মৌমিতা ঘোষ
পাঠ
তুমি যতবার বলো
'কিছু ছিল না'
আমি ফেলে আসা চার বছর দেখি
তাদের ঘাম-রক্ত দেখি
একটা বীজকে জল দিয়ে
বড় করে তোলার পরিণত স্বপ্নকে দেখি
বীজের অন্ধকার কান্না শুনি
ফসলের সোনালী গান শুনি
চাঁদের নীচে দুজন মানুষের মাতাল হওয়া,
হাসির ফাঁকে ফাঁকে
ভরে থাকা বিশ্বাস,
একটানা গোঙানির মতো
বিচ্ছেদের মধ্যের দীর্ঘশ্বাস...
স ব দেখি, বারবার দেখি
তুমি যতবার বলো
"আসলে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে
কিছুই ছিল না।
আসলে সম্পর্কটাই ছিল না।"
আমি পিঠ ফিরিয়ে বসে
আরেকবার খাতা কলম নিই
আর এতগুলো বছরের ' কিছু ছিল না' র
গল্প লিখি রসে কলম ডুবিয়ে
আর কী আশ্চর্য! তুমিই
আমার প্রথম পাঠক,
বারবার, প্রতিবার...
অভিমান
কাছে আসো যদি, এক্ষুণি চলে এসো
হৃদয়ে কাঁপন, তুমুল কথার ঢেউ
দূরে যদি যাবে, অনায়াস চলে যাও
সামলাবে কে? আর কাঁদবে না কেউ।
চলে যাবে তুমি? দিগন্তলাল রঙ
মাখামাখি হয়ে আকাশটা যত দূর?
চলে যাবে যদি, ফিরিওনা মুখ আর
কখনো ভুলেও গীটারে তুলোনা সুর।
আদরে রাখবে, নাকি ঠেলে দেবে তাকে
পালের নৌকা বাতাসের অভিমুখে।
ভাদ্রের কোন মনমরা বিকালেই
ধুয়ে যাওয়া রঙ মনে করো কেন, সুখে?
সরে যাবে যদি, সরে যাও নিষ্ঠুর
গোলাপ পাপড়ি মেশাবোনা স্নানজলে।
হেরে গিয়ে যদি ফিরে আসো অগোছাল
খুঁজে ফিরো তাকে উড়োচিঠিদের দলে।
অনুরাগ
তুমি খুব হালকা চালেই ছুঁচ্ছো আমায়
রেলিঙে যেমন ঘোরে আলগা বাতাস
হলুদ ওই পাখির ডানায় অমল আকাশ
মায়াবী রোদের মতো লাগছে তোমায়।
এ বছরে শীত ও কেমন মন-উদাসী
স্মৃতিরাও জ্বরের ভারে লুকোচ্ছে মুখ
এখনও পিকনিকে যাও আমার অসুখ?
বেলা যায়, উড়োচ্ছে মন ঘোর বাতাসী।
তুমি আজ অলীক বলেই মারু-বেহাগ।
তুমি খুব যত্নে রাখো টলটলে মন
সে-বছর ছুটির মাঝে, "এই কথা শোন"
হারিয়েছিল কথা, দৃষ্টি বেবাক।।
তুমি খুব হালকা করেই টানছ এ প্রাণ।
যে প্রাণে যন্ত্রণা-দাগ বেশ খয়েরি।
যেন কোন বিষাদ রাগের এক শায়রী
সুরেদের মধ্যে খোঁজে অনন্ত স্নান।
তুমি খুব একলা বলেই মন-উচাটন
তাকিয়ে মনের ভিতর গহীন ক্ষত
পাপী এ চোখ মুছে দাও আলোর মতো
মুছে দিক বৃষ্টিধারা কারণ-বারণ।