পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়
যাত্রাসঙ্গী
মিষ্টি কথার মোহে দিকবিদিক থেকে
ছুটে আসা ডুমো পিঁপড়ের দল।
চ্যাটচেটে তরঙ্গে লোভাতুর
দৃষ্টি মেলে চেটে খাচ্ছে বেদনার লালারস!
কিন্তু নীলা জানে কত এঙ্গেল কাত হয়ে নিতে হবে
দুরত্ব।
কি ভাবে ধরতে হবে ক্যাচ
আর দিগন্ত থেকে ছুটে আসা বল জিতে নিতে হবে
মুহূর্তে!
যদিও সে কখনো ক্রিকেটার অথবা
বোলার হিসেবে চিহ্নিত হয়নি জীবনেও!
সে শুধুমাত্র নীলা
শুধু জেনেছিল একাই চিনে নিতে হবে পথ
রাত্রির পথ ধরে খুঁজে পেতে হবে আলো-পুরুষের
সন্ধান!
ছায়া-সঙ্গীকে বুকের প্রণয়-তোরঙ্গে নিয়ে
যতখানি যেতে পারা যায়
ঐ মূল ভূখণ্ডের কাছে
ততখানিই তার শুভ-যাত্রার পথ।
তবু ঈশ্বর
আগুনে পুড়ছে মায়াগাছখানি
শাখাপল্লবে মৌতাত
চাঁদ ছুঁয়ে দিলে নিভে যাবে ঠিক বিদ্যুৎ আর ঝঞ্ঝার
মায়া আদরের স্পর্শে জাগাও সুষমা মাধুরী সঞ্চার
চারণভূমির প্রতি ইঞ্চিতে রূপকথা আঁকা জঙ্ঘার
ড্রেসিংটেবিলে আয়নায় রোজ বেঁচে ওঠে এক জ্যোৎস্না
পিছল জমির মাটি খুঁড়ে লেখে চুম্বন ভেজা সংলাপ
প্যাঁচ-পয়জার ছাড়াই তো রোজ পদাবলী লিখি মিলনের
গোলাপি স্বপ্নে নদীর ভাঙন আটকাবে কার সাধ্যি
তবু ঈশ্বর ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতে ঝোপঝাড় ঠেলে আসবেই
হিরেমতি জলে নোনতা আরামে গান ভাঙে মৃদু জড়তার!
জেগে উঠছে একটা মৃতপ্রায় দেশ
খুব জোর হাওয়া বইছে!
মায়াবী আলোয় ধীরে ধীরে
উড়ে যাচ্ছে বিষাদের ধুলোকণারা!
যেমন তুমি কথা দিয়েছিলে!
সব ধুলো উড়িয়ে দেওয়ার রঙিন সিদ্ধান্তে
পাখির মতো ডানা মেলতে চাইছি উন্মুক্ত প্রান্তরে।
সব ব্যথা সব মন
তুলে দিচ্ছি একে একে
ভীষণ সম্মোহনী সহবাসে।
এখন অশ্রুসজল চোখে
মায়াবী কাজলের নিত্য আনাগোনা।
ঠোঁট জুড়ে প্রাণবন্ত রঙ,
কপালে, গালে নক্ষত্র পরগণার জ্বলজ্বলে ঘাম!
অতল গহ্বরে জেগে উঠছে
একটা মৃতপ্রায় দেশ চাঁদকাঙালের গায়ে
সযত্নে জ্যোৎস্না-প্লাবনের ছায়াছবি।
এখন ক্যানভাসে আদিগন্ত তুমি
আর আমি রাতের তরুলতা
আঁকড়ে ধরছি কবিতার ছত্রে ছত্রে।।
এখন আর একা নই
শোক বাড়িটিতে আবার রোদ্দুর এসে পড়েছে।
বাতাসের ওপর দিয়ে
ভেসে যাচ্ছে তরঙ্গ ভর্ত্তি শোক।
শরীর আর মনের অলিগলি ছাড়িয়ে
দুরে ভেসে যাচ্ছে বিরহ-দহন শোককথাটি।
এখন আর একা নই
যেমন তুমি হারানোর পর গোহারান একা হয়েছিলাম..
ঝরে পড়েছিলাম...
গাছের পাতা যেমন ঝরে একা হয়।
এখন পিপাসার ঠোঁটে রোজ একবার বৃষ্টি নামে
বিনা শর্তের শব্দে গানের অন্তরাতে
মায়া রাত জুড়ে আশ্চর্য আলো ঢালে রোজ!
যেভাবে তুমিও ঢালতে সর্বস্ব শ্রাবণ কিম্বা বসন্ত
আবেশ।
এখন আর একা নই
আমরা তিনজন পরস্পরের সেতু
মন ধরাধরি করে হেঁটে যাব শোকবিহীন রাতের কবিতায়।।