কাজী
রুনালায়লা খানম
পঁচিশ বছর পর
অতঃপর আমি তার দিকে
তাকিয়ে থাকলাম
স্থির
ঐশ্বর্যবান পথ ধরে যে
মানুষ দূর থেকে দূরে গেছে হেঁটে
একাকী সন্ন্যাসে।
দীর্ঘ দীর্ঘতর কাল পথ
হতে পথের ভিতর
চোখ হতে একে একে খসে
গেছে
কংসাবতীর ঢেউ,
ডিঙি
নৌকোর বিষন্ন বয়া,
ডাংগুলি খেলার মাঠ,
ছৌ
এর আসর, ঝুমুর গান,
মায়ের চোখের আলো,
মায়াময়
শব্দের খিলান।
তবে কী মানুষের বুক
হতে সব চিহ্ন মুছে যায়?
মুছে যায় মৃত্তিকার
তিলকের ঘ্রাণ?
দীর্ঘভ্রমণে প্রকৃতই
থাকেনা কোথাও আর কোনোও পিছুটান!
চলে যাবো বললেই তো আর
চলে যাওয়া যায় না
আমি তার চোখে চোখ রাখি,চোখ
রাখি মনের গহীনে
দেখি অতলান্ত জুড়ে
জেগে আছে
ম ম মাটির গন্ধ,শিকড়ের
মায়াময় টান,
আনন্দবেদনার এক টলটলে
দীঘি
সমস্তের শেষে
কংসাবতী জেগে আছে
সমূহ সন্ন্যাসে
কংসাবতী জেগে থাকে
অমর্ত্য বিশ্বাসে ।
অরণ্য ও এক বিরান নদী
বুকের বাঁদিক ঘেঁষে
বয়ে গেছে যে নদী
তার জলে ভাসে কার মুখ
সে কি পরিযায়ী পাখি
না কি অচিন বিরিক্ষি কোনো বিরান পাথারে
খর দুপুরে আমি যার
ছায়া খুঁজে মরি!
কেন নিভে আসে চোখ,
টান
পড়ে বাঁশির বাতাসে
কেন ফিরে যায় ভিনদেশি
পাখি ফেলে রেখে সোনালি পালক
বুকের জমিনে কে
যত্রতত্র করে যায় গহীন খোদল
ঘরপোষা মেয়ে বারে
বারে হারায় তার সাধের নোলক?
অচেনা মানুষ এসে কাছে
বসে, সুখদুঃখের করে তত্ত্বতালাশ
সময়ের ঘষাকাচে
চেনামুখ ফিকে হয়ে আসে
থাকে না কোথাও কোনো
টান ধমনী শিরায় কিংবা গোপন শিকড়ে
তবে কি প্রকৃতই বদলায়
মানুষ,বাঁচে একাকী সন্ন্যাসে!
প্রকৃতপ্রস্তাবে
মোহনিয়া বাঁশির সুর,
খসে পড়া ডানার পালক
কিংবা হলুদ পাতা অচিন বৃক্ষের
ভালোবেসে একবার ছুঁয়ে
যায় যদি,হাজার জন্ম পরেও
নিঃস্ব জলে ছায়া তার
ধরে রাখে নদী!
আলোমানুষ
তাকে কোনোদিন ছুঁয়ে
দেখা হয়নি সেভাবে
কোনোদিন তার বুকে
রাখা হয়ে ওঠেনি ক্লান্ত মাথা
আপাত দূরত্বের
সীমাটুকু
লঙ্ঘন করতে পারিনি
সাহসে ভর করে
তবু কি করে যেন সে
বুঝে যেতো 'ভালো নেই আমি'
থকথকে অন্ধকারে যখন
তলিয়ে যেত পা
ঠিক তখনই তার
আঙুলগুলো দীর্ঘ হতে হতে
আলোর বৃক্ষ হয়ে উঠতো
ক্লান্ত আমি সেই
বোধিতলে জিরিয়ে নিতাম খানিক
আজকাল পথ চলতে গেলেই
হাঁফ ধরে যায়,
রাস্তা পেরোতে গিয়ে
বেমালুম ভুলে যাই
ট্রাফিক সিগন্যাল
পড়তে পড়তে আখোলা বই
পড়ে থাকে বুকের ওপর
তুমুল শীতের রাতে
ইচ্ছে করে
সরিয়ে ফেলি গায়ের
চাদর,শীতার্ত ডালের মতো শিউরে উঠি।
তার উচ্চারিত প্রতিটি
শব্দের শরীর হতে
আরো একবার ঘটে যাক
অলৌকিক বৃষ্টিপতন
আমি সেই হিরন্ময় জলে
ভিজে যাই ...ভিজে যাই ...ভিজতেই থাকি