শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

শাশ্বতী গোস্বামী

 


শাশ্বতী গোস্বামী


ব্রেকআপ


ধূসর ঘরের পাণ্ডুলিপি নীল কাগজের খামে,

এলোমেলো  দমকা হাওয়া যেথায় এসে থামে!

দূরের পাহাড় সোনালী রোদ মিষ্টি সুরের রেশ,

ভালোলাগায় কয়েকটা দিন কাটিয়ে ছিলেম বেশ!


সিক্ত উঠোন মনের ঘরে নিত্য তোমার বাস, 

বৃষ্টি দিনের দৃষ্টি ঝেঁপে আকাশি ক্যানভাস,

হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে নেওয়া রূপকথা ফুলঝুরি,

হঠাত্‍ কেমন  বুঝতে পারি মন গিয়েছে চুরি॥


অমল হাসি, নৌকা উদাস কালো দীঘির জল

সব কিছুতেই দেখতে থাকি তুই-ই অবিকল

মন খোলা ঢেউ সারাটা দিন বড্ড খালি লাগে,  

সময় কেবল থমকে থাকে ডাক পিওনের ব্যাগে


দিনের পরে দিন চলে যায় জমতে থাকে চিঠি,

কথার কথা ফুরোয় না আর, শব্দ মিঠি মিঠি!

থমকানো সেই মুগ্ধ সময় শেষ হলো একদিন,

কান্নাঘরের কোণে তখন আমিই সাকিনহীন ॥


বদলে যাওয়া স্বপ্নগুলো কাঁচপোকাদের মতো

আনতো বয়ে ক্লান্তসকাল,রাত্রি স্থবির যতো

 সময় ছোটে  নিজের মতোই ব্যস্ত নিতিদিন,

সাথে থাকার অভাবটা ও  ফুরালো একদিন


এই এতোকাল ভুলেই ছিলাম কাজ ছিলো সম্বল,

ব্যস্ত ভীষণ, তোকে ভাবার সময় কোথায় বল!!

হাত ছেড়েছিস এমনি এমনি, কারণ খোঁজা বৃথা

সেদিন কেন এই কথাটাই নেয়নি বুকের পাটা?


অষ্টপ্রহর নিজের সাথে যুদ্ধ করার পরে--

বুঝেই গেলাম পুতুল ছিলাম তোরই খেলার ঘরে! 

অনেক  ভেবেও  বলার কথা, পড়েই নি তো মনে!

ব্রেকআপ নিয়ে দিব্বি  আছি,আজ যারে তুই শুনে

 

 

ঝড়ের পরে


বুকের ওপর চাপিয়ে নিয়েছি পাথর, 

হাঁপিয়ে উঠেছি,  মুখের মধ্যে  জ্বর

আঁধার ঘেঁটেই পেরিয়েছে শুধু দিন,

টিমটিমে ঘর তাই এতো আলোহীন


দুর্যোগ ঘন নিঃসীম কালো রাত

বাড়িয়ে  রয়েছে প্রান্তিক কিছু  হাত

মারী যদি দেয় ধৈর্যের হাঁটি হাঁটি,

সাইক্লোন আনে  ধ্বংসের পরিপাটী।।


জীবনের দাম কানাকড়ি ধরা হোক

দোমড়ানো চালা, চাপা পড়া কিছু লোক,

ধ্বসে যাওয়া সব  মেঠো বাড়িদের ছবি

গাছের নাগালে গুঁড়ো গুঁড়ো বাকী সবই


ধরা হোক মারী, ভিসুভিয়াসের নামে -

মড়ক আসবে  বাদশাহী "আমফানে",

প্রকৃতির কোলে  ধরাশায়ী মানবক,

পুতুলনাচের গল্পটা বলা হোক ॥


টুপটাপ করে  ঝরে পড়া কুয়াশায়

কাব্য লেখা তো ফের শুরু করা যায় ?

শিরদাঁড়া ভেঙে ঝড়েদের মহা দাবী -!

ইতিহাস দেখে ধ্বংসের ছায়াছবি ॥


সভ্যতা ছোটে আগলে আতশবাজি,

তবু রাজনীতি ছাড়ে না তো কারসাজি

ত্রাণের ত্রিপল আটকাবে ঝড়জল

শোকের চাদরে নোনা ধরা সম্বল!


মহামারী খেলে বুড়িছোঁয়া খেলা রোজ

মৃত্যুর সাথে বসবাসে পাই খোঁজ,

তার সাথে জোটে প্রকৃতির দুর্যোগ,

কি করে ভুলবো  মাথার ছাদের শোক ?


দেহধারীদের  লড়াইটা আছে সাথ-

আগে রোগভয় নাকি খাবারের পাত ?

মানে খোঁজা চোখে প্রলয় ভয়ঙ্কর

গুঁড়ো গুঁড়ো আজ  ঋজুতার পঞ্জর ॥


দুঃসহ জ্বালা, জ্বলে  জঠরের চিতা

খুঁটেখাওয়া পেট শুধুই  মানবিকতা

মড়কের ছবি নিউজের  কভারেজ -

ক্যানভাসে জাগে দলিত দস্তাবেজ ॥


ঝড়ে র পরে ও বেঁচে থাকে বহুজন (2)

মাজাভেঙে যাওয়া প্রতীকী বিজ্ঞাপন ॥

 


 

ফেরারী মন


আমার জানলা ছুঁয়ে

              বৃষ্টি এলো ওই,

ঝমঝমিয়ে পর্দা জুড়ে

                তুইও তা থৈ থৈ ॥

 

শুকনো মাটি বিবশ,

                   আকাশ মেখে রই,

হাতড়ে ফেরা অচেতনে

                   অতীত জুড়ে তুই!


বৃষ্টি নামে আবার

               পাঁচিল বেয়ে ধারা,

তোর উঠোনে চু কিতকিতে

               মাততো বিকেল সারা


কালো মেঘের ঢল

                বড্ড কানাকানি!

ভালোবেসে মন হারানো

             কেবল একটুখানি


সবকিছুতেই চেনা জগৎ

        শেষের পরেও  শুরু,

বন্য রোদের দাপট শেষে

        মেঘের গুরু গুরু ॥

 

বৃষ্টি গেছে থেমে,

           ক্লান্ত আকাশ চুপ,

খোলস ছেড়ে বেরিয়ে

              এবার বাস্তবে দে ডুব

 

ঠান্ডা হাওয়ায় স্বপ্নগুলো

            উড়িয়ে বেনামী,

চেনা গলির আনাচকানাচ

            বিষন্নতা ই দামী ॥ ॥

        

 

বর্ষাপ্রেমিক


মেঘলা মনের কাব্যজুড়ে

বিরহিণীর লাজ,

ও মেয়ে তোর কাজল চোখে

দীঘল কারুকাজ

 

বর্ষা তোকে সাজাতে চাই

নক্সীকাঁথার সাজে

ভিজবো আবার নতুন করে

পুরোনো সেই লাজে

 

ফুরিয়ে যাওয়া অনুভূতির

গন্ধ শুঁকে শুঁকে,

আগল ভেঙ্গে বৃষ্টি হয়ে

ঝরবো তোরই বুকে

 

বর্ষা আমার পাগল প্রেমিক

একজীবনের গান,

তোর প্রেমেতেই করতে রাজি

অবগাহন স্নান ॥

 

বৃষ্টি চোখের গভীরতায়

ভালোবাসার  রঙ,

হারিয়ে যাওয়ার ভরসাটুকু

পেয়েই যে উণ্মন!

 

 

 

অতীত বিষাদ


সন্ধ্যে নামে অবুঝ মনে

প্রেমের হাহাকারে,

পাখপাখালির  কলরবে

হারাই বারে বারে ॥

 

শিশিরভেজা শীষে জাগে

অনন্ত রূপটান,

মনের ঘরে অমনি  বাজে

বাসন্তীরূপ   গান ॥

 

স্নিগ্ধ বাতাস বিলি কাটে

সোনার বরণ ধানে,

গোলাপি রোদ বন্যা আনে

গোধূলি মুখ পানে!

 

চম্পাকলি  কনের গায়ে

ফুলেল কারুকাজ

চাঁদপানা মুখ লজ্জাবতীর

হৈমন্তীক সাজ ॥

 

মেঘলা মনে বিষাদ খুঁজি

চোখ যায় যত্দ্দুর,

হিম গালিচায় আল্পনা দেয়

আদুরে রোদ্দুর!