সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিসার
আরাধ্য যা কিছু সবই হাতের মুঠোয়, তবুও
একটা যন্ত্রণা,মাৎস্যন্যায়নে ঠুংরির মতো বাজে,
সুরটুকু বুঝি, বুঝি উথালপাতাল দ্যোতনা
আর দেখি ডানা কাটা পাখির উড়ান কাতরতা।
সে আসে। চুপিসারে নেমে আসে পাঁজর-গভীরে
ছুঁয়ে দেয় ঠোঁট, মুছে দেয় বৃষ্টির ফোঁটা,
চিবুকে আঙুল রেখে ঘুরিয়ে নেয় মুখ,চোখে চোখ,
বিধিনিষেধ ভুলে আমরা চেয়ে থাকি।
আগুন রঙা শাড়ি থেকে উড়ে যাচ্ছে ফুলকি
বিছানা,বালিশে পড়ে থাকলো দহন,
সমস্ত প্রত্যাশা উর্ধমুখী প্রজাপতির মতো উড়ে গেল
অভিসার সাঙ্গ হলে পোশাকেরা লজ্জাবতী লতা!
আরাধ্য যা কিছু সবই হাতের মুঠোয়
নাতাশীতোষ্ণ মুঠোয় জমে ওঠা ঘাম বিন্দু নিজের,
পাঁজরের জমা বাষ্প পেখম মেলে দেয় মেঘপুরে,
অভিসারিকা!দু'ফোঁটা জল ছাড়া কিছুই নিলে না!
অভিযোগ
আঙুল তুলেছ। আঙুল বাঁকে না। অনমনীয়!
এ আঙুল ধৃতরাষ্ট্রের মতো-চোখে দেখে না,
অথবা ঠুলি বেঁধে দেখিয়ে চলে রকমারি খেল।
অহংকারি আঙুল অভিযোগ তুলে ফুঁসছে--
বহতা নদীর ছন্দোবদ্ধ চলাচল নিয়ে,
পর্বতের উত্থান নিয়ে, অরণ্যের
প্রসারণ নিয়ে
তোমার চলাচল নিয়ে, ধর্ম নিয়ে,সম্প্রদায়
নিয়ে,
মৃত্যু নিয়ে আর তোমার জন্ম ও ভাষা নিয়ে।
এতদিন লুকিয়ে রাখা আমাদের সমস্ত পৌরাণিক
অভিযোগগুলোকে মাধ্যাকর্ষণের ঘর্ষণে শুইয়ে দিয়ে,
দূরে দাঁড়িয়ে থাকছি বিস্ফোরণের জন্য।
ততক্ষণে তুমি আঙুল নামিয়ে নিচ্ছ ধীর অতি ধীরে
সূর্যাস্তের করুণ আলোয় খুলে পড়ছে
যুগাতিযুগ বাঁধা চোখের ফেট্টি।
ফেট্টিটা এখন আমাদের কাঁধের নিশান!
আমাদেরও তো কিছু অভিযোগ আছে,
এবারে বলব। আমাদের আঙুল বাঁকতে জানে।
সহস্র অভিযোগ একসূত্রে বাঁধছে-আমাদের আঙুল--
ক্ষত বিক্ষত রক্তকরবীর মতো টকটকে লাল!
কে?
গলিত শবের মতো মোরাম বিছানো পথ বেয়ে
স্খলিত হাওয়া ফিরে যাওয়ার মিহিন শব্দ
উপেক্ষা করে পানকৌড়ি ডুব দিচ্ছিল জলে,
অনুরণিত ঢেউয়ের বুকে ভাসছে কাগুজে নৌকা।
আমার চোখের চঞ্চলতা থেকে ছিটকে যাচ্ছে
কৌতূহলের মিহি গুড়ো, ছড়িয়ে পড়ছে
উপত্যকায়।
নিশিখোর চাঁদের আলো সরে যেতেই ভূতুড়ে আঁধার
ঝাপসা করে দিল দৃষ্টি উড়ান,
আর সাপ পোষ মানানো বেদেনীর মতো বেরিয়ে এলো
এক এলোকেশী,যার অঙ্গরাগ থেকে ঝরছে রক্তদ্যুতি।
পুরাণের আঘাটায় তখন বেঁধেছে কাগুজে নৌকা
গলুইয়ের এক প্রান্তে ষড়রীপুর মনোমোহিনী রূপ,
অন্যপ্রান্তে অবিকল আমার মতো এক দুঃস্থ মাঝি।
অন্নপূর্ণাপুরের দিকে বাঁক নিতেই হারিয়ে গেল ছবি,
জল আর জল, ঢেউহীন নিস্তরঙ্গ নিস্পন্দ প্রবাহ
বুঝলাম নদী গভীর, তাই তার উচ্ছল প্রকাশ নেই!
আজও খুঁজছি সেই এলোকেশীকে
যে জায়াও না। জননীও না। তবে সে ছিল কে?