন্দ্রনাথ।  হবে গান, গাইবো আমিও-
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/যাক পুরাতন স্মৃতি/  যাক ভুলে যাওয়া গীতি/

যাক অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ যাক যাক।